জাতীয়

গ্রামে বসেই মাসে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন তৃষ্ণা

(Last Updated On: )

‘অর্থ নয়, আগে নিজেকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। ভালোভাবে কাজ শিখে নিজেকে বিশ্ববাজারে যোগ্য করে তুলতে হবে। তাহলেই অনলাইনে কাজের অভাব হবে না।’এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বেনুপাড়া গ্রামের ফ্রিলান্সার তৃষ্ণা দিও।

তৃষ্ণা দিও জানান, ২০১৯ সালে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা প্রশাসন বিষয়ে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) সম্পন্ন করে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে মানবসম্পদ বিভাগে চাকরি নেন। কাজের ধরণের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারায় চাকরি ছেড়ে চলে আসেন গ্রামে। নতুন চাকরির জন্য গ্রামে থেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত আবেদন পাঠাতে থাকেন। এ সময় তার এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করা যায়। তাই দেরি না করে তিনি ময়মনসিংহের নকরেক আইটি ইনস্টিটিউটে গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্সে ভর্তি হন। তিনি নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি বাজার থেকে হালুয়াঘাট উপজেলা হয়ে ময়মনসিংহে যেতেন ক্লাস করতে। এভাবে তিনি কোর্সটি সম্পন্ন করেন।

তৃষ্ণা দিও আরও জানান, প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রায় ছয় মাস পর ৮৬ ডলারের একটি কাজ পান। কাজটি অত্যন্ত যত্ন ও মনযোগ সহকারে শেষ করেন। কাজের মান ভালো হওয়ায় ওই গ্রাহকের মাধ্যমে আরও বেশ কয়েকটি কাজ পান। শুরুতে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ পেতে বা করতে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। দেশের এক গ্রাহক তাকে দিয়ে একটি কাজের নকশা ১৭ বার পরিবর্তন করেছিলেন। পরে কাজটি তার পছন্দ হয়।  আর এভাবেই ধীরে ধীরে দেশি বিদেশি বড় বড় কাজের অর্ডার পেতে থাকেন। ফলে তার আয়ও বাড়ে।

তিনি বলেন, ‘আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠানে সরাসরি কাজের প্রস্তাব পেয়েছিলাম। স্পনসরও তৈরি ছিল। কিন্তু আমার বাবা বললেন, গ্রামে বসেই যদি ভালো আয় করতে পারো, তাহলে বিদেশে গিয়ে কী হবে ?  আমিও ভেবে দেখলাম কেন যাবো আমার গ্রাম ছেড়ে বিদেশে। প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে গ্রামেই থেকে গেলাম। বর্তমানে আমি প্রতি মাসে কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা আয় করি। গত আগস্ট মাসে আমার আয় হয়েছিল ৬৫ হাজার টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে আরও বেশি হবে। এখন আমি বিভিন্ন ধরনের পোস্টারের নকশা, বিজনেস কার্ড, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা, পরিচয়পত্র, রেস্তোরাঁর খাবারের তালিকা, প্রচারপত্র ইত্যাদির নকশা করছি। তবে লোডশেডিং না থাকলে আয় আরও বাড়তো।’

নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, ‘ভবিষ্যতে গ্রামের ছেলে মেয়েদের ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে চাই। এছাড়া বর্তমানে ভিডিও এডিটিংয়ের আরেকটি কোর্সে ভর্তি হয়েছি।’

তৃষ্ণার বাবা রবার্ট রেমা বলেন, ‘সন্তানের সফলতায় সব বাবার মতো আমিও গর্বিত। তরুণ তরুণীদের প্রতি আমার আহ্বান, চাকরি না পেলে হতাশ হওয়া যাবে না। নিজেকে যোগ্য করে তুললে চাকরিই খুঁজে বের করবে প্রার্থীকে।’

নালিতাবাড়ীর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীনেত্রী ক্লোডিয়া নকরেক কেয়া বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মেয়েরা এখন কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। উচ্চতর পড়ালেখা করে তৃষ্ণা দিও নিজ গ্রামের ঘরে বসেই মোটা অংকের টাকা উপার্জন করছেন। তার এ সফলতায় আমরা আনন্দিত হয়েছি।’