সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে গণধর্ষণ মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার পর এবার আদালতে আলোচিত এই ঘটনার বিচার শুরু হচ্ছে। আলোচিত এই ধর্ষণ মামলায় গণর্ধষণ, অপহরণ ও গণধর্ষণের সহযোগিতায় অভিযোগপত্র গঠন করা হয়। সেই সাথে ৩ আসামির দাখিলকৃত ডিসচার্জ পিটিশনও আদালত না মঞ্জুর করেছেন।
রোববার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আদালতে হাজির করা হয় ধর্ষণ মামলার আসামিদের। এরপর ওইদিন সাড়ে ১০টার দিকে আসামিদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মোহিতুল হকের আদালতে হাজির করার পর তাদের উপস্থিতিতে অভিযোগপত্রের ওপর শুনানি হয়।
সিলেট বিভাগীয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি রাশিদা সাঈদা খানম বলেন, বেলা সোয়া ১১টায় ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মোহিতুল হকের আদালতে আলোচিত এ গণধর্ষণ মামলার চার্জ গঠনের ওপর শুনানি হয়। বাদী-বিবাদী পক্ষের আইনজীবীর শুনানি শেষে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
তিনি বলেন, এই অভিযোগ গঠনের মধ্যদিয়ে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূ গণধর্ষণ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হলো।
রাশিদা সাঈদা খানম বলেন, রোববার আদালতে দুই আসামির জামিন ও তিন আসামিকে অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি (ডিসচার্জ) চেয়ে আবেদন করা হলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন।
এর আগে বেলা ১১টায় কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মামলার এজাহারভুক্ত মামলার ৮ আসামিকে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য। সকল আসামির উপস্থিতেই সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ মামলার চার্জ গঠন করেন আদালত।
গত ১২ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) গ্রহণ করে আজ ১৭ জানুয়ারি চার্জ গঠনের তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত। সেদিন পুলিশের প্রদান করা গণধর্ষণর মামলার এ চার্জশিটে কোনো ধরনের কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছিলেন বাদী পক্ষের আইনজীবীরা।
অভিযুক্তরা হলেন- ছাত্রলীগ কর্মী ও এমসি কলেজের ছাত্র সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল, মিসবাউল ইসলাম রাজন মিয়া, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুম।
অভিযোগপত্রে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম রাজনকে সরাসরি ধর্ষণে সম্পৃক্ত এবং রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুমকে ধর্ষণের সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই আটজনই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ভেতরে একটি রাস্তায় স্বামীকে আটকে প্রাইভেটকারের ভেতর ওই গৃববধূকে (২৫) পালাক্রমে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগের ৬ নেতাকর্মী। ঘটনার রাতেই নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে এসএমপির শাহপরান থানায় ৬ জনের নামোল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন।
পরবর্তীতে ৬ আসামিসহ সন্দেহভাজন আরো ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া আটজনই মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
মামলাটি তদন্ত করে গত ৩ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার ছাত্রলীগের ৮ নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য। এ মামলায় মোট সাক্ষী করা হয়েছে ৫২ জনকে।
এদিকে ধর্ষণের অভিযোগে দাখিলকৃত চার্জশিটসহ মামলাটি গত ৩ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যতন দমন ট্রাইব্যুনালে এবং গত ২৭ ডিসেম্বর চাঁদাবাজি ও মারপিটের অভিযোগের মামলাটি সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারের জন্য বদলি করেন সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম (২য়) আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান।
তাছাড়া অস্ত্র আইনের মামলাটির অভিযোগপত্র (চার্জশিট) পর্যালোচনার জন্য মুখ্য মহানগর হাকিম (২য়) আদালতে রাখা হয়েছে বলে আদালত সূত্র জানিয়েছে।