জাতীয়

শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরাও আসছেন শেফ পেশায়


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

বান্দরবানের লামা ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার নবম শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ আরাফাত হোসেন। ২০১৬ সালে দূরসম্পর্কের এক মামার হাত ধরে চট্টগ্রাম শহরের একটি রেস্টুরেন্টে শেফ সহকারী হিসেবে চাকরি নেন। শুরুতে বেতন হয় ৪ হাজার টাকা। এরপর থেকে চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল, থাই, ইন্ডিয়ান, এশিয়ানসহ একে একে বিভিন্ন দেশের মুখরোচক খাবার তৈরিতে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে থাকেন। এরজন্য তিনি শেফ এর রান্না বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি নগরীর ষোলশহরস্থ ফুড মার্কেটের শেফ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। রেস্টুরেন্টে বর্তমানে তার ২০০ থেকে ৩০০ আইটেম রান্নার পাকা হাত রয়েছে। এর ফলে পাঁচ বছরের ব্যবধানে তার বেতন হয়েছে মাসে ২৩ হাজার টাকা। পাশাপাশি তিনি লেখাপড়ার কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি বান্দরবান সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স (দ্বিতীয় বর্ষ) পড়ছেন। সময়ের পরিবর্তনে শেফ পেশা এখন শুধু শখ নয়। আরাফাত হোসেনের মতো অসংখ্য তরুণ-তরুণী পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। করছেন এ বিষয়ে লেখাপড়াও। এমনি একজন হলেন মঈনুল আলম। নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার এ বাসিন্দা সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে হোটেল ম্যানেজমেন্টের ওপর অনার্স শেষ করে ২০১০ সালে যোগ দিয়েছেন রেস্টুরেন্টে। বর্তমানে তিনি এরোস্টো রেস্টুরেন্টে এক্সিকিউটিভ শেফ হিসেবে কাজ করছেন। মাসে তার বেতন ৫০ হাজার টাকা। আরাফাত ও মঈনুল আলমের মতো শুধু পুরুষরা নয়, নারীরাও এ পেশায় যুক্ত হচ্ছে। তেমনি একজন নারী সাবরিনা আক্তার। শুরুতে শখের বসে লেথাপড়ার পাশাপাশি তিনি টিভি ও ইউটিউবে রান্নার বিষয়গুলো দেখতে থাকেন। ২০১৬ সালে অংশগ্রহণ করেন রূপচাঁন্দা-ডেইল স্টার সুপার শেফ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। সেখানে প্রায় ৫ হাজার প্রতিযোগির মধ্যে তিনি টপ ফোর হন। এরপর তিনি ঢাকা ও চট্টগ্রামে রন্ধন বিষয়ে বিভিন্ন কোর্স সম্পন্ন করেন। বর্তমানে টিভিতে রন্ধন বিষয়ে নিয়মিত টকশো’তে অংশগ্রহণের পাশাপাশি হোম মেড খাবার ডেলিভারি দেন। এতে তার প্রতি মাসে আয় হয় কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা। শেফ পেশায় নতুনদের জয়জয়কারের মধ্যে পুরনোরাও তাদের আধিপত্য ধরে রেখেছেন। তেমনি একজন মোহাম্মদ ওমর ফারুক। ১৯৮৯ সালে এ পেশায় আসা ওমর ফারুক বর্তমানে নগরীর মিমি সুপার মার্কেট সংলগ্ন লিটল এশিয়া রেস্টুরেন্টে শেফ পেশায় কর্মরত আছেন। বর্তমানে তার মাসিক আয় প্রায় ৩৫ হাজার টাকা।


শেফ পেশার পাশাপাশি এ বিষয়ে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন এক নারী। নাম তোয়াহা খানম। কক্সবাজারের এ নারী বর্তমানে আইসিআই’তে একাডেমিক কাউন্সিলর এন্ড এডমিন অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
দৈনিক পূর্বকোণকে এ নারী বলেন, ‘আইসিআই’তে শেফ বিষয়ে তিন মাসের ২টি করে কোর্স করা হয়। প্রতি কোর্সে ২০ জন ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণশেষে তারা সফলতার সাথে দেশে-বিদেশে চাকরি করছেন’।


শেফ আরাফাত হোসেন, মোহাম্মদ ওমর ফারুক, মঈনুল আলম ও সাবরিনা আক্তার বলেন, ‘নগরীর বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, তারকামানের হোটেল ও ক্যাফে প্রায় ৪০০ শেফ কর্মরত রয়েছেন। এটিকে এখন মর্যাদার পেশা হিসেবে নিয়েছেন সবাই। তাদের পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধি, একে অপরের বিপদে সহায়তা প্রদান, মালিক-কর্মচারীর সেতুবন্ধন তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে সহায়তার লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর ‘সিটিজি শেফ এন্ড ফুড’ নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। বর্তমানে এ পেশায় প্রচুর শিক্ষিত তরুণ-তরুণী যুক্ত হচ্ছেন। নিজেদের পেশার দক্ষতা প্রমাণ করছেন। একই সাথে সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থানের। লাঘব হচ্ছে বেকারত্বের’।