স্বাস্থ্য

অতিরিক্ত মেদভুঁড়ি নিয়ন্ত্রণ করবেন যেভাবে

(Last Updated On: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১)

স্থূলতা বা অতিবেশি স্বাস্থ্য আমাদের সমাজের মানুষের মধ্যে দিন দিন বেড়েই চলছে। বলা যায়, বর্তমানে এটি একটি মারাত্মক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। শরীরে স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত চর্বি জমা হলে সেই অবস্থার নামই স্থূলতা। শরীরে অতিরিক্ত স্নেহ বা চর্বিজাতীয় পদার্থ জমা হয়ে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। উচ্চতা অনুযায়ী সবারই একটা নির্দিষ্ট ওজন থাকা চাই। বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) হলো শরীরের উচ্চতা ও ওজনের আনুপাতিক হার, যা দিয়ে বোঝা যায়- কোনো ব্যক্তি মাত্রাতিরিক্ত ওজনবিশিষ্ট কিনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মানুযায়ী, বিএমআই ১৮.৫-এর নিচে হলে নিম্ন ওজন, ১৮.৫-২৫ হলো স্বাভাবিক ওজন, ২৫-৩০ হলে স্থূলতা, ৩০-এর অধিক হলে অতিস্থূলতা।

স্থূলতা একটি রোগ। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে মানুষের অতিরিক্ত স্থূলতা। আটকানো না গেলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থূলতার জন্য শরীরে নানা ধরনের রোগ ও জটিলতা দেখা দিয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা পুরুষের তুলনায় স্থূলতায় বেশি ভুগে থাকেন।

স্থূলতা একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য সমস্যা। সহজ কথায় বলা যায়, স্থূলতা কমলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুঝুঁকিও কমে যায়। স্থূলতার সঙ্গে বিভিন্ন রোগের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। যেমন- হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট ফেইলিউর, ফ্যাটি লিভার, উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, মেয়েদের পিরিয়ড সমস্যা, পলিসিস্টিক ওভারি, বন্ধ্যত্ব, গর্ভকালীন জটিলতা, ভ্রƒণের মৃত্যু, স্ট্রোক, মাইগ্রেইন, কোমর, হাঁটু ও পায়ে ব্যথা, পা ফুলে থাকা, আন্ডার আর্ম ও ঘাড়ে কালচে দাগ পড়া, অ্যাসিডিটির সমস্যা, ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা ও নাক ডাকা, অ্যাজমা, পুরুষের যৌনক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, প্রস্রাব আটকে রাখতে না পারা, কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া, খাদ্যনালিসহ শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধিসহ আরও অনেক রোগ ও জটিলতা দেখা দিতে পারে।

স্থূলতার অন্যতম প্রধান কারণ : চাহিদার তুলনায় অধিক ক্যালরিসমৃদ্ধ খাদ্যগ্রহণ করা। কায়িক পরিশ্রম কম বা একদমই না করা। জিনগত বা বংশগত সমস্যা। কিছু হরমোনজনিত সমস্যা। কিছু ওষুধ সেবনের কারণেও মেদ বেড়ে যেতে পারে। কখনো কখনো মানসিক সমস্যার কারণেও শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমে উঠতে পারে।

স্থূলতা থেকে পরিত্রাণের উপায় : সে ক্ষেত্রে স্থূলতার ব্যবস্থাপনা অবশ্যই পুষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে। জীবনযাত্রার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শরীর সুস্থ ও নীরোগ রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে শরীরের চাহিদা অনুযায়ী সঠিকমাত্রার খাদ্য ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে।

তেল ও চর্বিযুক্ত খাদ্যগ্রহণ কমাতে হবে। চিনিযুক্ত খাদ্যগ্রহণ কমাতে হবে বা বিরত থাকতে হবে। আঁশযুক্ত খাদ্য, যেমন- তাজা শাকসবজি ও ফল বেশি করে খেতে হবে। দৈনিক কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। শারীরিকভাবে পরিশ্রম করতে হবে। অর্থাৎ শরীর ঘামাতে হবে। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ব্যায়াম করতে হবে। শিশুদের অবশ্যই চকোলেট, কোমল পানীয়, কেমিক্যালযুক্ত ফলের রস ইত্যাদি খাওয়ানো থেকে বিরত রাখতে হবে। মূলকথা, স্থূলতা থেকে মুক্তি পেতে হলে জীবনযাত্রার পরিবর্তন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম- এ তিনটির সমন্বয়ে স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

লেখক : স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখক ও পুষ্টিবিদ

০১৭১৭৯৪৩৯৭০; ০১৭৪৫৬৫২১৯৪