জাতীয়

মুজিববর্ষে উদ্বোধন হবে ১৭০ মসজিদ


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ‘মুজিববর্ষে’ গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে ঘর ও জমি উপহারের মতো এবার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য আরেকটি বড় উপহার দিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারা দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ গড়ে তুলছে সরকার। এরমধ্যে মুজিববর্ষেই ১৭০টি মসজিদ উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে মসজিদের ৬০-৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে এ মসজিদগুলো নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

এর প্রাথমিক পরিকল্পনা করেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার গঠনের পর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরেকবার ইতিহাসের অংশ হতে যাচ্ছেন। দেশে তো বটেই, বিশ্বের ইতিহাসেও একসঙ্গে এত মসজিদ নির্মাণের ঘটনা এটিই প্রথম। আবার মুসলিম বিশ্বের কোনো দেশের সরকারপ্রধানও প্রথমবারের মতো এতগুলো মসজিদ একসঙ্গে নির্মাণ করছেন। এর আগে ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে একসঙ্গে প্রায় ৭০ হাজার ঘর ও জমি উপহার দিয়ে পৃথিবীতে আরেকটি নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। গত ২৩ জানুয়ারি এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একটি করে উন্নতমানের মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ছিল। সেই প্রতিশ্রুতির আলোকে আট হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রকল্পটি অনুমোদিত হলেও সৌদি আরবের অর্থায়ন নিয়ে নানা জটিলতার কারণে প্রকল্পটি বাধাগ্রস্ত হয়। ২০১৮ সালে সরকারি অর্থায়ন ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সংশোধনসহ এর কাজও শুরু হয়। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ রয়েছে। তিন ক্যাটাগরিতে মডেল মসজিদগুলো নির্মিত হচ্ছে।

‘এ’ ক্যাটাগরিতে ৬৪টি জেলা শহর ও অন্য পাঁচটি সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬৯টি চারতলা মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। এগুলোর আয়তন হবে দুই লাখ ৮১ হাজার ৫৮৪ বর্গমিটার। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে তিনতলাবিশিষ্ট ৪৭৫টি মডেল মসজিদ নির্মাণ হবে উপজেলা পর্যায়ে, যেগুলোর আয়তন হবে এক লাখ ৬৪ হাজার ৭৪২ বর্গমিটার। এ ছাড়া উপকূলীয় এলাকায় ৬১ হাজার ২৫ বর্গমিটার আয়তনের এবং চারতলাবিশিষ্ট ‘সি’ ক্যাটাগরির মডেল মসজিদ নির্মিত হবে ১৬টি। উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোতে নিচতলা ফাঁকা থাকবে, যা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা হবে। চারতলা মসজিদগুলোতে একসঙ্গে এক হাজার ২০০ এবং তিনতলা মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ৯০০ মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে। নারীদের জন্য আলাদা নামাজ পড়ার ব্যবস্থাও থাকছে। ৫৬০টি মডেল মসজিদে একসঙ্গে প্রায় পাঁচ লাখ পুরুষ ও ৩২ হাজার নারী নামাজ আদায় করতে পারবেন। আর ৫৬ হাজার মুসল্লি সব সময় দোয়া-মোনাজাতসহ তসবিহ পড়তে পারবেন।

