ঢাকায় চালুর প্রায় এক মাসেও চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে কোভিড পিসিআর ল্যাব স্থাপন হয়নি। এতে ক্ষোভে ফুঁসছেন চট্টগ্রামের আমিরাত প্রবাসীরা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের নতুন শর্ত মতে, ফ্লাইটের ৬ ঘন্টার মধ্যে বিমানবন্দর থেকে র্যাপিড পিসিআর টেস্ট করে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট প্রাপ্তদেরই কেবল তাদের দেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
এ কারণে শুরু থেকেই দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে র্যাপিড পিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন আরব আমিরাত প্রবাসীরা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অক্টোবরের শুরুতে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে কোভিড পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়। এরপর শুরু হয় ঢাকা-আমিরাত ফ্লাইট চলাচল। কিন্তু এটির প্রায় এক মাস পর চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পিসিআর ল্যাব স্থাপন সময়ক্ষেপণে চট্টগ্রামের প্রবাসীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।
এ নিয়ে ভুক্তভোগী প্রবাসীরা সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, সমাবেশ করে আসলেও এখনো পর্যন্ত কোন প্রতিকার পাননি। যদিও ইতোমধ্যে আলোচ্য বিমান বন্দরটিতে ল্যাব স্থাপনের সম্ভাব্য স্থানও নির্ধারণ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে ল্যাব স্থাপনে বিলম্বের কারণে খেসারত দিতে হচ্ছে বিমানবন্দরটি দিয়ে যাতায়াত করা দেশে এসে আটকে পড়া প্রবাসীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন প্রায় ২৫ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ প্রবাসী চট্টগ্রামের। সেদেশে ফেরা প্রবাসীদের জন্য আমিরাত সরকারের নতুন নিয়মের কারণে চট্টগ্রামে আটকা পড়েছেন প্রায় এক লাখ প্রবাসী। ইতোমধ্যে কিছু কিছু প্রবাসী ঢাকা বিমান বন্দর দিয়ে আমিরাত ফিরলেও বেশিভাগ আটকে আছেন চট্টগ্রামে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘কোভিড পিসিআর ল্যাব স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মহোদয়কে নিয়ে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর পরিদর্শন করা হবে। এরপর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’ চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, ‘শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান অধিদপ্তর থেকে স্বাস্থ্য বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সোমবার বিমান বন্দরে সমন্বয় সভায়ও আমি এ বিষয়টি তুলে ধরেছি। আশা করি খুব দ্রুত কাজ সম্পন্ন হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে প্রতিদিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ অন্যান্য ফ্লাইটে সর্বমোট সাত থেকে আটশ’ যাত্রী যাতায়াত করে থাকেন। তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বন্ধ থাকলে এ বিমানবন্দর দিয়ে অন্তত ৩শ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ যাত্রীর যাতায়াত থাকে। এতে খরচের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ডায়াগনস্টিক প্রতিষ্ঠানগুলো পিসিআর ল্যাব স্থাপনে গড়িমসি করছে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে থেকে করোনার কারণে বাংলাদেশের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করা হয়। এমতাবস্থায় ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশে ছুটিতে আসা হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি আটকা পড়েন। এরমধ্যে সংক্রমণ কমে আসায় শর্ত দিয়ে গত ৩০ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের জন্য সকল প্রতিবন্ধকতা উঠিয়ে দেয় আরব আমিরাত। শর্ত দেয়া হয়, বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোতে ফ্লাইট ছাড়ার ৬ ঘণ্টা আগে র্যাপিড পিসিআর টেস্ট পদ্ধতিতে করোনার পরীক্ষা করে নেগেটিভ রিপোর্টধারীরাই দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবেন এবং সেখানে পৌঁছে আরও একবার করোনা টেস্ট করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে ঢাকা শাহজালাল বিমান বন্দর ছাড়া অন্য কোন বিমান বন্দরে এ ব্যবস্থা এখনো চালু করা হয়নি। তাতে চট্টগ্রামের প্রবাসীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।