জাতীয়

গরিব হলে ‘কম ঘুষ’, ধনী হলে বেশি


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

কার ঘুষ কে নেয়—এই দ্বন্দ্বে ফেসবুকে ফাঁস হয়েছে তিনটি ভিডিও ক্লিপ। আর সেই ভিডিওতে দেখা যায়, রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সরদহ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আব্দুস সাত্তার চেয়ারে বসেই নিচ্ছেন ঘুষের টাকা। দাবি অনুযায়ী, ঘুষ না পেলে ধমকও দিচ্ছেন জমির মালিকদের। তবে গরিব হলে কম, আর ধনী হলে বেশি টাকা ঘুষ নেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার আব্দুস সাত্তারের ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ক্লিপ ফাঁস হয়। এর মধ্যে একটিতে দেখা যায়, তার টেবিলের সামনে টাকা হাতে নিয়ে বসে থাকা সেবাগ্রহীতাকে তিনি বলছেন, ‘মাত্র ৯০০ টাকা দিলে হবে না। গরিব মানুষও এর চেয়ে বেশি দিছে। আর আপনি তো বড়লোক। মার্চেন্ট মানুষ। ৯০০ টাকা গুণে দিছেন, এটা কেমন কথা হলো!’

এক ব্যক্তি চারঘাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে তদবির নিয়ে আসায় তহশিলদার আব্দুস সাত্তার চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি ধমকের সুরে বলেন, ‘কমিশনার অফিস থেকে ফোন করান কেন? এই অফিসে লোক নাই? সাতদিন কাজ আটকাতে হয়। তাহলে বুঝবা।’

দ্বিতীয় ভিডিওতে দেখা যায়, তার টেবিলের সামনে বসে থাকা সেবাগ্রহীতাকে চার হাজার টাকার সঙ্গে আরও অতিরিক্ত ৫০০ টাকা দিতে বলছেন। তা না হলে খাজনার চেক কাটবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন তহশিলদার সাত্তার।

তৃতীয় ভিডিওতে দেখা যায়, তহশিলদার সাত্তার সেবাগ্রহীতাকে অফিসের বাইরে নিয়ে গাছতলায় দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। কথা বলার ফাঁকে কয়েক দফায় তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে পকেটে রাখছেন।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলছেন, তহশিলদার সাত্তারের চেয়ে ওই অফিসে পিয়ন কুদরত আলীর প্রভাব বেশি। প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতার ‘নেক নজর’ থাকায় ভূমি অফিসে দাপটের সঙ্গে চলেন তিনি।

তবে মাস দুয়েক আগে ওই অফিসে যোগ দেন সাত্তার। তহশিলদার পদে যোগ দিয়েই কুদরতের লেনদেনের হাটে হানা দিয়েছেন সাত্তার। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল তাদের মাঝে। এরই মধ্যে ফাঁস হলো সাত্তারের ঘুষ নেয়ার ভিডিও।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন সেবাগ্রহীতা অভিযোগ করেন, তহশিলদার অফিসে বসেই ঘুষ নেন। তিনি টাকা ছাড়া কোনো কাজই করতে চান না। দাবি অনুযায়ী, ঘুষের টাকার অংক কম হলেই চটে যান। অসদাচরণ করেন। ১০ টাকার খাজনার জন্য তিনি ১০০ টাকা ঘুষ নেন বলে তাদের অভিযোগ।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তহসিলদার আব্দুস সাত্তার আমাদের সময় অনলাইনকে বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে ঘুষ নিইনি। সরকারি ফি’র টাকা নিচ্ছিলাম। তখন কেউ হয়তো ষড়যন্ত্র করে ভিডিও করেছে।’ এ ঘটনার পেছনে কুদরতের হাত থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে, সরদহ ভূমি অফিসে কুদরতের ‘লেনদেনের হাট’-এর বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়েছে।

যদিও পিয়ন কুদরত আমাদের সময় অনলাইনকে বলেন, ‘আমি ছোট পদে চাকরি করি। চা নিয়ে আসা আমার কাজ। মাঝেমধ্যে কাগজপত্র খুঁজে দিই। কাজেই তার (সাত্তার) সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমি কারো কাছে টাকাও নিই না।’

তহশীলদার আব্দুস সাত্তারের ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শরিফুল হক বলেন, ‘ভিডিওটা আমরা দেখেছি। তাতে দেখা যায়, তার কথাবার্তা খারাপ। ঘুষ লেনদেন নিয়েই সে কথা বলছে। আগামী রোববার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হতে পারে। এরপর তদন্ত কমিটি গঠন করে বাকি অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে।’