জাতীয়

প্রসব যন্ত্রণায় মৃত্যুমুখে নারী-নিরুপায় উপকূলের মানুষ

(Last Updated On: )

শুক্রবার (৩০ জুলাই) মধ্যরাতে প্রসব যন্ত্রণা ওঠে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের ইমরান হোসেনের স্ত্রী কেয়ামনির (২০)। দ্বীপ ইউনিয়ন হওয়ায় ইচ্ছা করলেই তাকে হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব নয়।সেই সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।  

সচরাচার মোটরসাইকেল একমাত্র যানবাহন হিসেবে ব্যবহার করা হয় এই দ্বীপ ইউনিয়নে। কিন্তু কাদা পানিতে তাও চলছে না।  

ওদিকে, প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন হবু মা। পরিবারের পক্ষ থেকে গ্রাম্য চিকিৎসক ও ধাত্রী দিয়ে নরমাল প্রসবের চেষ্টা করা হয় শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত। কিন্তু সব চেষ্টা যখন ব্যর্থ হয়, তখন উপায়ন্ত না পেয়ে এবং অ্যাম্বুলেন্স কিংবা অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় স্বামী-শ্বশুর মিলে বাগে করে (ভারী জিনিস ঘাড়ে বহনযোগ্য স্থানীয়ভাবে তৈরি সরঞ্জাম) কেয়ামনিকে নিয়ে রওনা হন খোলপেটুয়া নদীর পাতাখালী খেয়াঘাটের দিকে।  

খেয়াঘাটে পৌঁছে ট্রলারে করে নওয়াবেকী ঘাটে যাওয়ার সময় দুপুর দেড়টার দিকে ট্রলারেই ফুটফুটে একটি সন্তান প্রসব করেন কেয়ামনি।  নওয়াবেকী ঘাট থেকে সড়ক পথে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দূরত্ব আরো ১২ কিলোমিটার।  

কেয়ামনির শ্বশুর ইব্রাহিম হোসেন জানান, বর্তমানে মা ও নবজাতক দু’জনেই সুস্থ আছে। তারপরও তাদের  শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে।  

শুধু কেয়ামনি নয়, এ যেন উপকূলের দৈনন্দিন চিত্র, জীবন-মৃত্যুর খেলা। প্রত্যন্ত এই অঞ্চলে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। সব থেকে বেশি বিপদ হয় নারীদের প্রসবকালীন সময়ে। এখান থেকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক বেলার পথ। মাঝে পারি দিতে হয় কয়েক ঘণ্টার পানি পথ।  

মাঝেমধ্যেই নদী পথে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার আগেই ট্রলারে সন্তান জন্ম দেন অনেকে। আবার জীবনহানির ঘটনাও ঘটে প্রসব যন্ত্রণায় কাতর মায়ের। অনেকে বাড়িতে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে রক্তক্ষরণেও মারা যায়, কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার সুযোগ থাকে না।