জাতীয়

পিটিয়ে বাদলের ‘কান ছিঁড়ে’ দিল কাদের মির্জার লোকেরা


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। এতে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম ও কানের একটি অংশ ছিঁড়ে গেছে। ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাটের মেয়র আবদুল কাদের মির্জার অনুসারীরা এ হামলা চালান বলে অভিযোগ। গতকাল শনিবার সকাল ৯টার দিকে বসুরহাট বাজারের ইসলামী ব্যাংকের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় বাদলের ব্যক্তিগত গাড়িটিও ভাঙচুর করা হয়।

ঘটনার প্রতিবাদে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকা হয়েছে কোম্পানীগঞ্জে। গতকাল দুপুরে ফেসবুক লাইভে এসে এ ঘোষণা দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের মুখপাত্র ও কাদের মির্জার ভাগনে মাহবুবুর রহমান মঞ্জু। হরতাল বাস্তবায়নে তিনি নেতাকর্মীদের মাঠে নামার আহ্বান

জানান। সেই সঙ্গে প্রতিটি বাজারের দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়ার জন্যও সমর্থকদের নির্দেশ দেন। মঞ্জু বলেন, ‘মিজানুর রহমান বাদলের ওপর হামলার প্রতিবাদে এখন থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা হরতাল কর্মসূচি পালন করা হবে। এ সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ঘোষণা করা হবে আরও কঠোর কর্মসূচি।

বাদলের সমর্থকদের অভিযোগ, সকালে মেয়র কাদের মির্জা তার ৩০-৩৫ অনুসারী নিয়ে বসুরহাট বাজারে মহড়া দিচ্ছিলেন। এ সময় ব্যক্তিগত গাড়িতে করে সাবেক ছাত্রনেতা হাসিব আহসান আলালকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন বাদল। গাড়িটি বসুরহাট ইসলামী ব্যাংকের সামনে দাঁড়ালে কাদের মির্জার নির্দেশে তার অনুসারীরা হামলা চালায়। এ সময় বাদলের শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম ও কানের একটি অংশ ছিঁড়ে যায়। পরে একজন অটোরিকশাচালক তাকে উদ্ধার করে প্রথমে থানায় ও পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাদলকে পাঠানো হয় ঢাকায়। বর্তমানে তিনি ঢাকায় ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসাধীন।

কোম্পানীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, আহত বাদলকে উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নিয়ে আসা হয়। তিনি পুলিশকে জানান, মেয়র আবদুল কাদের মির্জার নির্দেশে তার অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছে। তবে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

এদিকে হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলার পেশকারহাট রাস্তার মাথা, টেকের বাজার, চাপরাশিরহাট, মুছাপুর, রামপুর, চরপার্বতী, চরহাজারী, সিরাজপুর, চরএলাহী ও চরফকিরা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন বাদলের সমর্থকরা। গাছের গুঁড়ি ও টায়ারে আগুন দিয়ে বিভিন্ন সড়কে আটকে দেওয়া হয় যান চলাচল। এর মধ্যে চরকাঁকড়া ইউনিয়নের টেকের বাজারে হরতালের সমর্থনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। তাতে সংঘর্ষ বেধে যায়। বিক্ষোভকারীদের ইট-পাটকেলের আঘাতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশও তখন শর্টগানের ৩৩ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ সময় বাবা-ছেলেসহ বাদলের ছয় অনুসারী গুলিবিদ্ধ হন বলে জানা গেছে। আহতরা হচ্ছেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফখরুল ইসলাম সবুজ (৫৫), তার ছেলে তরিকুল ইসলাম চয়ন (১৮) হৃদয় (২২) ও ফারুক (৩৫)। অপর দুজনের নাম পরিচয় অবশ্য এখনো জানা যায়নি। গুরুতর আহত চয়নকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার চোখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুলি লেগেছে। অপরদিকে বিক্ষোভকারীদের ইট-পাাটকেলের আঘাতে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ, কনস্টেবল আনিছুল মোস্তফা, অংকন ও মুরাদ আহত হন। এ ঘটনার পর উপজেলায় অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। নোয়াখালী পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলমগীর হোসেন জানান, পিকেটিংকারীদের ব্যারিকেড ভাঙতে গেলে পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে ৩-৪ পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে শর্টগানের গুলি চালিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

মিজানুর রহমান বাদলের ওপর হামলায় নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে শনিবার দুপুরে লাইভে এসে তিনি বলেন, ‘আমি পৌরসভা অফিসে এসে জানতে পারি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।’ তিনি দাবি করেন, ‘বাদলের অনুসারীদের মধ্যেও ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে দু’গ্রুপ হয়ে গেছে। এটিও একটি কারণ, আবার কয়েকদিন আগে পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডে তার অনুসারীদের মিছিলে ১১ জন গুলিবিদ্ধ হওয়ায় আহতদের আত্মীয়স্বজনেরা ক্ষুব্ধ হয়ে বাদলের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটাতে পারে। একটি হামলার বিচার না হলে আরেকটি হামলার ঘটনা ঘটাই স্বাভাবিক।’

কাদের মির্জা আরও দাবি করেন, ‘এমপি একরামের নেতৃত্বে কবিরহাটে বৈঠক করে আজ (শনিবার) অথবা কাল (রবিবার) আমার বাড়িতে হামলার পরিকল্পনা ছিল। আজ তারা মিটিং শেষে একরাম ভূঞারহাট দিয়ে ফেনীর নিজাম হাজারীর কাছে অথবা চট্টগ্রাম যান এবং বাদল ও আলাল আসে বসুরহাট। পরে আলমগীর, জিসানসহ আগের আহত ১১ জনের আত্মীয়স্বজনরা খবর পেয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়।’ নোয়াখালী আওয়ামী লীগে আলোচিত এ নেতা আবারও কোম্পানীগঞ্জে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। এ ছাড়া অস্থিতিশীল কোম্পানীগঞ্জে শান্তি ফিরবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে মাসদুয়েক আগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, সাধারণ সম্পাদক নূর নবী চৌধুরীর ওপরও হামলা চালানো হয়। নূর নবী চৌধুরী এখনো ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ওই হামলাগুলোর জন্যও কাদের মির্জা ও তার সহযোগীদের দায়ী করেছিল দলের একটি পক্ষ।