১০০ বছর বয়সী জিরেজিরিস তাসাহাস। ৭০ বছর ধরে দৈনিক এক প্যাকেট সিগারেট খান তিনি। অ্যাপেডিসাইটিসের সমস্যা বাদে বিগত ১০০ বছরে কঠিন কোনো রোগে আক্রান্ত হননি। শুধু তিনিই নয়, তার মতো অনেক উদাহরণ রয়েছে ইকারিয়া দ্বীপে। সেখানকার মানুষের গড় আয়ু ১০০ বছর।
বলছি তুর্কি উপকূল থেকে প্রায় ৩০ মাইল দূরে ভূ-মধ্যসাগরের পূর্ব দিকে গ্রীক দ্বীপ ইকারিয়ার কথা। সেখানেই বাস করেন বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণতম মানুষেরা। যেন মনে হয়, তারা মরতেই ভুলে গেছেন। অসম্ভব সুন্দর দ্বীপ ইকারিয়া হলো একটি পাহাড়ি এলাকা। সেখানে খাড়া উপত্যকায় গড়ে উঠেছে জনবসতি।
গ্রীসে এমন অনেক পর্বতমালা রয়েছে। তবে সেগুলোর সঙ্গে ইকারিয়া দ্বীপপুঞ্জের ব্যবধান অনেক। কারণ সেখানকার মানুষেরা অন্যান্য দ্বীপপুঞ্জ এবং মূলভূমির জনসংখ্যার তুলনায় ১০ বছর বেশি বাঁচেন।
শুধু তাই নয়, তাদের ক্যান্সার এবং হৃদরোগের হারও অনেক কম। এ ছাড়াও হতাশা, স্মৃতিভ্রষ্টতার বালাই নেই সেখানে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, ৯০ কিংবা ১০০ বছর বয়সেও তারা শারীরিকভাবে ফিট এমনকি যৌনজীবনও উপভোগ করেন। এজন্যই গ্রিসের সুন্দর এ পাহাড়ি এলাকায় বছরের বিভিন্ন সময় পর্যটকরা ভিড় জমান। সেখানকার সৌন্দর্য মুগ্ধ করে সবাইকে। সমুদ্রের পাশে খাড়া উপত্যকায় ছড়ানো ছিটানো বাড়ি-ঘর ও পাহাড়ি পরিবেশ দেখতে গিয়ে নিরাশ হয়ে ফেরেন না কোনো পর্যটকই। চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন দীর্ঘজীবীদের গ্রাম থেকে। সেখানে গেলে আপনিও জানতে পারবেন তাদের দীর্ঘজীবনের গোপন রহস্য।এথেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুলের কার্ডিওলজিস্ট ডা. ক্রিস্টিনা ক্রিশোহউয়ের গবেষণায় উঠে এসেছে ইকারিয়ানদের দীর্ঘজীবন লাভের রহস্য। ইকারিয়ানদের ডায়েটে শাক-সবজি ও মটরশুটির পরিমাণ বেশি অন্যদিকে তারা খুব বেশি মাংস বা পরিশোধিত চিনিজাতীয় খাবার খান না। তারা নিয়মিত রেড ওয়াইন (অল্প পরিমাণে), আলু ও ছাগলের দুধ নিয়মিত খেয়ে থাকেন।
ক্রিসহউ মনে করেন, ইকারিয়ান প্রচুর পরিমাণে ভেষজ চা এবং কম পরিমাণে কফি পান করেন। যা তাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। তারা প্রতিদিন খুবই কম ক্যালোরির খাবার খায়। একেবারেই পশ্চিমা জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত নন তারা। আরও জানা গেছে, বিকেলে একটু ঘুমিয়ে নেওয়ার অভ্যাস শরীরের জন্য ভালো। যা ইকারিয়ানরা নিয়মত করেন।
গ্রীক প্রাপ্তবয়স্কদের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ন্যাপ নিলে হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। ক্রিসহউয়ের গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ৬৫-১০০ বছরের ইকারিয়ান পুরুষদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই যৌন ক্রিয়াকলাপে সক্ষম। এ ছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে, ইকারিয়ানরা শারীরক অনেক কসরত করেন। নারী-পুরুষ সবাই নিজেদের জমি নিজেরাই চাষাবাদ করেন। পাশাপাশি পশু লাল-পালনসহ নিয়মিত পাহাড়ে চড়া সব কাজেই তারা পারদর্শী। ১০০ বছর বয়সেও তারা ১০০ সিঁড়ি মুহূর্তেই পাড়ি দিতে পারেন।এসব দেখতেই পর্যটকরা অনিন্দ্য সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘুরতে চলে যান। সেখানে সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, জনপ্রিয় খাবারসহ বিভিন্ন সংগ্রহশালা বা গ্যালারি রয়েছে। যা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ ছাড়াও জলপ্রপাত, দ্বীপের রাস্তা-ঘাট সবই আকর্ষণ করবে আপনাকে।