চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম কাস্টমস : প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ২৪.৭১%

(Last Updated On: )

দেশের সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায়কারী শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে ২০২১-২২ অর্থবছরের ১ম প্রান্তিকে (জুলাই- সেপ্টেম্বর) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। তবে কাস্টমসের শুল্ক আদায়ের কাজে নানা ধরনের বাধা না আসলে প্রবৃদ্ধি ৩০ শতাংশ হতে পারতো বলে ধারণা কাস্টমস সংশ্লিষ্টরদের।

কারণ, গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে চলা ৩৪ ঘণ্টার পণ্য পরিবহন গাড়ির মালিক ও শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে শুল্কায়ন শূন্যের কোঠায় পৌঁছে। এছাড়া অর্থবছরের শুরুতে জুলাইয়ের ২০ থেকে ২২ তারিখ ঈদুল আজহার ছুটি এবং পরবর্তী ২৩ তারিখ থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনে বন্ধ থাকে শিল্প-কারখানা। ফলে ২০ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত মোট ১২দিন পণ্য খালাস হয় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় খুবই নগণ্য পরিমাণে। অর্থাৎ গত তিন মাসের প্রায় ১৪ দিন স্বাভাবিকের তুলনায় খুব নগণ্য পরিমাণে রাজস্ব আদায় হয়। এই ১৪ দিনে স্বাভাবিক সময়ের মত আমদানি-রপ্তানির শুল্কায়ন হলে আরো অন্তত ২২শ কোটি টাকা আদায় সম্ভব হতো বলে জানান কাস্টমস সূত্র। চট্টগ্রাম কাস্টমসের গত সেপ্টেম্বরের রাজস্ব আদায় চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১২ হাজার ৯৩৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। অথচ গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে ২ হাজার ৫৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা বেশি অর্জিত হয়েছে। এই অর্জনের মাধ্যমেই চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে

প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ।

এছাড়া গত অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ৩০৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বেশি আদায় হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে। সে হিসেবে শুধু সেপ্টেম্বরের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ২১ শতাংশে।

এদিকে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে থাকলেও চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১ম প্রান্তিকে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আশানুরূপ রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়নি। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। কিন্তু এ সময়ে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ১২ হাজার ৯৩৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আহরণে ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ৫৬৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানিতে শাস্তির পরিমাণ বাড়ানোর পরেও কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এখনো রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছে। এছাড়া, অপ্রত্যাশিত পণ্য পরিবহন ধর্মঘট ডেকে দেশের আমদানি রপ্তানি কাজকে ব্যহত করা হচ্ছে। এসব ঘটনা না ঘটিয়ে নিয়ম মেনে এবং দেশের বৃহৎ স্বার্থের কথা চিন্তা ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদানি রপ্তানি কাজ করলে রাজস্ব আহরণের লক্ষমাত্রা অর্জন করা কঠিন কিছু হবে না।

তিনি আরো বলেন, চলতি অর্থবছরের শুরুতে জুলাই মাসেই পালিত হয় ঈদুল আজহা। স্বাভাবিকভাবে ঈদের ছুটিতে পণ্য খালাস তুলনামূলক কম হয়। এছাড়া ঈদের ছুটির পরদিনই শুরু হয় কঠোর লকডাউন। তখন প্রথমবারের মত শিল্প-কারখানাও বন্ধ রাখা হয়। ফলে জুলাইয়ের ২৩ তারিখ থেকে পণ্য খালাস উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। পুরো জুলাই মাসের ১২ দিনই ঈদের ছুটি ও লকডাউনের করণে পণ্য খালাস হয় খুবই নগণ্য পরিমাণে। এছাড়া গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে চলা ৩৪ ঘণ্টার পণ্য পরিবহন কর্মবিরতিতেও শুল্কায়ন হয় খুবই কম। এসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার কারণে লক্ষমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়নি। তারপরও গত অর্থবছরের তুলনায় খুব ভাল প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে আছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস।

উল্লেখ্য, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৪ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম তিন মাসে আহরণ হয়েছে ১২ হাজার ৯৩৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসকে আগামী ৯ মাসে আরো ৫১ হাজার ১৩৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা আহরণ করতে হবে।