লাইফ স্টাইল

করোনাকালে বাড়তি আতঙ্ক সৃষ্টি করছে নিউমোনিয়া

(Last Updated On: অক্টোবর ১৬, ২০২১)

চলমান মহামারি থেকে বাঁচার জন্য সারা বিশ্ব প্রাণপণ লড়াই করে চলেছে। তবে প্রকৃতি যেন আমাদের প্রতিনিয়ত আরও কঠিনতর পরীক্ষার সম্মুখীন করতে সংকল্পবদ্ধ। প্রতিনিয়ত করোনাভাইরাসের পাশাপাশি নিউমোনিয়ার ভয়াবহতা সাধারণ মানুষকে করছে নাস্তানাবুদ। নিউমোনিয়া হলে আমাদের ফুসফুসের বাতাস ভর্তি পাউচে পুঁজ বা ফ্লুয়িড জমা হয়, তখন ফুসফুস স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম করতে পারে না। অনেক মানুষেরই এই বিষয়ে ধারণা কম, ফলে সময় থাকতে এর সঠিক নিরাময় না হওয়ায় এটি অনেকেরই মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।

করোনার পাশাপাশি নিউমোনিয়া আরেক ভয়াবহ রূপ নিয়ে প্রবেশ করেছে ধরণীর বুকে। বাতাসে বিস্তৃত বিভিন্ন অণুজীব যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাকের আক্রমণে মূলত নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুরা বাতাসের সঙ্গে সেবিত ব্যাকটেরিয়া থেকেই সবচেয়ে বেশি এ রোগে আক্রান্ত হয়। ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়ার সবচেয়ে পরিচিত ধরণকে বলা হয় নিউমোকক্কাল নিউমোনিয়া। নিউমোনিয়ার এ ধরণেই মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। ভাইরাসের আক্রমণ থেকেও নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। শ্বাসযন্ত্রের উপরাংশ এরূপ নিউমোনিয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু ভাইরাস থেকে এ রোগ হতে পারে। ছত্রাকজনিত নিউমোনিয়ার নাম হলো নিউমোসিস্টিস নিউমোনিয়া। এ নিউমোনিয়া দূষিত মাটি এবং পাখির বিষ্ঠায় উপস্থিত একটি নির্দিষ্ট ছত্রাকের কারণে হয়। যেসকল মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তারা সবচেয়ে বেশি এরূপ নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়।

নিউমোনিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ হলো জ্বর এবং তার সঙ্গে কাশি ও শ্বাসকষ্ট। এ রোগের সংক্রমণ বাড়ার সাথে সাথে শ্বাসকষ্টও গুরুতর হতে থাকে। আক্রান্তদের অনেকেরই শ্বাস নেওয়ার সময়ে বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। নিউমোনিয়া শীত বাড়ার সাথে সাথে বিস্তার লাভ করে। মূলত চার বছর বা তার কম বয়সী শিশু এবং ৬০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের ব্যক্তিদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অধিকতর হয়। নিউমোনিয়া কমাতে সাধারণত দুই-তিন সপ্তাহ সময় লেগে যায়। তবে এর থেকে বেশিও সময় লাগতে পারে। শুধুমাত্র শীতকালেই এই অসুখ হবে এমন ধারণা সঠিক নয়। আজকাল বর্ষাকালেও এ রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্তদের শারীরিক জটিলতা বাড়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। এ রোগ হলে রোগীকে প্রয়োজনমতো পানি খাওয়ানো উচিত কারণ পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন নিউমোনিয়া আক্রান্তের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া রোগীর সম্পূর্ণ বিশ্রাম এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত অবশ্য প্রয়োজন। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে, নিয়মমতো ওষুধ খেয়ে নিউমোনিয়া নিরাময় সম্ভব। তবে অবস্থা যদি গুরুতর হয় তবে রোগীকে হসপিটালে ভর্তি করতে হবে ও প্রয়োজনে অন্ত্রে ইনজেকশন, শ্বাস-প্রশ্বাসের কৃত্রিম ব্যবস্থা গ্রহণ অথবা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিত্সা নেওয়া যেতে পারে। যারা আগে থেকেই ফুসফুসে কোনো সমস্যায় ভুগছেন, তাদের সংক্রমণ রোধে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

বর্তমানে কোভিডজনিত ভাইরাল নিউমোনিয়া সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসের কারণে যে নিউমোনিয়া হয়ে থাকে, সেটাই কোভিডজনিত নিউমোনিয়া। এই নিউমোনিয়া ফুসফুসকে মারাত্মকভাবে সংক্রমিত করে। সাধারণ নিউমোনিয়ার সঙ্গে কোভিডজনিত নিউমোনিয়ার কিছু পার্থক্য রয়েছে। নিউমোনিয়া সাধারণত ফুসফুসের একটা অংশকে সংক্রমিত করে। কিন্তু কোভিডের মতো যে কোনো ভাইরাল নিউমোনিয়ায় ফুসফুসের নানা জায়গায়, এমনকি একই সঙ্গে দুটি ফুসফুসের একাধিক অংশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে সঠিক চিকিৎসা, সহায়ক খাদ্য গ্রহণ এবং রোগীর সঠিক যত্ন নিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এবং নিউমোনিয়ার ব্যাপকভাবে প্রকোপ চলছে। যেহেতু সিংহভাগ মানুষ কোভিড-১৯ নিয়ে বেশি আতংকিত, তাই নিউমোনিয়া হলেও অনেকে তা করোনা মনে করে ঘরোয়াভাবেই চিকিৎসা শুরু করে দিচ্ছে। ফলে রোগীদের শারীরিক অবস্থা হয়ে পড়ছে আরও ভয়াবহ। এজন্যে লক্ষণ দেখা দিলেই অতিসত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোগ নিরাময় করা উচিত। অসংখ্য বাংলাদেশি প্রতি বছর সুচিকিৎসার জন্য ভারতীয় হাসপাতালগুলোতে পাড়ি জমান। ইয়াশোদা হসপিটাল হায়দ্রাবাদ-ও এর ব্যতিক্রম নয়। ইয়াশোদা গ্রুপ-এর হাসপাতালগুলো দীর্ঘ ৩ দশক ধরে জনগণকে উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে আসছে। ভারতের হায়দ্রাবাদ-এ অবস্থিত এই হাসপাতালে নিউমোনিয়া রোগীদের সর্বাত্মক চিকিৎসার সুব্যবস্থা রয়েছে।

বিশেষ ভূমিকায়-

ডা. ভিসওয়াসভারান বালাসুব্রামানিয়ান

কনসালটেন্ট ইন্টারভেনশনাল পালমোনোলজি এবং স্লিপ মেডিসিন

ইয়াশোদা হসপিটালস, হায়দ্রাবাদ