জাতীয়

শিকলে বাঁধা মান্নানের কষ্টের ১২ বছর

(Last Updated On: মার্চ ৩, ২০২২)

এক যুগের বেশি সময় ধরে শিকলে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন আব্দুল মান্নান (৩২) নামে এক প্রতিবন্ধী যুবক। আতা গাছ ও পায়ের সঙ্গে লাগানো শিকলই তার নিত্যসঙ্গী। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় যা-ই হোক, তাকে সেখানেই দিন-রাত থাকতে হয়। এভাবে পেরিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। কিন্তু মুক্তি মিলছে না তার।

মান্নান বগুড়ার ধুনট উপজেলার কাশিয়াহাটা গ্রামের এক অস্বচ্ছল পরিবারের সদস্য। তার বাবার নাম রহমত আলী। তার চোখে মুখে এখন শৈশবের অপূর্ণ সাধ-স্বপ্নগুলোর মিইয়ে যাওয়া ছাপ। সেখানে স্থান করে নিয়েছে দুর্বিষহ জীবনের না বলা বেদনা, যা প্রকাশের শক্তি হারিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, টিনের-চালা একটি ঘরে তার সংসার। ঘরের ভেতর থাকেন মান্নানের স্ত্রী ও দুই সন্তান। আতা গাছটি ঘরের পিছনে। সেই গাছে বাঁধা শিকল পায়ে মাটিতে আয়েসি ভঙ্গিতে শুয়ে আছেন মান্নান। তার শরীরে নোংরা কাপড়চোপড়। ছোট্ট বারান্দায় তাকে থাকতে হয়। সেখানেই তার নাওয়া খাওয়া। প্রসাব পায়খানার জন্য পাশেই গর্ত করে দেওয়া হয়েছে। এভাবেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কেটেছে তার জীবনের প্রায় ১২টি বছর।

জানা গেছে, ১৫ বছর বয়সে মান্নানের চলাফেরায় পরিবর্তন লক্ষ্য করেন স্বজনরা। বিভিন্ন কবিরাজের কাছে নিলে তারা ঝাড়ফুঁক করতে থাকেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। একপর্যায়ে মান্নান মানুষকে মারধর করা শুরু করে, ক্ষতি করে। সব সময় গালিগালাজ করে। শিশুরা তাকে দেখলে ভয় পায়। তখন তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। সেখানে একটু সুস্থ হলে ডাক্তারের পরামর্শে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এর কিছুদিন পর সব এলোমেলো হয়ে যায় মান্নানের জীবনে। ধীরে ধীরে পাগলামি বাড়তে থাকে। স্বজনরা তাকে শিকলে বেঁধে রাখতে বাধ্য হন। এরপর থেকে শুরু মান্নানের শিকলবন্দি জীবন।

মান্নানের স্ত্রী রনজনা খতুন জানান, স্ত্রী হয়ে আর স্বামীর কষ্ট সইতে পারছি না। অনেকে পরামর্শ দিচ্ছেন উন্নত চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু টাকা খরচ করার সামর্থ্য না থাকায় চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তাই স্বামীর চিকিৎসার জন্য সমাজের হৃদয়বান ও সরকারি সহায়তা চান তিনি।

ধুনট উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসান আহম্মেদ জেমস মল্লিক বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এ অবস্থায় আছেন। কেউ যদি দায়িত্ব নিয়ে তার চিকিৎসা করাতো তাহলে হয়তো ভালো হতো মান্নান।