জাতীয়

ওঝা থেকে মুখ ফেরালেই কমবে সাপে কাটা মৃত্যু


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

দেশে প্রতি বছর সাত লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হন। এর মধ্যে মারা যান প্রায় ছয় হাজার। ওঝার অজ্ঞতা ও সাধারণ মানুষের অসচেতনতার কারণে এতো মৃত্যু হয় বলে ন্যাশনাল গাইডলাইন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব সর্প দংশন ও চিকিৎসা দিবস। ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) সহযোগী সংগঠন ট্যাক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ দিবসটি পালন করে আসছে। ট্যাক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের অন্যতম সদস্য বোরহান বিশ্বাস রমন।

তিনি বলেন, এখনো অধিকাংশ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা হাসপাতালে সাপের কাটার চিকিৎসা হয় না। এ কারণে সাপে কামড় দিলেই তারা ওঝার দ্বারস্থ হন। কিন্তু বিষধর সাপ কামড় দিলে ওঝার কিছুই করার থাকে না। তারা শুধুমাত্র লোক দেখানো নাটক করে থাকেন। ওঝাদের থেকে মুখ ফেরালেই সাপে কাটা মৃত্যুর সংখ্যা কমবে বলে জানান তিনি।

রাজশাহী স্নেক রেসকিউ অ্যান্ড কনজারভেশন সেন্টারের এ গবেষক বলেন, দেশে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ওঝাদের চিকিৎসা প্রথা উচ্ছেদ জরুরি। কারণ, গত জুন থেকে অদ্যাবধি (তিন মাসে) এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে মোট ৩৮ জন মানুষ ওঝার কাছে চিকিৎসা নিয়ে মারা গেছেন। এরমধ্যে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে আটজন মারা গেছেন। গত দুই বছরে গোদাগাড়ী উপজেলার নিমতলী গ্রামে ১৩ জন মারা গেছেন। তবে পাঁচজন মেডিকেলে চিকিৎসা নেওয়ায় সুস্থ হয়ে ওঠেন। ওঝার অজ্ঞতা ও সাধারণ মানুষের অসচেতনতায় বছরে ছয় হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সাপে কাটার চিকিৎসা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দিতে চায় না। কারণ এর জন্য প্রশিক্ষিত চিকিৎসক বা নার্স নেই। আবার জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই আইসিইউ সাপোর্টও। ফলে সাপে কাটাদের হাসপাতালে নিতে অনাগ্রহ দেখান।

jagonews24

তিনি বলেন, ২০১৭ সালে এক সম্মেলনে সর্প দংশন ও এর চিকিৎসার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে ডাব্লিউএইচও। প্রত্যেক দেশকে সাপ থেকে অ্যান্টিভেনম তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল ওই সম্মেলনে। বাংলাদেশ থেকে অ্যান্টিভেনম উৎপাদন সম্ভব হলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি বড় সাফল্য আসবে। কারণ ভারত থেকে একডোজ অ্যান্টিভেনম কিনতে খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। কিন্তু এসব অ্যান্টিভেনমের তিন ডোজ একজন সাপের কাটা রোগীকে দিতে হয়। কিন্তু দেশেই যদি উৎপাদন হতো তবে সেটি এক ডোজেই কাজ হতো। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশে রপ্তানি করেও লাভবান হওয়া যেতো।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) তথ্য মতে, বাংলাদেশে ৯২ প্রজাতির বিষধর সাপ রয়েছে। অন্যদিকে রাজশাহীর স্নেক রেসকিউ অ্যান্ড কনজারভেশন সেন্টারের তথ্য মতে, দেশে ১০২ প্রজাতির সাপ রয়েছে। যার মাত্র ২৮ প্রজাতি বিষধর। এর মধ্যে ১৩টি সমুদ্রে এবং বাকি ১৫টি থাকে স্থলে।

মেডিকেল সাইয়েন্স বলছে, স্থলে থাকা ১৫ বিষধর সাপের মধ্যে গোখরা প্রজাতির সাপগুলো ১০০টির মধ্যে গড়ে ৮৫টির কামড়ে দাঁতের বিষ ঢালে না। মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায় এটিকে ‘ড্রাইবাইট’ বলা হয়। এতে মৃত্যুর কোনো ঝুঁকি নেই। কিন্তু ওঝারা এ ড্রাইবাইটের সুযোগ নিয়ে কৃতিত্ব জাহির করে। এতে ওঝাদের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষ ভুল ধারণায় আবদ্ধ হয়ে পড়ে।

কিন্তু গড়ে ১৫টি ছোবলের মধ্যে থাকে মৃত্যুঝুঁকি। এছাড়া রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া, কমন ক্রেইট বা কালাচ সাপে ড্রাইবাইটের প্রবণতা নেই বললেই চলে। এ ধরনের সাপের কামড়ের পর ওঝাদের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়ে নিশ্চিত মৃত্যু হয়েছে অনেকের।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবু শাহিন বলেন, সাপে কামড়ানোর পরে প্রথম দুই ঘণ্টা রোগীর জন্য অন্ত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি সাপে কামড়ানো ব্যক্তি দুই ঘণ্টার মধ্যে মেডিকেলে পৌঁছাতে পারে এবং চিকিৎসা নেয় তাহলে মৃত্যুর সম্ভাবনা শূন্যে ঠেকে।

তিনি আরও বলেন, রামেকে ৯৫ শতাংশ রোগীই ওঝার কাছ থেকে আসে। এতে দুটি সমস্যা হয়-প্রথমত তারা সময় নষ্ট করে, দ্বিতীয়ত ওঝার ভুল চিকিৎসা রোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. আবু রেজা তুহিন বলেন, সাপে কাটার ঘটনা বেশি ঘটে গ্রামীণ জনপদে। এমনিতেই দেশের সাধারণ মানুষ কুসংস্কারাচ্ছন্ন। উপরন্তু শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় চিন্তাধারাও সেকেলে। বেশিরভাগ মানুষ জানেই না, সাপে কাটার প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়টি। তাদের ধারণা মেডিকেলে সাপে কাটার চিকিৎসা নেই। এ অজ্ঞতার বশবর্তী হয়ে তারা ‘ট্র্যাডিশনাল পদ্ধতি’প্রয়োগ করে অর্থাৎ ওঝার দ্বারস্থ হন। আর এতেই ঘটে মৃত্যু। তাই প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধি।