জাতীয়

‘লকডাউন’ বানচালের পরিকল্পনায় জামায়াত-শিবির, গ্রেপ্তার ১৯


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ বা লকডাউন বানচালের পরিকল্পনা নিয়ে চট্টগ্রামে জামায়াত-শিবির মাঠে নেমেছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। চট্টগ্রাম নগরীতে ‘গোপন বৈঠক’ থেকে ১৯ জনকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ তাদের এই পরিকল্পনার কথা জানতে পেরেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, কয়েকবছর ধরে পর্দার আড়ালে থাকার পর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিকে পুঁজি করে জামায়াত-শিবির প্রকাশ্যে আসার পরিকল্পনা করেছিল। লকডাউনে আর্থিক সংকটে পড়া গরিব-নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তার নামে তাদের উসকানি দিয়ে এবং মসজিদে নামাজ আদায় বন্ধ করে দেওয়ার গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি, সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচির পরিকল্পনা ছিল জামায়াত-শিবিরের।

এ নিয়ে ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে প্রস্তুতি বৈঠকের এক পর্যায়ে নগরীর চান্দগাঁওয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৯ নেতাকর্মী। এর মধ্য দিয়ে জামায়াত-শিবিরের এই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে গেছে।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘চলমান লকডাউন বিরোধী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করতে জামায়াত-শিবিরের একদল নেতাকর্মী গোপন বৈঠক করছে এমন তথ্য পেয়ে আমরা অভিযান চালাই। অভিযানে আমরা ১৯ জনকে আটক করতে সক্ষম হই। তবে আরও ১০-১২ জন পালিয়ে গেছে। গ্রেফতার নেতাকর্মীদের কাছ থেকে আমরা প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছি যে, লকডাউন বানচালের একটা কর্মসূচি তারা সাংগঠনিকভাবে নিয়েছিল। এজন্য পরিকল্পিতভাবে নাশকতা সংঘটনের উদ্দেশে তারা বৈঠকে বসেছিল। তবে আমর তাদের এই চক্রান্ত নস্যাৎ করেছি।’

সোমবার (২৬ জুলাই) রাতে নগরীর চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়া বানিয়ারপুল মাজার গেইটে একটি ভবনের তৃতীয় তলায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ জামায়াত-শিবিরের ১৯ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। ওই বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে- জামায়াত ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক বই ও দলিল এবং চাঁদা আদায়ের রসিদ।

গ্রেপ্তার ১৯ জন হলেন- স্থানীয় মসজিদের ইমাম মো. ইসহাক (৭৫), জামায়াত ইসলামীর নগরীর চান্দগাঁও (উত্তর) ইউনিটের সহকারী বায়তুল মাল সম্পাদক মো. ইসকান্দর (৩৩), একই ইউনিটের সভাপতি আবুল হাসান মো. ইয়াসিন (৪২) ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম (৩৫), অদুরপাড়া ইউনিটের বায়তুল মাল সম্পাদক আবু হোসেন এরশাদ (৩৬), জামায়াত কর্মী মুজিবুল হক জাবেদ (৩২), মোর্শেদুল আলম (৩২), শওকত হোসেন (৪০), শহিদুল ইসলাম বেলাল (৩৫), আনোয়ার খালেদ (৪০), সাইফুল ইসলাম (৩৮), ফরহাদুল ইসলাম (৩৩), জকির হোসেন (৪৮) ও শেখ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম (৫২) এবং শিবির কর্মী মো. মিরাজ (১৯), আলী আজগর (২৯), আবুল কাশেম (২৭), আবু সালেহ মো. রিফাত (১৮) ও আবু বক্কর ছিদ্দিক মমিন (২৩)।

গ্রেপ্তার অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে বাসায় বসে ‘গোপন বৈঠক’ করা হচ্ছিল সেটি স্থানীয় মসজিদের ইমাম মো. ইসহাকের। তাকে এবং তার ছেলে জামায়াত নেতা মো. ইসকান্দরকে ওই বৈঠক থেকে গ্রেফতার করা হয়। স্থানীয় মসজিদের ইমামের বাসা হওয়ায় কেউ সন্দেহ করবে না, এমন চিন্তাভাবনা থেকে সেখানে বৈঠক করা হচ্ছিল।

