হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে ‘জঘন্য ব্যক্তি’ বলে আখ্যা দিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘রোম যখন পুড়ছিল, নিরু তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল। যখন বাংলাদেশ পুড়ছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুড়ছে, উনি ফূর্তি করতে গেছেন রিসোর্টে। ফূর্তি করুক গিয়ে কোনো আপত্তি নাই, কিন্তু ওটি (উনি) ন্যায্য বউ কি না, ওটারও তো প্রমাণ দিতে হবে।’
সোমবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেজর হায়দার মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গত শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিহত ও ধ্বংসাত্মক ঘটনার সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য ঢাকা থেকে ১৪ সদস্যবিশিষ্ট টিম সফর করেন। ঘটনার প্রত্যক্ষ বিবরণ তুলে ধরার লক্ষ্যে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মামুনুল হক প্রসঙ্গে বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী হিসেবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘উনি যেইসব কথাবার্তা বলেন, ‘‘নাস্তিকের বাঁচার অধিকার নাই’’, উনার বাবার অধিকার আছে? এই দেশ কি উনার বাবা করেছেন? আমরা করেছি, আমরা এই দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছি। আমার ভাই প্রাণ দিয়েছে, আপনার বোন প্রাণ দিয়েছে। তাদের দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশ। মামুনুল হকের দ্বারা সৃষ্টি হয় নাই। মামুনুল হকরা অ্যাজেন্ট প্রভোকেটার (উসকানিদাতাদের প্রতিনিধি)।’ গণস্বাস্থের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘আমাদের জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে। ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। আমরা হেফাজতকে সমর্থন করি না, করবো না। যেদিন তারা সঠিক, মানবিক ইসলামের পথে না আসে । লম্বা জামা পরলে ইসলাম হয় না, মনের দিক থেকে পরিচ্ছন্ন হতে হয়।’
তবে তাদেরও মিটিং-মিছিল করার অধিকার আছে বলে উল্লেখ করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তাদেরকে (হেফাজত) সরকারের এত পীরিতের কারণটা কী, এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘তাদের একজনের বিরুদ্ধেও মামলা হচ্ছে না। আইজি সাহেব খুব সুন্দর কথা বলেন, কিন্তু আসল জায়গায় হাত দিতে ভয় পান।’
মাদ্রাসাগুলোতে ছেলে শিশুদের বলাৎকার ও যৌন হয়রানির প্রসঙ্গ টেনে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘অনেকেই যৌন নিপীড়নে জড়িত আছেন। এটা আমরা করলে যে অপরাধা, তারা করলেও সেই একই অপরাধ।’ এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে সরে এসে প্রকৃত ইসলাম পালনে হেফাজত নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হেফাজত নিশ্চিত ছিল সরকার তাদের বাধা দেবে না। তারা সরকারের লোক। এবং এর প্রমাণ আমরা অতীতেও দেখেছি। তারা মিটিং মিছিল করলে তাদের সরকারের পুলিশ বাহিনী বাধা দেয় না। কিন্তু অন্য কোনো রাজনৈতিক দল মিটিং মিছিল করলে তাদের ওপর পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ে।’
ডা. জাফরুল্লাহ সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় বিদেশি এজেন্ট জড়িত থাকতে পারে। কারণ এটা সাধারণ মানুষের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব না। ঘটনাটি পরিষ্কার করা দরকার। তবে বিক্ষোভের মধ্যে হেফাজতের কয়েকজন জড়িত থাকতে পারে। তাদেরও বিচার হওয়া উচিত।’
সংবাদ সম্মেলনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় আমাদের দাবি হলো- যারা নিহত ও আহত হয়েছেন, তাদের তালিকা প্রকাশ; ওই ঘটনায় যারা প্রকৃত দায়ী তাদের খুঁজে বের করা, ওই ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত ও বিচার; অজ্ঞতনামা যাদের নামে মামলা করা হয়েছে, তাদের হয়রানি বন্ধ করে সুনির্দ্দিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়াসহ অনেকে।