জাতীয়

‘বাবা আমারে মারিস না মইরা যাব’

(Last Updated On: )

বাবা আমারে মারিস না মইরা যাব। ছেলের নির্যাতনের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে এভাবেই আকুতি জানিয়েছিলেন ষাটোর্ধ্ব মা আনোয়ারা বেগম। মায়ের কান্নায় তারপরেও মন গলেনি ছেলের। মাকে খাটের সঙ্গে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে রাখেন। নিজেকে রক্ষার জন্য চিৎকার করলে মুখে স্কসটেপ লাগিয়ে মাকে নির্যাতন করেন ওই যুবক।

স্ত্রীকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে বৃদ্ধ বাবাকেও মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই যুবকের বিরুদ্ধে। বাবা-মাকে নির্যাতনের এই ঘটনাটি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামে ঘটেছে।  

অভিযুক্ত ওই যুবকের নাম আ. রউফ (৩০)। তিনি ওই গ্রামের মো. মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার হওয়া আনোয়ারা বেগম থানায় ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন।

গতকাল বুধবার দুপুরে ভুক্তভোগী দম্পতি জানান, মো. মোসলেম উদ্দিন তার পরিবার নিয়ে উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে বসবাস করেন। অভিযুক্ত আ. রউফ দীর্ঘদিন ধরে জায়গা-জমি, টাকা-পয়সা ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার বাবা-মায়ের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করে আসছেন।

বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগম জানান, আ. রউফ বিভিন্ন সময়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে মারধর করে। প্রতিবাদ করলে তার বাবাকেও মারধর করে। অনুমানিক তিন মাস আগে মারধর করে তার বাঁ হাতের একটি আঙ্গুল ভেঙে দেন রউফ।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘গত ৯ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে আটটার দিকে সামান্য কথা নিয়ে কাটাকাটি হয় রউফের সঙ্গে। এতে উত্তেজিত হয়ে সে আমাকে মারপিট শুরু করে। বাবা আমারে মারিস না মইরা যাব। এভাবে কান্না করলেও মন গলেনি ছেলের। আমার হাত-পা রশি দিয়ে খাটের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালায় রউফ। বাঁচার জন্য চিৎকার করলে মুখে স্কসটেপ লাগিয়ে দেয়। এ সময় আমার দুই গালে দুটি চড়ও মারে। নির্যাতন করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফুলা জখম করে।’

এ সময় স্ত্রীকে রক্ষা করতে এগিয়ে যান বৃদ্ধ মোসলেম উদ্দিন। কিন্তু উত্তেজিত রউফ তাকেও মারপিট করেন। পরে তাদের চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করে।

ভুক্তভোগী আনোয়ারা বেগম আরও বলেন, ‘ছেলের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে স্থানীয়ভাবে বিচার চেয়েছি। কারও কথা মানে না সে। দীর্ঘ দিন কোনো বিচার পাইনি। নিরুপায় হয়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগ দায়ের করার পর থেকে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেছে। এখন বাড়ি-ঘরে বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে।’

রউফের বাবা মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘ছেলের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে আমাকেও মারধর করে। কোনো উপায় না পেয়ে অত্যাচর নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে আমার স্ত্রী থানায় অভিযোগ দিয়েছে। বিচার না পেলে আত্মহত্যা ছাড়া আমাদের দুজনের আর কোনো পথ খোলা থাকবে না। ’

আভিযুক্ত আ. রউফকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হক জানান, নির্যাতিত দম্পতিকে বাড়িতে তুলে দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত রউফ পলাতক রয়েছেন। তাকে ধরার অভিযান অব্যাহত আছে।