কৃমির আক্রমণ থেকে সুরক্ষায় শিশুদের কৃমিনাশক ওষুধ সেবনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে নগরীসহ চট্টগ্রাম জেলার প্রায় ২৮ লাখ শিশু-কিশোরকে এক ডোজ করে কৃমিনাশক ওষুধ সেবনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ হিসেবে আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বরের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশু ও কিশোরদের খাওয়ানো হবে এ ওষুধ।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি কৃমিতে আক্রান্ত হয় পাঁচ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুরা। এ বয়সে কৃমি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে তাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে সমস্যার পাশাপাশি অপুষ্টিতেও ভোগে অনেক শিশু। তাই অবশ্যই বছরে কমপক্ষে দুইবার কৃমির ওষুধ সেবনের পাশাপাশি এ বয়সী শিশুদের হাত ধোঁয়া ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরী ও উপজেলা মিলিয়ে এবার কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ লাখ ৭৬ হাজার ৩১৭ জনকে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় পুরো নগরীর জন্য ১৪ লাখ কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর ১৪ উপজেলায় কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর জন্য সর্বমোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৩১৭ জনের।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, উপজেলা পর্যায়ের মধ্যে স›দ্বীপে ৮৬ হাজার, মিরসরাইয়ে ১ লাখ ২৪ হাজার, সীতাকুণ্ডে ৬০ হাজার, ফটিকছড়িতে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭১৭, হাটহাজারীতে ১ লাখ ২ হাজার, রাউজানে ১ লাখ ৫ হাজার, রাঙ্গুনিয়ায় ৮৪ হাজার, বোয়ালখালীতে ৬৬ হাজার, পটিয়ায় ১ লাখ ৫০ হাজার, সাতকানিয়ায় ১ লাখ ২৪ হাজার, লোহাগাড়ায় ৭০ হাজার, চন্দনাইশে ৭২ হাজার, আনোয়ারায় ৭৫ হাজার, বাঁশখালীতে ১ লাখ ১২ হাজার ৬০০ জন। যদিও লক্ষ্যমাত্রার বাইরে সব মিলিয়ে অতিরিক্ত আরও লক্ষাধিক ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে, কৃমি সপ্তাহ এবং ক্ষুদে ডাক্তারদের দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি এডভোকেসি সভা করা হয়েছে। যেখানে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীর সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, জেলা শিক্ষা অফিসার, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ প্রতিটি উপজেলার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ইতোমধ্যে কৃমি সপ্তাহ সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে প্রতিটি উপজেলাতেই কৃমিনাশক ট্যাবলেট বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া।
তিনি জানান, প্রতিটি উপজেলায় চাহিদার চেয়ে বেশি সংখ্যক কৃমিনাশক ট্যাবলেট ইতোমধ্যেই পৌঁছানো হয়েছে। ১৪টি উপজেলার চাহিদা ছিল ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৩১৭টি ট্যাবলেটের। তবুও চাহিদার অতিরিক্ত দিয়ে মোট ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৩১৭টি ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী জানান, শিশুর অপুষ্টি সমস্যার অন্যতম কারণ কৃমি। কৃমি মানুষের পেটে পরজীবী হিসেবে বাস করে। যাদের পেটে কৃমি থাকে তাদের প্রতিদিনকার পুষ্টিকর খাবার শুষে নেওয়ায় কৃমি আক্রান্তরা সার্বক্ষণিক অপুষ্টিতে ভোগে। পাশাপাশি রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।