জাতীয়

‘মামুনুলের শ্বশুরের আপন ভায়রা ভাই বঙ্গবন্ধুর খুনি ডালিম’


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

হেফাজতে ইসলামের আলোচিত নেতা মাওলানা মামুনুল হকের প্রথম স্ত্রীর বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি শরিফুল হক ডালিম ওরফে মেজর ডালিমের আপন ভায়রা ভাই।

রিমান্ডে থাকা মামুনুল হকের বিষয়ে তথ্য তুলে ধরতে রোববার (২৫ এপ্রিল) বিকালে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. হারুন-অর-রশীদ।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বলেন, আমরা জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার কানেকশন খোঁজার চেষ্টা করেছি। একটা জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সরাসরি তিনি জড়িত। তাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ মেইন্টেন করতেন তার বোনজামাই নেয়ামতউল্লাহ। বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর ডালিম হচ্ছেন মামুনুল হকের প্রথম স্ত্রীর বাবার ভায়রা ভাই।

বঙ্গবন্ধুর খুনির পরিবারের সঙ্গে মামুনুল হকের শ্বশুর পক্ষের সম্পর্কের বিষটি নিশ্চিত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসি হারুন বলেন, আমরা তথ্য পেয়েছি। মামুনুল হককে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, আমি জানি না। তবে পুলিশ তথ্য পেয়েছে।

তেজগাঁও জোনের ডিসি আরো বলেন, আমরা মাত্র সাত দিন সময় পেয়েছি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য। তার যে বক্তব্যগুলো এর প্রত্যেকটি আমরা পড়েছি ও শুনেছি। এই সকল বক্তব্যের সঠিক কোনো জবাব দিতে পারেননি।

২০২০ সালে মোহাম্মদপুরে দায়ের হওয়া একটি মামলার সাত নম্বর আসামি মামুনুল হক। তাকে গ্রেপ্তার করা হলেও তার ভাই মাহফুজুল হক একই মামলার ৬ নম্বর আসামি, তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়নি, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের গ্রেপ্তার করতে। আমরা বলেছি অবশ্যই যেন ব্যবস্থা নেয় এবং সে (তদন্ত কর্মকর্তা) ব্যবস্থা নিচ্ছে। যারা প্রকৃত অপরাধী যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

যে মামলায় মামুনুল হক গ্রেপ্তার হয়েছেন একই মামলার আসামি হয়ে তার ভাই কীভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসি বলেন, ‘তিনি কারো সঙ্গে দেখা করেছেন কি না আমাদের জানা নেই। তবে আমরা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলেছি, যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা প্রত্যেকে গ্রেপ্তার করা হবে।

তিনি বলেন, পাকিস্তানে ৪০ দিন অবস্থান করেন মামুনুল হক। সেখান থেকে জঙ্গি ও উগ্রবাদী মতাদর্শ নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি। মামুনুল হক হেফাজতকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে কওমি মাদরাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফয়দা নেয়ার পায়তারা করছিল। রিমান্ডে শাপলা চত্বরে যাওয়া থেকে শুরু করে অনেক কথার বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।

ডিসি হারুন বলেন, মামুনুলের আপন ভগ্নিপতি মুফতি নেয়ামতউল্লাহ দীর্ঘদিন পাকিস্তানে ছিলেন। সেখানে ১৫/২০ বছর সেখানে তিনি একটি মাদ্রাসায় ছিলেন। পাকিস্তান থেকে ফিরে নেয়ামমউল্লাহ মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। পরে তিনি মামুনুলের বোনকে বিয়ে করেন। ২০০৪ সালে ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন নেয়ামতউল্লার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার পর নেয়ামতউল্লাহ গ্রেফতারও হয়েছিলেন। মামুনুলের হকে বাবা আল্লামা আজিজুল হক (নেয়ামতউল্লার শ্বশুর) ছিলেন চারদলীয় নেতা। তার আনুকূল্যে তখন নেয়ামতউল্লাহ ছাড়া পান। তাজউদ্দিনের সঙ্গেও মামুনুলের যোগাযোগ আছে।

পরের বছর নেয়ামউল্লাহর সঙ্গে মামুনুল পাকিস্তানে গিয়ে ৪৫ দিন অবস্থান করে জানিয়ে ডিসি হারুন অর রশিদ বলেন, পাকিস্তানের একটি ধর্মীয় সংগঠনকে মডেল হিসেবে নিয়ে পাকিস্তানে দীর্ঘদিন তারা অবস্থান করেন। মূলত নেয়ামউল্লাহ দীর্ঘদিন পাকিস্তানে থাকার কারণে সেই সংগঠনের সঙ্গে লিয়াজো ছিল। তিনিই মামুনুলকে ওই সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। ওই সংগঠনের মডেলে তিনি বাংলাদেশে মওদুদী, সালাফি, হানাফি, কওমী, দেওবন্দী, জামায়াতসহ সকল মতাদর্শের মানুষকে একত্রিত করার চেষ্টা শুরু করেন। লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরোধিতাকারী সংস্থার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ শুরু করেন। কওমি মাদরাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে সরকার উৎখাতের ছক এঁকেছিল হেফাজত নেতা মামুনুল হক।

এর আগে ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। গ্রেফতারের পরের দিন মামুনুলকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।