প্রধান পাতা

পুলিশের জালে সেই টিকটক সজীব


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

অবশেষে পল্লবী থানা পুলিশের জালে ধরা পড়েছে ‘টিকটক সজীব’ নামে পরিচিত সেই যুবক। গতকাল সোমবার রাতে গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানাধীন ধন্যপুর গ্রাম থেকে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ভাতিজার বার্থডে পার্টিতে নিমন্ত্রণের কথা বলে এক তরুণীকে একটি বাসায় নিয়ে ধর্ষণের পর সেই দৃশ্য গোপনে ভিডিও করেছিলেন টিকটক সজীব। এর পর তা ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে দিনের পর দিন ওই তরুণীকে ধর্ষণ করার দায়ে অভিযুক্ত এ যুবকের প্রকৃত নাম মাহাবুব আলম ওরফে এসএম সজীব।

সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট রাতে রাজধানীর পল্লবীর মুসলিমবাজারের ৪৬/৪৭ নম্বর ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে পাশবিক নির্যাতনের পর পল্লবী থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী তরুণী শাপলা (ছদ্মনাম)। কিন্তু এর পর ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও সজীব ও তার সহযোগীদের কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। গত শনিবার ‘পুলিশের উদাসীনতা পল্লবীকে নিয়ে; ভেঙে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয় আমাদের সময়ে। ভুক্তভোগী শাপলাকে দিনের পর দিন হুমকি দিয়ে ধর্ষণ ও নির্যাতনের বিষয়টি সবিস্তারে তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে। এর পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

ভুক্তভোগী শাপলা জানান, তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা। তিনি পল্লবীর সেকশন ১১-এর ই-ব্লকের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। ২ বছর আগে মটস পলিটেকনিক ট্রেনিং সেন্টারে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করার সুবাদে টিকটক সজীবের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ভাবির ছেলের জন্মদিনের দাওয়াতের কথা বলে ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে পল্লবীর সেকশন-১২, মুসলিমবাজার ব্লক-এ ২ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাসার ষষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটে তাকে নিয়ে যায় সজীব ও তার সহযোগী সাদিক। সেখানে ছিলেন সজীবের ভাবি পরিচয়দানকারী অচেনা এক নারী। শাপলা বলেন, ফ্ল্যাটে ঢুকতেই দরজা বন্ধ করে দেয় তারা। একপর্যায়ে সজীব তাকে বাজে প্রস্তাব দিলে তিনি অসম্মতি জানান। শেষ পর্যন্ত সেদিন তাকে পৈশাচিক কায়দায় একাধিকবার ধর্ষণ করে সজীব। শুধু তাই নয়। গোপনে সেই দৃশ্য ধারণও করে রাখে সজীব। পরবর্তী সময়ে সজীব শাপলাকে এই বলে হুমকি দেয় যে, ধর্ষণকা-ের কথা কাউকে বললে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ভিডিও ছেড়ে দেওয়া হবে। এর পর ধারণকৃত সেই ভিডিও ইন্টারনেটসহ শাপলার আত্মীয়স্বজনের কাছে প্রকাশ করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এক বছর ধরে বিভিন্ন সময় শাপলাকে ভোগ করে সজীব। একপর্যায়ে শাপলা বিগড়ে গেলে সজীব সেই ভিডিও শাপলার স্বজনদের ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে ছড়িয়ে দেয়। অগত্যা সমাজে সম্মান বাঁচাতে সজীবের সঙ্গে ফের শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য হন শাপলা। এ সময়কালে দুজনের অন্তরঙ্গ কিছু ছবি তুলতেও বাধ্য করা হয় শাপলাকে।

সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট রাত সাড়ে আটটার দিকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে মুসলিমবাজারের ৪৬/৪৭ নম্বর ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে শাপলাকে ফের ধর্ষণ করে সজীব। অত্যাচারে অতিষ্ঠ শাপলা একপর্যায়ে ফের বাধা দিলে ধর্ষণের সেই ভিডিও ছেড়ে দেওয়া হয় ইন্টারনেটে। শেষ পর্যন্ত শাপলা বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানান এবং তাদের সহায়তায় গত ১৩ অক্টোবর পল্লবী থানায় মামলা (নম্বর-৩৭) করেন।

শাপলা বলেন, মামলা হওয়ার পর ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও ঘটনায় জড়িত একজনকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। অথচ সজীব বিভিন্ন মাধ্যমে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। গত সোমবারও সজীব হুমকি দিয়ে বলেছে, মামলা না তুললে শাপলার পরিণতি হবে ভয়াবহ। সজীবের অন্যায়ের বিরুদ্ধে থানা পুলিশের সাহায্য না পেয়ে একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানান শাপলা। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত আত্মঘাতী হতে পারেননি। সর্বশেষ, গতকাল রাতে টিকটক সজীব গ্রেপ্তার হওয়ার খবরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শাপলা বলেন, আর কোনো মেয়ের যেন এমন সর্বনাশ না হয়, সে লক্ষ্যে টিকটক সজীব ও তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময় সজীবের সহযোগীদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছিল। শাপলার দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্লবী থানার এসআই মো. সজীব খান আমাদের সময়কে জানান, গোপন তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে সজীবকে তার গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তার সহযোগীদের আইনের আওতায় আনা হবে।