নামাজ আদায়ের পাশাপাশি আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত মসজিদগুলোতে একটি করে ইসলামিক লাইব্রেরি ও বই বিক্রয় কেন্দ্র, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ইসলামী গবেষণা কেন্দ্র, পুরুষ ও নারীদের পৃথক ওজুখানা, হেফজখানা, মরদেহ গোসলখানা, হজ নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, অটিজম কর্নার, শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আবাসন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অতিথিশালা এবং গাড়ি পার্কিংসহ ১৪ ধরনের সুবিধা থাকবে। লাইব্রেরিগুলোতে একসঙ্গে ৩৪ হাজার পাঠক পড়ার সুযোগ পাবেন। এখানে ছয় হাজার ৮০০ জনের ইসলামীবিষয়ক গবেষণা, প্রতি বছর ১৪ হাজার হাফেজ তৈরি, এক লাখ ৬৮ হাজার শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা, দুই হাজার ২৪০ জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসন ব্যবস্থা, হজ পালনের জন্য ডিজিটাল নিবন্ধন এবং দাওয়া কার্যক্রম ছাড়াও মাদক, সন্ত্রাস, যৌতুক, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ বিভিন্ন সামাজিক ব্যাধি রোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সব মিলিয়ে ইসলামী মূল্যবোধ বিনির্মাণে পূর্ণাঙ্গ ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে উঠবে মসজিদ।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, একটি দেশে একসঙ্গে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণের ঘটনাটি অনন্য সাধারণ ও যুগান্তকারী একটি ঘটনা। পৃথিবীর ইতিহাসে এমনটা এর আগে কোথাও ঘটেছে কিনা জানা নেই। আর মডেল মসজিদগুলোও এক-একটি পূর্ণাঙ্গ মসজিদ কমপ্লেক্স হবে। যেখানে নামাজ পড়ার পাশাপাশি ইসলামিক জ্ঞানচর্চা ও জ্ঞান অর্জন, গবেষণা, প্রশিক্ষণসহ সব সুযোগ-সুবিধাই থাকবে।

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী নজিবর রহমান বলেন, ৫৬০টি মডেল মসজিদের মধ্যে ১৭০টির উদ্বোধন মুজিববর্ষের মধ্যেই করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৩০ এপ্রিলের পর যে কোনো দিন প্রথম পর্যায়ের ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করবেন। আরও ১২০টি মসজিদের মধ্যে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ৬০টি এবং মুজিববর্ষের শেষভাগে ডিসেম্বরে বাকি ৬০টির উদ্বোধন করা হবে। বাকি মসজিদগুলোর কাজ আগামী দু’বছরের মধ্যেই শেষ করা যাবে।

তিনি জানান, পদ্মা সেতুর পর এই প্রকল্পটি সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় বরাদ্দের প্রকল্প। যার পরিমাণ ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত প্রকল্পে ভৌত অগ্রগতি ৩২ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ১২ শতাংশ। তবে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ে আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

রংপুর ও সিরাজগঞ্জের কয়েকটি এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থানের মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে, যা চলতি ফেব্রুয়ারি বা মার্চের মধ্যে শেষ হবে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলা শহরের খান সাহেবের মাঠে নির্মাণাধীন মসজিদের কাজ এ মাসের মধ্যে শেষ হবে। মসজিদটির ভেতরের কাজ শেষ হয়ে এখন বাইরের কাজ চলছে। এরপর সৌন্দর্যবর্ধন ও রঙের কাজ হবে। রংপুর শহরের মডেল মসজিদসহ এ বিভাগের দিনাজপুরের খানসামা ও বিরল; লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, পঞ্চগড় সদর ও দেবীগঞ্জ; রংপুরের মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ ও বদরগঞ্জ এবং ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার মডেল মসজিদের কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহমেদ বলেন, সিরাজগঞ্জে মোট ১০টি মডেল মসজিদের মধ্যে জেলা সদর ও একটি উপজেলায় মসজিদের নির্মাণকাজ আগামী মার্চের শুরুতে শেষ হবে। একটি আধুনিক ইসলামিক সেন্টার বলতে যা বোঝায় তার সবই থাকছে এসব মসজিদে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন রংপুর কার্যালয়ের মাস্টার ট্রেইনার মাওলানা দেলোয়ার হোসেন বলেন, শুধু নামাজ আদায় নয়, এখানে নানা গবেষণার ফলে ইসলাম নিয়ে বিভ্রান্তি এবং অপব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগও দূর হবে। পাশাপাশি প্রকৃত ইসলামী মূল্যবোধের প্রসার ও শক্তিশালী ইসলামী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে উঠবে।

রংপুর মেডিকেল মোড় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা আনোয়ারুল হক শাহ বলেন, ইসলামের প্রসারে প্রধানমন্ত্রীর এমন উদ্যোগে চমকে উঠেছেন তারা। এতটা আশাও তারা করেননি। মহান আল্লাহ প্রধানমন্ত্রীকে আরও ভালো ভালো কাজ করার তৌফিক দিন- এমন দোয়াই করেন তারা।