আর মাত্র একদিন বাকি। তারপরেই যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন। সে অর্থে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়ের মুহূর্ত একেবারেই ঘনিয়ে এসেছে। আগামীকাল চার বছরের ক্ষমতার দাপট শেষে হোয়াইট হাউস ছাড়বেন ট্রাম্প।
কিন্তু হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে ট্রাম্প কি পেলেন আর দেশকেই বা কি দিয়ে গেলেন সেটাই এখন সবার প্রশ্ন। চার বছরের শাসনামলে ট্রাম্প তার কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতিনিয়তই বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তার কথা, কাজ নিয়ে আলোচন-সমালোচনার শেষ ছিলো না। কিন্তু কোনো কিছুই তাকে তার চিন্তা থেকে এক চুলও সরাতে পারেনি। তার যখন যা মনে হয়েছে তিনি তাই করেছেন। একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কিছু বিষয়ে যে সীমাবদ্ধতা থাকে সেটা মানতে নারাজ ছিলেন তিনি।
এমনকি এ বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়েও তিনি কম বিতর্কের জন্ম দেননি। নির্বাচনের পর থেকেই তিনি ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন, বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে পুণরায় ভোট গণনার জন্য মামলা দায়ের করেন। যদিও ভোট জালিয়াতির কোনো প্রমাণই তিনি দেখাতে পারেননি। নিজের পরাজয়কে তিনি মানতেই পারছিলেন না। আর বাইডেনকে জয়ী হিসেবে স্বীকৃতি দিতেও গরিমসি করেছেন।
নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরই দেখা গেছে যে, ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা অনেক কমে গেছে। ট্রাম্প ইলেক্টোরাল ভোটে বাইডেনের কাছে পরাজিত হওয়ার পাশাপাশি মোট ভোটেও বাইডেন তার চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল। এদিকে সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, সবচেয়ে কম জনপ্রিয়তা নিয়ে হোয়াইট হাউস ছাড়তে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
সোমবার গ্যালাপ নামের একটি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন দেশটির মাত্র ৩৪ শতাংশ মানুষ। অর্থাৎ ট্রাম্প যা কিছু করেছেন সে বিষয়ে তারা ট্রাম্পের সঙ্গে একমত।
গ্যালাপের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তার জনপ্রিয়তা ছিলো ৪১ শতাংশ। অন্যান্য যে কোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে এই সংখ্যা কিছুটা কম। এছাড়া ক্ষমতার একেবারে শেষ মুহূর্তে তার জনপ্রিয়তা আরো কমে গেছে। বিশেষ করে গত ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে সহিংসতার ঘটনার পর থেকে দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে ট্রাম্প বেশ সমালোচিত হয়েছেন। এতে তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে।
অপরদিকে ক্ষমতায় থাকাকালীন এ পর্যন্ত ট্রাম্পকে দু’বার অভিশংসিত হতে হয়েছে যা এর আগে আর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঘটেনি। গত ৪ জানুয়ারি থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা নিয়ে ওই জরিপটি করা হয়েছে। ওই জরিপেই ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।
আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন জো বাইডেন। কিন্তু সেদিন সকালেই হোয়াইট হাউস ছাড়বেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
২০ তারিখ সকালে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি ছেড়ে ফ্লোরিডা যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্প। এর আগে অভিষেকের একদিন আগে অর্থাৎ মঙ্গলবারই ওয়াশিংটন ছাড়ার চিন্তা করেছিলেন। পরে মত পাল্টে বুধবার সকালে ফ্লোরিডা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ফলে গত দেড় শতাব্দী ধরে তিনিই প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার পরবর্তী উত্তরসূরির শপথ অনুষ্ঠানে থাকছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০ তারিখ সকালেই ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো ক্লাবে যাবেন ট্রাম্প। এটা ট্রাম্পের বৈধ আবাসস্থল। হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর সেখানেই থাকবেন তিনি।