জাতীয়

স্বাস্থ্যবিধি কতটা মেনে চলা যাবে

(Last Updated On: )

কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে চলমান বিধিনিষেধের মধ্যেই আজ শুক্রবার থেকে মার্কেট-শপিংমল খোলা রাখার পক্ষে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা- দিনে ৮ ঘণ্টা করে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখা যাবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশ জারি করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরাও কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট পরিচালনার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে আসলেই কতটা মানা হবে, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিষেশজ্ঞরা। তাদের মতে, বর্তমান করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি সামান্য উপেক্ষিত হলেও তার চড়া মাশুল দিতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় নতুন করে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৮৫৪ জন। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড গড়ছে। গত সোমবার ‘লকডাউন’ শুরুর পর থেকে দোকানপাট চালু রাখতে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই রাস্তায় বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। গত বুধবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দোকান মালিক সমিতির নেতারা বৈঠক করেন। এর পর দোকান খোলার সিদ্ধান্ত দিল সরকার।

এ বিষয়ে সরকারের এক কর্মকর্তা বলেন, মূলত মানুষের দাবি বিবেচনায় নিয়েই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী; কিন্তু মধ্য ও নিম্নবিত্তের মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আগামীতে আরও বিধিনিষেধ এলেও জীবন-জীবিকার বিষয়গুলো বিবেচনায় নেবে সরকার।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠপ্রশাসন সমন্বয় অধিশাখা থেকে গতকাল উপসচিব মো. রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করা না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত সোমবার সকাল ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে শপিংমল, দোকানপাট, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এর মধ্যেই গত বুধবার থেকে সিটি করপোরেশন এলাকায় সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন সেবা ফের চালুর সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। এই ‘লকডাউনের’ মধ্যেও অফিস-আদালত, ব্যাংক, গার্মেন্টস, শিল্পকারখানা খোলা রাখার সুযোগ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে প্রিভেন্টেটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, দেশে এখন করোনা ভাইরাস তীব্র আকার ধারণ করেছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড ভাঙছে। সামনে আরও মহাদুর্যোগ। সংক্রমণ ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে এমনিতেই আমরা পিছিয়ে আছি। সেখানে ভুল বা গাফিলতির কোনো সুযোগ নেই। এখানে দুটি বিষয়- হয় পরিপূর্ণ লকডাউন দিতে হবে, নয়তো বিধিনিষেধ দিয়ে কড়া মনিটরিং করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের জীবিকার তাগিদে দোকানপাট সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া যেতেই পারে। তবে তা স্বল্প সময়ের জন্য হলেই মঙ্গল। তা ছাড়া গতবারের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মার্কেট-শপিংমলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি উধাও হয়ে গেছে। এবার তা হতে দিলে চলবে না। স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনাগুলো মানা হচ্ছে কিনা সেটি কঠোর তদারকির জন্য বিশেষ মনিটরিং সেল করতে হবে। কড়াকড়ি নজরদারি থাকতে হবে। গতবার স্বাস্থ্যবিধি পালনে মার্কেটগুলো গাফিলতি করলেও অল্পতে পার পাওয়া গেছে। এবার সামান্য অবহেলাতেও জীবন দিয়ে মাশুল দিতে হতে পারে।

কঠোর স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারের সব নির্দেশনা মেনে আজ থেকে মার্কেট-শপিংমল খোলা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে মার্কেট কর্তৃপক্ষগুলোকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছি। এবার কোনো ছাড় নয়। বিশেষ করে মাস্ক পরিধানের বিষয়ে ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সতর্ক করা হয়েছে। তা ছাড়া মার্কেট কর্তৃপক্ষগুলোর সঙ্গে দোকান মালিক সমিতি আলোচনায় বসবে। সরকারের নির্দেশনা তো রয়েছেই, এর বাইরেও সবাইকে সাবধানতা পালনে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হবে। বৈঠকের পর সবাইকে লিখিতভাবেও সতর্ক করা হবে। কোনো মার্কেট বা বিপণিবিতানে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

দোকান মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী গত বছর দীর্ঘ সময় দোকানপাট বন্ধ থাকায় সরারাদেশে অর্ধকোটির বেশি ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ব্যবসা হারিয়ে বেকার হয়েছেন। অনেকে পুঁজি হারিয়ে ঋণ করে এখনো ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন। এমন পরিস্থিতিতে দোকানপাট আবার বন্ধ হয়ে গেলে ব্যবসায়ীরা নতুন করে বড় ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

হেলাল উদ্দিন বলেন, সামনে পহেলা বৈশাখ ও ঈদ মৌসুম। এখনই পাইকারি বাজারে ব্যবসার সময়। ইতোমধ্যে অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এখন মার্কেট বন্ধ থাকলে পথে বসে যেতে হবে তাদের। যেহেতু স্বল্পপরিসরে মার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত এসেছে, এখন লোকসানের অঙ্কটা হয়তো অনেকটাই কমবে।

রাজধানীর নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, মার্কেট ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দুর্দশার বিষয়টি বিবেচনা করায় আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। ব্যবসায়ীদের অবশ্যই সরকারের সব নির্দেশনা মানতে হবে। আমরা সব প্রস্তুতি নিয়েছি। নির্দেশনা মেনে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মার্কেট খোলা হবে। আমরা লিখিতভাবে মার্কেটের সব ব্যবসায়ীকে সতর্ক করেছি। যারা নির্দেশনা লঙ্ঘন করবেন, তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।

ভোক্তা অধিকারবিষয়ক সংগঠন কনসাস কনজ্যুমার্স সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ বলেন, মার্কেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী, কর্মচারীসহ খেটেখাওয়া বহু নিম্নআয়ের মানুষ আয়শূন্য হয়ে পড়েন। স্বাভাবিকভাবেই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে তাদের। তাদের ক্ষয়ক্ষতির দিকটিও দেখতে হবে। তবে বর্তমান করোনা পরিস্থিতি উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। তাই স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেই হবে, এর বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে গতবারও আমরা অবহেলা দেখেছি। এবার যেন তার পুনরাবৃত্তি না হয়, সেদিকে সরকারকে অবশ্যই শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে।