জাতীয়

৫০ হাজার টাকা না পেয়ে কক্সবাজারের সেই নারীকে ‘ধর্ষণ’


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার মূলহোতা ও প্রধান আসামি মো. আশিকুল ইসলামকে মাদারীপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। মাত্র ৫০ হাজার টাকা না চাঁদা না পেয়ে ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে এই আসামি। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং-এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, গত ২২ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজারে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী। সেই ঘটনায় ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে চারজন এজাহারনামীয় আসামি এবং আরও ২/৩ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।

র‍্যাব জানায়, ভুক্তভোগী ওই নারী স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজারের একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন। তাদের সঙ্গে ৮ মাস বয়সের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। শিশুটির জন্মগতভাবে হার্টে ছিদ্র থাকায় তার চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। শিশুটির চিকিৎসার অর্থ সংকুলানের আশায় স্বামীসহ কক্সবাজারে অবস্থান করছিল পরিবারটি। তারা বিত্তবান পর্যটকদের নিকট হতে অর্থ সাহায্য চাইতো। এ সময় তিনি অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

অপহরণের ঘটনায় ওই নারীর স্বামী র‌্যাব-১৫ এর নিকট তার স্ত্রীকে উদ্ধারে সহায়তা চায়। অতঃপর র‌্যাব তার স্বামীকে নিয়ে ওই নারীকে উদ্ধারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় ও একপর্যায়ে তাকে উদ্ধার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে জিম্মি করার সহযোগিতার অভিযোগে জিয়া গেষ্ট ইন হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

র‍্যাব জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৮ ও ১৫ এর অভিযানে গতকাল রোববার রাতে মাদারীপুরের মোস্তাফাপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত মামলার প্রধান আসামি মো. আশিকুল ইসলামকে (২৯) গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত আসামি ধর্ষণের বিষয় স্বীকার করেছে।

গ্রেপ্তারকৃত মো. আশিক কক্সবাজারে পর্যটক এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের মূল হোতা। এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ৩০-৩৫ জন। গ্রেপ্তারকৃত বিগত ২০১২ বছর হতে কক্সবাজার পর্যটক এলাকায় বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সে প্রথম ২০১৪ সালে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয় বলে জানায়। সে ও তার সিন্ডিকেট পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, জিম্মি, চাঁদাবাজি, জবরদখল, ডাকাতি ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। সে পর্যটন এলাকায় বিভিন্ন হোটেলে ম্যানেজারের সঙ্গে যোগসাজসে ট্যুরিস্টদের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করতো।

গ্রেপ্তারকৃতকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত ও তার সহযোগীরা ভিকটিম ও তার পরিবারের নিকট ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। তার পরিবার চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। অতঃপর লাবণী বীচ এলাকার রাস্তা হতে ওই নারীকে সিএনজিতে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেপ্তারকৃত মো. আশিকুল ইসলাম ভিকটিমকে ধর্ষণ ও জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে আটক করে রেখে ভিকটিমের স্বামীর কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

এরপর ভিকটিমকে হোটেলে আটকে রেখে গ্রেপ্তারকৃত হোটেল থেকে বের হয়ে যায়। বিষয়টি ব্যাপকভাবে স্থানীয় পর্যায়েও বিভিন্ন মিডিয়াতে জানাজানি হলে গ্রেপ্তারকৃত আত্মগোপণে চলে যায়। পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তারকৃত বেশভূষা পরিবর্তন করে ঘটনার দুদিন পর কক্সবাজার হতে একটি এসি বাস যোগে ঢাকায় আসে। পরবর্তী সময়ে ঢাকা থেকে পটুয়াখালী যাওয়ার পথে সে মাদারীপুরের মোস্তাফাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেপ্তার হয়।

র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন রকম জবরদখল ও অবৈধ কর্মকান্ডে জড়িত রয়েছে। সে পর্যটন এলাকার সুগন্ধা নামক স্থানে ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট জোরপূর্বক কম টাকা দিয়ে ভাড়া নিয়ে ক্ষেত্র বিশেষে দ্বিগুণ ও তিনগুণ ভাড়া সংগ্রহ করে মূল মালিকদের বঞ্চিত করে থাকে।

বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অবৈধ দখল করে ও চাঁদা দাবি করে থাকে। তার চক্রের সদস্যরা রাতের সময়ে সি-বীচে আগত ট্যুরিস্টদের হেনস্তা, মোবাইল ছিনতাই, ফাঁদে ফেলা ও নিয়মিত ইভটিজিং করতো। পাশাপাশি হোটেল-মোটেল জোনে বিভিন্ন ট্যুরিস্টদের সুযোগ বুঝে ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করতো। তার নামে ইতোমধ্যে কক্সবাজার সদর থানায় অস্ত্র, মাদক, নারী নির্যাতন ও চাঁদাবাজিসহ ১২টি মামলা চলমান রয়েছে। ইতোপূর্বে সে পাঁচবার পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার হয় এবং দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছে বলে জানায় র‍্যাব।