বগুড়ার ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (হাসপাতাল) কর্তৃপক্ষ ফাতেমা খাতুন (২০) নামে এক প্রসূতিকে পুরো চিকিৎসা না দিয়েই ছাড়পত্র দিয়ে অন্য হাসপাতালে যেতে বলেন। এরপর দ্বিতীয় তলা থেকে হাসপাতাল চত্বরে যেতেই পুনরায় প্রসববেদনা শুরু হয় ফাতেমার। এ সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভেতর বসলে সেখানেই তার ছেলে সন্তান জন্ম নেয়।
ফাতেমা খাতুন উপজেলা সদরের উল্লাপাড়া গ্রামের আসাদুল ইসলামের স্ত্রী। নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে আলী আকবর। ফাতেমা খাতুনের এটি প্রথম সন্তান। এই অমানবিক ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হলে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের নজরে আসে।
বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) দুপুরের দিকে সরেজমিন ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডের বিছানায় ফাতেমা খাতুন ও তার সন্তান আলী আকবর শুয়ে আছে। তবে শিশুটি সুস্থ থাকলেও তার মা ফাতেমা খাতুন উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে কাতরাচ্ছেন। হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ফাতেমা খাতুনের প্রসববেদনা উঠলে গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন স্বজনরা। তাকে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করান। মাত্র ২০ মিনিট পর নার্সদের পক্ষ থেকে জানানো হয় তাকে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেলিভারি করানো সম্ভব না। একপর্যায়ে হাসপাতাল থেকে ফাতেমাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তখন হাসপাতালের দ্বিতীয় তলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠে বসতেই সেখানে সন্তান প্রসব করেন ফাতেমা।
ফাতেমা খাতুনের স্বামী আসাদুল ইসলাম বলেন, ছাড়পত্র দিয়ে আমাদের হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করেন। নিরুপায় হয়ে চিকিৎসার জন্য টাকা ও গাড়ি জোগাড়ের চেষ্টা করতে থাকি। এ সময় হাসপাতাল চত্বরেই আমার স্ত্রী সন্তান প্রসব করে। আমাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা অমানবিক। ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে এ জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান আসাদুল ইসলাম।
ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাসানুল হাছিব বলেন, প্রসূতি ফাতেমা খাতুন উচ্চ রক্তচাপ রোগে আক্রান্ত। তাকে সঠিক চিকিৎসা দিতে না পারলে একলাম্পশিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি হতে পারে। এ ছাড়া মায়ের শরীর থেকে গর্ভস্থ শিশুর শরীরে রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে শিশুটির মৃত্যুও হতে পারে। কিন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। এ কারণে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল।