জাতীয়

৩৫ বছরের রবিউল ১৭ বছরই গর্তে শেকলবন্দি


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

অল্প জ্বর থেকে শুরু হয়ে এখন সম্পূর্ণ মানসিক ভারসাম্যহীন রবিউলের জীবন প্রায় দেড়যুগ ধরে শেকলবন্দি। এই যুবককে নিয়ে দিশেহারা হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে তার পরিবার।

মায়ের কান্না, বাবার চিন্তা কোনকিছুই স্পর্শ করে না তার মনকে।  

ফরিদপুরে বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম চরবর্ণি গ্রামের ভ্যানচালক মো. নুরুল মোল্লার বড় ছেলে মো. রবিউল মোল্লা (৩৫)। তিনভাইয়ের মধ্যে রবিউল সংসারের বড় সন্তান।

বাড়ির চারচালা পশ্চিম পোতায় একটি টিনের ঘরে মাজায় শেকল লাগানো রবিউলের। প্রায় ১১ ফুট ব্যাসের ও ৬ ফুট গভীর গোলাকার গভীর মাটির গর্তে হাত দিয়ে মাটি খুড়ছে।  

পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১৭ বছরের শেকলবন্দি জীবনে ঘরটির মাটির মেঝে হাত দিয়ে খুঁড়ে খুঁড়ে রবিউল নিজেই তৈরি করেছেন নিজের থাকার অন্য জগত।

রবিউলের মা আসমানী বেগম বলেন, রবিউলের বয়স তখন প্রায় ৯ বছর। সে সময় তার জ্বর হয়েছিল। অসুস্থতার দুই-তিন বছর পর আস্তে আস্তে তার হাত-পা শুকিয়ে যেতে থাকে। পরিবারের সাধ্যমতো কবিরাজ ও ডাক্তার সব দেখানো হলেও আর সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি রবিউল। শীত-গরম কোনো অনুভূতিই টের পায় না সে। শরীরে তাই কখনোই কাপড় রাখে না রবিউল।  


রবিউলের বাবা মো. নুরুল মোল্লা বলেন, রবিউল অসুস্থ হওয়ার পর তার ওজনের সমান টাকা ফেলেও তারে আর ভালো করতে পারি নেই। এহন আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিছি।

তিনি জানান, শেকল খুলে দিলে রবিউল পুরো বাড়ি ভাঙচুর ও তছনছ করে। এদিক ওদিক হারিয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে মনে না মানলেও প্রায় ১৭ বছর ধরে ওকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।

রবিউলের ছোট ভাই ইমরান মোল্লা বলেন, ছোট বেলায় বড়ভাই আমাকে সাইকেল চালানো শিখিয়েছিল। সে স্মৃতি আমি এখনো ভুলি নাই।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ বলেন, ফেসবুকে শেকলবন্দি ওই তরুণের ছবি দেখে আমি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে পরিবারটিকে নগদ পাঁচ হাজার টাকা ও সরকারি খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। এলাকাটি প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় ঘটনাটি আগে আমাদের নজরে আসেনি বা কেউ জানায়নি। পরবর্তীতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে মানসিক ভারসাম্যহীন রবিউলের চিকিৎসায় বড় ধরনের অর্থ সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হবে।