গ্রেফতার আবুল হাসান মো. ইয়াসিন চান্দগাঁও শমসের পাড়া এলাকায় জামায়াত নিয়ন্ত্রিত একটি ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে চাকরি করেন। চান্দগাঁও (উত্তর) ইউনিটের সভাপতির দায়িত্বে থাকা ইয়াসিন এবং সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামই মূলত এই বৈঠকের আয়োজন করেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া সবাই আদুরপাড়া, শমসের পাড়া এলাকার বাসিন্দা। এছাড়া কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে তিন জামায়াত নেতা বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। অভিযানের সময় তারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

সূত্র মতে, সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া এবং চলমান কঠোর বিধিনিষেধকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত ইসলামী সাংগঠনিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এজন্য কোভিড-১৯ ম্যানেজমেন্ট কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তিন সদস্যের মনিটরিং সেলে আছেন- নগর জামায়াতের নেতা মুহাম্মদ নুরুল আমিন, এফ এম ইউনুছ ও এম এ আলম।

নগর জামায়াতের কর্মসূচির মধ্যে আছে- করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি ও সেবা, সংকটাপন্ন রোগীদের জরুরি সেবা, টেলি মেডিসিন সেবা, অক্সিজেন সেবা ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা। এছাড়া মৃত ব্যক্তিকে গোসল ও কাফন-দাফন। করোনায় আক্রান্তদের সেবা কর্মসূচি পরিচালনা নিয়ে ইতোমধ্যে ওয়ার্ডে-ইউনিটে সাংগঠনিক বৈঠক সম্পন্ন করেছে জামায়াত ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নগর পুলিশের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মূলত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিকে পুঁজি করে জামায়াত-শিবির ভিন্ন কৌশলে কর্মকাণ্ড চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। তাদের টার্গেট ছিল বিভিন্ন বস্তি এলাকায় গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষ। লকডাউনের কারণে তাদের অনেকেই হয়তো আর্থিক কিছুটা সংকটে আছেন। তাদের সাহায্য করার নামে সেখানে গিয়ে সরকারবিরোধী উসকানি দিয়ে তাদের বিক্ষুব্ধ করার একটা পরিকল্পনা তাদের ছিল। এসব এলাকায় মাস্ক-সুরক্ষা সামগ্রী, আক্রান্ত হলে অক্সিজেন সিলিণ্ডার বিতরণের একটা পরিকল্পনাও তাদের ছিল।’

পরিকল্পনার মধ্যে আরও ছিল- করোনায় আক্রান্তদের তাদের মতাদর্শীদের মাধ্যমে পরিচালিত হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসা দিয়ে মানুষের মধ্যে রাষ্ট্রের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি করা। যেসব এলাকায় জামায়াতের আধিপত্য আছে সেসব এলাকায় লকডাউন অমান্য করে মসজিদে যাওয়া এবং বাধা পেলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি, ধর্মীয় ইস্যুতে গুজব ও বিভ্রান্তি তৈরি করার উদ্দেশ্য তাদের ছিল- জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানান ওই কর্মকর্তা।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘চলমান লকডাউন নিয়ে বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করে ঝটিকা মিছিল করা, মানুষকে উসকানি দিয়ে রাস্তায় নামানো, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ এবং সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় নাশকতা- এ ধরনের বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছিল জামায়াত-শিবির। তবে আমরা অভিযান চালিয়ে ১৯ জনকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে এই চক্রান্তের কথা জেনে যাওয়ায় তাদের পরিকল্পনা আপাতত নস্যাৎ হয়েছে। আমর তাদের রিমান্ডে নিয়ে আরও বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করব। করোনার কারণে আমরা সবাইকে একসঙ্গে রিমান্ডে নিতে পারছি না। সেজন্য সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ চারজনকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছি। আদালত শুনানি পরে করবেন বলে নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’