লাইফ স্টাইল

ইতিকাফ কী, কেন করা হয়?


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

ইতিকাফ আরবি শব্দ। এর অর্থ স্থির থাকা বা অবস্থান করা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় জাগতিক কার্যকলাপ ও পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সওয়াব-এর উদ্দেশ্যে মসজিদে বা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা বা স্থিতিশীল থাকাকে ইতিকাফ বলে।

ইতিকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা সুন্নত। কোনো একটি ছোট্ট জনপদের কেউ ইতিকাফ করলে জনপদের বাকিদের উপর থেকে এর দায় ঘুঁচে যায়। তবে ওই জনপদের কেউ যদি ইতিকাফ না করে তাহলে সকলেই সুন্নতে মুয়াক্কাদা বর্জনের দায়ে দায়ী হবেন।

রমজানের ২০ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব থেকেই ইতিকাফ শুরু করতে হবে এবং ঈদ উল ফিতরের চাঁদ দেখা যাওয়া পর্যন্ত ইতিকাফ অবস্থায় থাকতে হবে। এই সময় কেউ ইতিকাফ করলে সে-ই পূর্ণাঙ্গ ইতিকাফের সওয়াব অর্জন করতে পারবে।

ইতিকাফের কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন, এমন মসজিদে ইতিকাফ করতে হবে, যেখানে নামাজের জামাত হয়। জুমুয়ার জামাত হোক বা না হোক। এটা পুরুষদের ইতিকাফের ক্ষেত্রে, তবে মহিলাগণ ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে ইতিকাফ করবে। আরেকটি শর্ত হচ্ছে, ইতিকাফের নিয়ত করতে হবে। মহিলারা ইতিকাফ করা অবস্থায় তাদের পিরিয়ড অথবা প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ শুরু হলে ইতিকাফ ছেড়ে দিবে।

ইতিকাফ অবস্থায় দুনিয়াবী কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা থেকে দূরে থাকতে হবে। প্রতিটি সময় আল্লাহর স্মরণে এবং ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাতে হবে। এ ক্ষেত্রে দৈনন্দিন প্রাকৃতিক যে সমস্ত কাজ রয়েছে, যেমন: প্রস্রাব-পায়খানা, অজু-গোসল, ঘুম ইত্যাদি সবই করা যাবে, তবে এই সব কিছুই নিয়মের মধ্যে থেকে আদায় করলে, সেই ব্যক্তি তার ইতিকাফের মধ্যে পরিগণিত হবে এবং পরিপূর্ণ  ইতিকাফের সওয়াবের অধিকারী হবে।

ইতিকাফ কেন করা হয়? এই প্রশ্নের জবাব হচ্ছে, এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত,  তাই তা পালন করা হয়। যারা আল্লাহর সান্নিধ্য খুব বেশি পেতে চান, তাদের ইতিকাফ করা উচিত । তবে এ ক্ষেত্রে একটি বড় হিকমত এই ইতিকাফের পেছনে রয়েছে, আর তা নিম্নরূপ:

হিজরী বছরের ১২ মাসের মধ্যে রমজান শ্রেষ্ঠতম মাস। কারণ এই মাসে একটি রাত রয়েছে, যে রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আর সেটি হচ্ছে লাইলাতুল কদর। এই রাতে পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। এই রাতের বহু ফজিলত রয়েছে। কোনো ভাগ্যবান যদি ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে এই রাত কাটানোর সুযোগ পায়, সে যেনো মহাপ্রাপ্তি পেয়ে গেল। তবে এ রাতটি কোনো সহজলভ্য রাত নয়। নির্দিষ্ট করে ঠিক কোন রাতে লাইলাতুল কদর তা বলে দেয়া হয়নি। এ রাতকে উম্মতে মুহাম্মদীর কাছে গোপন রাখা হয়েছে। যাতে মহানবী সা. এর উম্মতগণ এ রাতকে খোঁজার জন্য প্রতিযোগিতায় নামে, কিছু কৌশল অবলম্বন করে, তাহলেই তারা এ রাতটি পেয়ে যাবে। 
হতে পারে এই রাতটি রমজানের ২৭তম রজনী। (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৭৬২, উবাই ইবন কা‘ব রা. ও ১১৭০, আবু হুরাইরাহ রা.)

আবার হতে পারে এটি রমজানের শেষ ১০ দিনের মধ্যে বেজোড় রাতগুলো, যেমন ২১, ২৩, ২৫, ২৭, বা ২৯ তারিখের রাত। (বুখারী, হাদিস নং-২০১৭, মুসলিম, হাদিস নং-১১৬৯)

আবার আমাদের দেশে যেদিন ২১ তারিখ, দেখা যায় আমাদের দেশ থেকে পশ্চিম দিকের দেশগুলোর কোনো কোনো দেশে সেদিন ২২ তারিখ। তাহলে আমাদের বাইরের দেশের হিসাবে বেজোর রাতগুলোতেও লাইলাতুল কদর হতে পারে। একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, সারা পৃথিবীতে লাইলাতুল কদর একটি রাতেই হয়, এতে সময়ের আগপর হতে পারে। অর্থাৎ আমাদের দেশে যেটি বেজোড় রাত, পাশের দেশে সেটি জোড়, আবার আমাদের দেশে যেটি জোড়, পাশের দেশে সেটি বেজোড়। মোটকথা রমজানের শেষ দশকের জোড় এবং বেজোড়, প্রতিটি রাতেই যদি কেউ লাইলাতুল কদর খোঁজার উদ্দেশ্যে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে কাটিয়ে দিতে চায়, আর লাইলাতুল কদরের ফজিলত পাওয়ার চেষ্টায় মগ্ন থাকতে চায়, তাহলে ইতিকাফের কোনো বিকল্প নেই।

তাহলে কি দাঁড়ালো? এই বরকতময় রাত অনুসন্ধানের জন্য চেষ্টা করতে হবে। কেউ যদি নিয়ম মতো শেষ ১০ দিনের ইতিকাফে মগ্ন থাকে এবং আল্লাহর ইবাদতে মাশগুল থাকে, তাহলে তার লাইলাতুল কদর হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা খুবই কম। আর তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত হিসেবে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা হয়। এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি সুন্নত জাগ্রত হলো। অন্যদিকে ইবাদতে মশগুল, পাপ-পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত মানুষের মধ্য থেকে ইতিকাফকারী লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির মাধ্যমে, তার জীবনের বড় একটি চাওয়া পেয়ে গেল। 

লাইলাতুল কদরের ফজিলত খুবই বেশি। কেউ এই একটি রাত ইবাদত করলে হাজার মাসের চেয়েও বেশি ইবাদত করার পূণ্য পাবে। কেউ যদি এই রাতে একটি টাকা দান করে, তাহলে সে হাজার মাসের চেয়ে বেশি সময় প্রতিদিন একটি করে টাকা দান করলে যে সওয়াব হতো, সেই সওয়াবের ভাগ্যবান অধিকারী হয়। তাই ইতিকাফের মাধ্যমে আমরা যেন লাইলাতুল কদর পেয়ে যেতে পারি, সেই তাওফিক আল্লাহর কাছে কামনা করছি। আমিন!