মামলা তদন্ত করতে গিয়ে চিত্রনায়িকা পরীমনির সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে গড়ে উঠেছিল প্রেমের সম্পর্ক। এরপর নিয়মিত পরীমনির বাসায় যাতায়াত শুরু করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েন শিথিল। ঈদের সময় তিন দিন ছিলেন পরীর বাসায়। মাঝে মাঝে গাড়ি নিয়ে বের হতেন দু’জনে। বিবাহিত সেই পুলিশ কর্মকর্তা নিজেকে পরিচয় দিয়েছিলেন অবিবাহিত হিসেবে। সর্বশেষ পরীমনি সেই পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় এসে অবস্থান করেন প্রায় ১৮ ঘণ্টা। পরীমণি গ্রেপ্তারের পর অকপটে স্বীকার করেছেন সবকিছু। অভিযোগ উঠতে না উঠতেই আলোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তাকে ডিবির সকল কার্যক্রম থেকে নিবৃত্ত করা হয়েছে।
গোলাম সাকলায়েন ৩০তম বিসিএসএর অফিসার। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহী। সাকলায়েনের স্ত্রী প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। ঢাকার পার্শ্ববর্তী একটি জেলায় তার স্ত্রী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তাদের একটি সন্তানও রয়েছে।
সম্প্রতি ডিবিতে জিজ্ঞাসাবাদেও পরীমণি সাকলায়েনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে পরীমণির সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুও এ সম্পর্কে বিষয়ে বিস্তারিত বলেন।
পরীমনিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, পরীমনিকে গ্রেফতারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দা কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েন শিথিলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ফাঁস হয়। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত রাজারবাগের মধুমতি বাসভবনের কেয়ারটেকার শামীমকে সিসিটিভি ফুটেজের ডিভিআরসহ পুলিশ সদরদফতরে ডেকে পাঠান। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পরীমনির বক্তব্যের সত্যতা পান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বোট ক্লাবের ১৩ জুনের ঘটনার পর পরীমনি তাকে ধর্ষণচেষ্টা ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে অভিযোগ আনলে মামলা হয়। মামলার পরদিনই আসামি হিসেবে ক্লাব নেতা ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদকে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাকলায়েন সেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন।
মামলা তদন্তের অংশ হিসেবে পরীমনিকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। তখনই ডিবির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েন শিথিলের সঙ্গে পরিচয় হয় পরীমনির। এরপর থেকেই শুরু হয় যোগাযোগ।
জিজ্ঞাসাবাদে পরীমনি জানিয়েছেন, নিয়মিত কথা বলতে বলতে গোলাম সাকলায়েন শিথিলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় তার। নিয়মিত পরীমনির বাসায় যাতায়াত শুরু করেন গোলাম সাকলায়েন শিথিল। মাঝে-মধ্যেই গাড়ি নিয়ে বের হতেন দু’জনে। সর্বশেষ গত ১ আগস্ট তার সরকারি বাসভবন রাজারবাগের মধুমতির ফ্ল্যাটে যান পরীমনি।
সম্প্রতি সাকলায়েনের বাসায় পরীমনির যাতায়াতের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশিত হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখা যায়, ১ আগস্ট সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে পরীমনির সাদা রংয়ের হ্যারিয়ার গাড়িটি (ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৫ ৯৬ ৫৩) নিয়ে গোলাম সাকলায়েনের রাজারবাগের অফিসার্স কলোনির মধুমতি ভবনের ৯/সি নম্বর সরকারি ফ্ল্যাটের বাসায় আসে। প্রথমে সেই গাড়ি থেকে লাল রংয়ের টি-শার্ট পরে বের হন সাকলায়েন। সাদা রংয়ের একটি স্লিপিং গাউন পরে নামেন নায়িকা পরীমনি। পরীমনির খালাতো বোন শায়লা ও তার স্বামী গোলাম রাতে সাকলায়েনের ওই বাসায় যান। পরে রাত ২টার দিকে পরীমনি ও তার স্বজনরা গোলাম সাকলায়েনের বাসা থেকে বের হয়ে যান। তবে রাতে বের হওয়ার সময় পরীমনির পরনে ছিল কালো রংয়ের পোশাক, আর সাকলায়েনের গায়ে সাদা টি-শার্ট।
ডিবির একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, সাকলায়েন নিজেকে অবিবাহিত দাবি করে মামলার তদন্তের সময় পরীমণির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কিন্তু সাকলায়েন বিবাহিত, বিষয়টি জানার পর পরীমনি ও তার মধ্যে মনমালিন্য সৃষ্টি হয়। পরে দীপুর উদ্যোগে পরীমনির সঙ্গে তার সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। গত কোরবানি ঈদের সময় পরীমণির বাসায় তিন দিন ছিলেন সাকলায়েন। তখন বাসায় তারা ছাড়া আর কেউ ছিল না।
এ বিষয়ে পরীমনির গাড়িচালক নাজির হোসেন বলেন, রাজারবাগ পুলিশ কোয়ার্টারে পরীমণিকে গত ১ আগস্ট সকালে তিনি গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। আবার রাতে পরীমণির ফোন পেয়ে তাকে আনতে যান। এছাড়াও তারা দু’জনই গাড়ি চালাতে পারে। তারা মাঝেমধ্যেই আমাকে রেখে নিজেরা ড্রাইভ করে হাতিরঝিলে ঘুরতে যেতো। গাড়ি চালানো অবস্থায় তারা কোনো কথা বলতেন না। তবে গাড়িতে মদ্যপান করতো। আবার মাঝেমধ্যে তারা একা গাড়ি নিয়ে বের হতেন।