ক্ষমতার শেষ পর্যায়ে এসে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গ্রহণযোগ্যতার হার রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে। এই মুহূর্তে ট্রাম্পকে সমর্থন করা মার্কিন নাগরিকের হার ৩৩ শতাংশ। আর ৬০ শতাংশ বা সংখ্যাগরিষ্ঠ মার্কিন নাগরিক তাঁকে আর সমর্থন করছেন না। সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটির করা জরিপে এই তথ্য দেখানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে ট্রাম্পের গ্রহণযোগ্যতার হার ছিল ৪৪ শতাংশ, আর অগ্রহণযোগ্যতার হার ছিল ৫৩ শতাংশ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় তাঁর গ্রহণযোগ্যতার হার ছিল ৪৫ শতাংশ। নির্বাচনের পর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত তাঁর গ্রহণযোগ্যতা মাত্র এক শতাংশ কমেছিল। কিন্তু জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের পর থেকেই তাঁর গ্রহণযোগ্যতা দ্রুত কমে ৪০ শতাংশের নিচে নেমে আসে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন জো বাইডেন। আর এর মধ্য দিয়েই শেষ হবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ। জরিপে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ট্রাম্পই হবেন প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি ৪০ শতাংশেরও কম গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে তাঁর প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদকাল শেষ করবেন।
শুধু তাই নয়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মার্কিন কংগ্রেস দ্বিতীয় দফা অভিশংসন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো প্রেসিডেন্টকে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসন করা হলো। ১৩ জানুয়ারি প্রতিনিধি পরিষদে ২৩২-১৯৭ ভোটে অভিশংসন প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। ট্রাম্পের নিজের দলের ১০ জন আইনপ্রণেতা এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এর আগে ২০১৯ সালে ইউক্রেন কেলেঙ্কারির কারণে কংগ্রেসে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রথম দফা অভিশংসন করা হয়েছিল।
৬ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানে ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো হওয়া সমর্থকদের তাণ্ডবে ক্যাপিটল ভবন রক্তে রঞ্জিত হয়। ঝরে পড়ে পাঁচটি তাজা প্রাণ। কংগ্রেসের অধিবেশনে যখন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনকে প্রত্যয়ন করা হচ্ছিল, তখনই মার্কিন ইতিহাসের ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ঘটে। লোকজন দরজা-জানালা ভেঙে ক্যাপিটল হিলে ঢোকে এবং অফিস তছনছ করে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানে সারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে সমর্থকদের সমাবেশ ঘটেছিল ওয়াশিংটন ডিসিতে।
আর এই ঘটনার পর বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও জরিপকারী প্রতিষ্ঠান ইপসস পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, দেশটির প্রায় ৫৭ শতাংশ নাগরিক ট্রাম্পের অপসারণ চায়। আর তাঁর অন্ধ সমর্থকদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে সাতজনই এই তাণ্ডব মোটেও সমর্থন করেন না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায়ই ক্ষেত্রে দেখা গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের দ্বিতীয় দফা মেয়াদের আগে গ্রহণযোগ্যতা বেশ বেড়ে যায়। কিন্তু ট্রাম্পের ক্ষেত্রে তা হলো না। ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট ৬০ শতাংশ গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে তাঁর প্রথম দফা প্রেসিডেন্সির মেয়াদ শেষ করেছিলেন। জর্জ ডব্লিউ বুশের গ্রহণযোগ্যতার হার ছিল ৫৬ শতাংশ। আর অগ্রহণযোগ্যতার হার ছিল ৪০ শতাংশ। ট্রাম্পের আগে কমসংখ্যক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রথম দফা মেয়াদ শেষ করার রেকর্ডটি ছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের কাছে। সে সময় তাঁর গ্রহণযোগ্যতার হার ছিল ৫০ শতাংশের নিচে। আর এবার সেই রেকর্ড নিয়ে হোয়াইট হাউস ছাড়তে হবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।