প্রধানমন্ত্রীর উপহার জমি ও ঘরসহ নতুন নৌকা পেতে যাচ্ছেন লক্ষ্মীপুরের সেই নৌকার মাঝি মায়া বেগম। একইসঙ্গে তার তিন কন্যার উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন পূরণের দায়িত্বও নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) দুপুরে জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ মায়ার হাতে নগদ ১০ হাজার টাকার চেক দিতে গিয়ে এসব তথ্য জানান। এ ধরণের অন্য কারো খোঁজ ফেলে তাদের পাশে দাঁড়ানোরও আশ্বাস দেন তিনি।
জানা গেছে, মায়া বেগম (৩৫)। জীবিকার তাগিদে হাতে তুলে নিয়েছেন নৌকার বৈঠা। দু’বেলা দুমুঠো খাবার যোগাতে ও তিন কন্যার লেখাপড়ার খরচ চালাতে সেই ভোরে হাতে ওঠে বৈঠা আর শেষ হয় রাতে। ৭ বছর ধরে নৌকা চালিয়ে দৈনিক ১০০ হতে ১৫০ টাকা উর্পাজন করে কোন মতে কষ্ট তিন মেয়ের পড়ালেখাসহ সংসার চালাচ্ছেন তিনি।
ভোরে ওয়াবদা খাল পাড়ে চলে যান বিধবা মায়া বেগম। এরপর শুধুই বৈঠা বাওয়া। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের তালহাটি গ্রামের ওয়াবদা খালে। দুই গ্রামের বাসিন্দাদের খাল পারের একমাত্র ভরসা তার নৌকা। ৭ বছর ধরে এভাবেই চলছে মায়া বেগেমের বৈঠা।
বিধবা মায়া বেগম সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের তালহাটি গ্রামের শহিদ হাজী হাওলাদার বাড়ীর মৃত: মোঃ আলীর স্ত্রী ও তিন কন্যার জননী।
তখন বিধবা মায়া বেগম বলেন, তিন মেয়ে নিয়ে তার সংসার। সারাদিন খাটাখাটনি করে কোনরকম সংসারটা চালাচ্ছি ও মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছি। প্রতিদিন নৌকা চালিয়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা হয়। তা দিয়েই কষ্ট করে চলে সংসার। এ টাকায় সংসার ও মেয়েদের পড়ালেখা করাতে খুব হিমশিম খাচ্ছি। মাঝে মাঝে হাত পাততে হয় মানুষের দুয়ারে। স্বামী মারা গেছে প্রায় ১৫ বছর। নৌকা চালিয়ে তিন মেয়ে ও আমিসহ সংসারের সদস্য চারজন। বড় ও মেঝো মেয়ে চাঁদখালী এরব উচ্চ বিদ্যালয়ে। আর ছোট মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। যে নৌকার ওপরেই সংসার, এখন সেটিও পুরান এবং নড়বড়ে, কখন যে ভেঙে যায়। এনিয়ে প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।
ঐসময় এলাকাবাসীরা জানান, তিনটা মেয়ে নিয়ে স্বামী হারা বিধবা মায়া নৌকার উপর নির্ভরশীল। কষ্ট করে নৌকা বেড়ে খাচ্ছে, তাছাড়া তো ওনার উপায় নেই। উনি চলবেন কি করে, খুবই অসহায়। যার টাকা আছে সে দেয়, যার টাকা নেই তাকেও পাড় করে সে। তার নৌকাটা পুরান হয়ে গেছে। এই নৌকাটা নতুন করে তৈরির করার জন্য সমাজের বিত্তশালীদের সাহায্যের প্রয়োজন, যাতে ওনার সংসারটা ভালোভবে চলতে পারে এবং মেয়েদের পড়ালেখা করিয়ে উচ্চা শিক্ষায় পৌঁছাতে পারে।
এরিমধ্যে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে সংবাদটির সত্যতা যাচাই করেন জেলা প্রশাসক। ঐদিন আনুষ্ঠানিকভাবে মায়াকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারসহ (জমি ও ১লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে ঘর) তার পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তাকে ডেকে এনে ১০ হাজার টাকার চেক প্রদান করেন জেলা প্রশাসক।
এসময় লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মোঃ আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, ঝড় বৃষ্টির মধ্যেও যে নারী খেয়া পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করছে। সেটি উপলব্ধি করেই প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে তাকে জমিসহ ঘর নির্মাণ করে দেয়ার স্বিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার তিন কন্যার উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন পূরণের দায়িত্বও নেয়া হয়েছে। সরকারি এ সহায়তার মাধ্যমে তাদের দারিদ্র বিমোচনসহ তিন কন্যার উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে বলে তিনি জানান।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুম বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় মায়া ও তার পরিবারের প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করছে প্রশাসন।
এদিকে এমন খবরে মায়ার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বেশ খুশি ও আনন্দিত হওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। একই অনুভূতি প্রকাশ করেন তার বাবা নুরুল আমিন ও ইউপি মেম্বার আলমগীর হোসেন।