জাপানি মা চিকিৎসক নাকানো এরিকোকে নিয়ে অপপ্রচার চালানো সব কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া এসব ভিডিও তৈরির সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিটিআরসির চেয়ারম্যান ও সাইবার টিমকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে দুই শিশুর জাপানি মায়ের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। বাবার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর জাপানি মা চিকিৎসক নাকানো এরিকোকে নিয়ে অপপ্রচার সংক্রান্ত সব কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরোনার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। এছাড়া দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে বেড়ানোর উদ্দেশে বাইরে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চেয়েও আবেদন করা হয়। দুই শিশুর জাপানি মায়ের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এ আবেদন দায়ের করেন।
২০০৮ সালে এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি-আমেরিকান শরীফ ইমরানের (৫৮) বিয়ে হয় এবং তারা টোকিওতেই বসবাস শুরু করেন। ১২ বছরের সংসারে আসে তিন কন্যাসন্তান। তারা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিল।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি তাদের বিয়েবিচ্ছেদ হয়। ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু এতে স্ত্রী এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এর পরদিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুল বাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছ থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন।
আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন। কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। এরপর ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। এরই মধ্যে ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় দেওয়ার আদেশ দেন। এ নিয়ে এরিকো বাংলাদেশের একজন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। ১৮ জুলাই তিনি শ্রীলংকা হয়ে বাংলাদেশে আসেন এবং তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ থাকার পরও ইমরান রিপোর্ট অবিশ্বাস করে সন্তানদের সঙ্গে তাকে সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানান। ২৭ জুলাই এরিকোর মোবাইল সংযোগ বন্ধ করে চোখ বাঁধা অবস্থায় মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো।