নিজের ডাকা জনসভায় সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে প্রধান অতিথি হিসেবে দাওয়াত দিয়েছিলেন শামীম ওসমান এমপি। এ নিয়ে অশান্ত হয়ে উঠেছে নেতাকর্মীরা। এসব নেতাকর্মীদের শান্ত করতে করজোড়ে ক্ষমা চাইতেও হয়েছে আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী এমপিকে।
বুধবার রাতে নগরীর ৯টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে আয়োজিত দলীয় কর্মী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ কর্মিসভায় আইভীকে দাওয়াত দেয়া নিয়ে অশান্ত হয়ে উঠা কর্মীদের শান্ত করতে সিনিয়র নেতাদের রীতিমত হিমশিম খেতে হয়েছে। পরে করজোড়ে ক্ষমা চান শামীম ওসমান।
নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে মহানগরের ১১-১৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ব্যানারে উদ্যোগে আয়োজিত কর্মী সভায় শামীম ওসমানের বক্তব্যের শুরুতেই জনসভায় মেয়রকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর কারণ জানতে চান কয়েকজন কর্মী। মুহূর্তেই প্রসঙ্গটি নিয়ে সেখানে শত শত কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে হৈ হুল্লোর শুরু করেন। এক পর্যায়ে সিনিয়র নেতারা তাদের শান্ত করতে বারবার চেষ্টা করতে থাকেন। কর্মীরা তাদের বক্তব্য শোনার জন্য অনুরোধ করলে তাতে নেতারা সায় দেন।
এ সময় কর্মীরা বলেন, মেয়র আইভী গত ৮ বছর ধরে বাম ঘরানার নেতাদের নিয়ে চলাফেরা করেন। বিভিন্ন সভায় মেয়র আইভীসহ তার বামপন্থী সঙ্গীরা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীসহ বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে এমন কোনো অশালীন ভাষা নাই যা ব্যবহার করে নাই। যে সব জনবিচ্ছিন্ন বামপন্থী ও তথাকথিত সুশীলরা শেখ হাসিনাকে পাকিস্তানের আইয়ুব খানের সঙ্গে তুলনা করে বক্তব্য দেয় তারাই মেয়র আইভীর উপদেষ্টা হয়। মেয়র আইভী ভোটের সময় আওয়ামী লীগ সাজেন আর ভোটের পর মন্দিরের জায়গা দখল করেন। শত শত গরিব মানুষকে উচ্ছেদ করে তিনি মাথার ছাদ নিয়ে গেছেন।
তারা বলেন, ‘মেয়র আইভী বছরের পর বছর ওসমান পরিবারকে খুনি পরিবারসহ এমন কোনো বাজে কথা নেই বলেননি। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রয়াত সামসুজ্জোহা, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা নাসিম ওসমানকে নিয়েও অশালীন কথা বলেছেন। তিনি হকার উচ্ছেদ নিয়ে মামলা করেন আর সেই মামলার আসামি করা হয় দলের শীর্ষ নেতাদের। আমরা সব কিছু নিয়ে আপোষ করতে রাজি কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আপোষ করবো না। যারা নেত্রীকে নিয়ে অশালীন ভাষা ব্যবহার করেছে তাদের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের কোনো অমিল নেই। বঙ্গবন্ধুর নাম ও নেত্রীর ছবি বেঁচে আর নৌকা দিয়ে ক্ষমতা উপভোগ করবে আর আঘাত আসলে অন্য লোকের সঙ্গে বসে চা খাবে তা হবে না। এমন একজন মেয়রকে আপনি দাওয়াত দিলেন কেন?
কর্মীদের বক্তব্য শেষ হলে শামীম ওসমান বলেন, দেশ ধ্বংসের চক্রান্ত হচ্ছে বলেই আমি মাঠে নেমেছি। সবাইকে এক মঞ্চে নিয়ে কাজ করতেই আমি মনে করেছি আমার ডাকার দায়িত্ব তাই ভাবলাম সবাইকে ডাকি। এসব প্রশ্ন শোনার পরও আমি এজন্যই দাওয়াত দেই কারণ তার ইলেকশন আমরা করছি। আমি তারে (আইভী) চিনি না। আমি চিনি নৌকা আর শেখ হাসিনাকে। নেত্রী বলছেন তাই আইভীর নির্বাচন করেছি। তবে আপনারা, কর্মীরাই আওয়ামী লীগের শক্তি, জননেত্রী শেখ হাসিনার শক্তি। নেতারা বেইমানি করলেও কর্মীরা কখনও বেইমানি করে না। তাই তাকে দাওয়াত দিয়ে আপনাদের কষ্ট দেয়ার জন্য আমি হাতজোড় করে ক্ষমা চাই।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের এমপি শামীম ওসমানের সঙ্গে মেয়র আইভীর রাজনৈতিক বৈরিতা দেশজুড়েই আলোচিত-সমালোচিত। জাতীয় একটি টিভি চ্যানেলে ২ জনের প্রকাশ্য তর্ক-বিতর্কের ছড়িয়ে পরা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখনও লাখ লাখ দর্শক দেখেন। দলীয় ও সামাজিক বিভিন্ন ফোরামের পক্ষ থেকে বহুবার এক মঞ্চে বসার আহ্বান জানানোর পরেও এই ২ নেতানেত্রীর এক মঞ্চে বসা স্বপ্নই রয়ে গেছে।
কিন্তু বহু বছর পর সেই অসম্ভবকে সম্ভব হওয়ার মত আশা জাগান খোদ এমপি শামীম ওসমান। গত ২৮ ডিসেম্বর বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মী সভায় সেলিনা হায়াত আইভীকে নিজের ডাকা জনসভায় প্রধান অতিথি হওয়ার আমন্ত্রণ জানান শামীম ওসমান।
তিনি আইভীকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ওই সভায় বলেন, ‘আমি আগামী ৯ জানুয়ারি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সমাবেশের ডাক দিয়েছি। সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লায় কর্মী সমাবেশ করেছি। আজকে বন্দরে করছি। আমি এই সভা থেকেই সবাইকে দাওয়াত দিলাম। আপনাদের মাধ্যমে মেয়র মহোদয়কেও দাওয়াত দিলাম। মেয়র আইভী জেলা আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করছি, আমি বক্তা হিসেবে থাকবো, আপনি (মেয়র আইভী) প্রধান অতিথি হিসেবে থাকেন। যদি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন তাহলে প্রধান অতিথি হিসেবে আসেন। সব আয়োজন আমিই করবো, আপনি আসেন, একসঙ্গে কাজ করেন।’
কিন্তু শামীম ওসমানের এমন আহবানের পর থেকেই তার অনুসারী নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। তারই বহি:প্রকাশ ঘটে বুধবার রাতে কর্মী সভায়।