মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া দ্বৈত নাগরিক লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্ট মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা (মিনি ব্রেন স্টোক) নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের পঞ্চম তলায় ২৬ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিটের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, মিনি ব্রেইন স্ট্রোকের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন লুসি হল্ট। তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ পর্যাপ্ত বিশ্রামের প্রয়োজন তার। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং পরামর্শ মেনে চললে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
বরিশাল অক্সফোর্ড মিশন গির্জার ফাদার জন হালদার বলেন, সিস্টার লুসি হল্টের অবস্থা স্থিতিশীল। চিকিৎসকদের পরামর্শে তার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। এদিকে, শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, লুসি হল্টের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, লুসির জন্ম ১৯৩০ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের সেন্ট হ্যালেন্সে। বাবা জন হল্ট ও মা ফ্রান্সিস হল্ট। দুই বোনের মধ্যে ছোট লুসি। তার বড় বোন রুৎ অ্যান রেভা ফেলটন স্বামী-সন্তান নিয়ে ব্রিটেনেই বসবাস করেন।
লুসি ১৯৪৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক (দ্বাদশ) পাস করেন। তিনি ১৯৬০ সালে প্রথম বাংলাদেশে আসেন। যোগ দেন বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনে। এখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের পড়াতেন। এরপর আর দেশে ফিরে যাননি। ৫৭ বছর ধরে বরিশাল ছাড়াও কাজ করেছেন যশোর, খুলনা, নওগাঁ, ঢাকা ও গোপালগঞ্জে।
মানবদরদী ব্রিটিশ নাগরিক লুসি হল্ট বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে নিরবে কাজ করেছেন। ওই সময় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা করেছেন তিনি। দেশ স্বাধীনের পরে তিনি দেশের মায়া ত্যাগ করতে পারেননি। তাই নিজের দেশে ফিরে না গিয়ে বাংলাদেশেই থেকে যান। তিনি বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনের একটি জরাজীর্ন টিনসেট ঘরে বসবাস করেন।

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পরই লুসি হল্টকে দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রদানের পাশাপাশি তাকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়। ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লুসি হল্টকে গণভবনে ডেকে নিয়ে তার হাতে তুলে দেন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব।