স্বাস্থ্য

ছোটবেলায় যা খাবেন, তার প্রভাব থাকবে আজীবন

(Last Updated On: মার্চ ১, ২০২১)

কমবয়সি ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ছোটবেলার অপুষ্টিকর খাবারের প্রভাব বড় বয়সেও তাদের পিছু ছাড়েনি। সম্প্রতি ইঁদুরের উপর করা এক সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, পরবর্তী জীবনে আপনি যদি পুষ্টিকর খাবারও খান, তাহলেও ছোটবেলায় অতিরিক্ত পরিমাণ ফ্যাট ও শর্করাযুক্ত খাবার আপনার মাইক্রোবায়োমকে সারা জীবনের মতো নষ্ট করে দিতে পারে।

কমবয়সে অপুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যেস আপনার পরিপাকতন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ এবং তাদের বৈচিত্র কমিয়ে দিতে পারে, সম্প্রতি ইউসি রিভারসাইডের গবেষকদের ইঁদুরের উপর করা এক সমীক্ষায় উঠে এল এমনই তথ্য।

“আমরা ইঁদুরের উপর পরীক্ষাটি করেছিলাম। কিন্তু যে-ফল পেয়েছি, সেটি উচ্চমাত্রায় ফ্যাট এবং শর্করাযুক্ত পাশ্চাত্য খাবারে অভ্যস্ত বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। এবং বয়ঃসন্ধির প্রায় ছ’বছর পরেও তাদের পরিপাকতন্ত্রের থাকা মাইক্রোবায়োমের উপর তার ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যাচ্ছে,” জানাচ্ছেন ইউসিআর-এর বিবর্তনবাদী শরীরবিজ্ঞানী থিয়োডোর গারল্যান্ড।

সম্প্রতি সমীক্ষাটির বিশদ বিবরণসহ একটি গবেষণাপত্র ‘জার্নাল অফ এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজি’তে প্রকাশিত হয়েছে।

ছোটবেলার খাবার ও প্রতিরোধ ক্ষমতা 

মানুষের শরীর বা যে-কোনও প্রাণীদেহের মধ্যে কিছু ব্যাকটেরিয়ার পাশাপাশি যে-সমস্ত ছত্রাক, পরজীবী এবং ভাইরাস বসবাস করে, তাদের একত্রে মাইক্রোবায়োম বলা হয়। এইসমস্ত অণুজীব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষুদ্রান্ত্রে থাকে, এবং নানা কাজে সহায়তা করে। এগুলি প্রাণীদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এবং খাবারের পরিপাকে সাহায্য করে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন সংশ্লেষ ঘটায়।

একজন সুস্থ প্রাণীদেহে খারাপ প্যাথোজেন এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া সমূহের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ, শারীরিক অসুস্থতা, অপুষ্টিকর খাওয়াদাওয়া ইত্যাদি কোনও কারণে যদি সেই নষ্ট হয়, তাহলে শরীরে নানারকম রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

এই সমীক্ষাটিতে গারল্যান্ডের টিম ইঁদুরদের চারটি ভাগে ভাগ করে তাদের উপর মাইক্রোবায়োমের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেছেনঃ এক্ষেত্রে অর্ধেক সংখ্যক ইঁদুরকে ‘পুষ্টিকর’ খাবার দেওয়া হয়, অর্ধেককে অপেক্ষাকৃত কম পুষ্টিকর ‘পাশ্চাত্য ডায়েট’ দেওয়া হয়, অর্ধেককে ব্যায়ামের জন্য একটি চলমান চাকা দেওয়া হয়, এবং বাকি অর্ধেককে এমনিই রাখা হয়।

এইভাবে তিনসপ্তাহ রাখার পর, সমস্ত ইঁদুরকেই তাদের স্বাভাবিক খাদ্য দেওয়া শুরু হয় এবং যেভাবে তাদের গবেষণাগারে রাখা হয়, কোনওরকম হাত-পা সঞ্চালনের সুযোগ ছাড়াই, সেভাবেই রাখা হয়। ১৪ সপ্তাহের মাথায়, গবেষকরা এই ইঁদুরদের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার বৈচিত্র এবং সংখ্যা পর্যবেক্ষণ করেন।

দেখা যায় যে, যে ইঁদুরদের দলকে পাশ্চাত্য খাবার দেওয়া হয়েছিল, তাদের ক্ষেত্রে দেহে মুরিব্যাকুলাম ইনটেস্টিনাল নামক ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ অপেক্ষাকৃতভাবে হ্রাস পেয়েছে।

স্বাভাবিক খাবার ও ব্যায়াম 

গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে যে, ইঁদুররা কী পরিমাণ হাত-পা সঞ্চালন বা ব্যায়ামের সুযোগ পেয়েছে, তার উপরেও পরিপাকতন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়া নির্ভরশীল। যে-সমস্ত ইঁদুরের স্বাভাবিক খাবার খেয়েছে, এবং চলমান চাকা পেয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে মুরিব্যাকুলাম ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনই উচ্চমাত্রার ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া এবং কোনওরকম ব্যায়ামের সুযোগ না পাওয়া ইঁদুরদের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।

গবেষকদের মতে, এইধরনের ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতি এবং এই ব্যাকটেরিয়া পরিবার, তাদের ‘হোস্ট’ প্রাণীর মধ্যে থাকা এনার্জিকেও প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া এইসমস্ত ব্যাকটেরিয়ার আর কী কী কার্যকারিতা রয়েছে, সেই নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।

খেয়াল করার মতো আর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব হল, অপর একদল গবেষকদের করা আর একটি সমীক্ষায় পাঁচসপ্তাহ ধরে ট্রেডমিল ট্রেনিংয়ের পর এর কাছাকাছি প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে বোঝা যাচ্ছে যে, শুধুমাত্র ব্যায়াম করেই এইধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি বাড়ানো যায়।

ডায়েটের প্রভাব 

সামগ্রিকভাবে, ইউসিআর-এর গবেষকদের সমীক্ষা অনুযায়ী, মাইক্রোবায়োমের ক্ষেত্রে ছোটবেলায় ব্যায়ামের চেয়েও পাশ্চাত্য ডায়েটের প্রভাব আরও দীর্ঘস্থায়ী হয়।

গারল্যান্ডের টিম এই সমীক্ষাটিকে আরও কয়েকবার করতে চান, এবং ইঁদুরের ক্ষেত্রে এই মাইক্রোবায়োমের বদল প্রথম কখন হচ্ছে, এবং সেটি তাদের পরবর্তী জীবনে কীভাবে থাকছে, সেটি বোঝার জন্য সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে আরও কিছু অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ করতে চান।

তবে গবেষকদের মতে, এই মাইক্রোবায়োম পরিবর্তনের প্রভাব প্রথম কখন দেখা যাচ্ছে, তার চেয়েও জরুরি যে, ডায়েট বদলের দীর্ঘসময় পরেও এবং তাকে পুনরায় বদল করার পরেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।