আন্তর্জাতিক

বেছে বেছে বৃদ্ধাদের খুন করতেন এই নারী কুস্তিগীর!

(Last Updated On: )

ধারণা করা হয়ে থাকে, তিনি ৪০ জনেরও বেশি বৃদ্ধা নারীকে খুন করেছিলেন। তবে আদালতে তার বিরুদ্ধে মাত্র ১১টি খুনের অভিযোগ প্রমাণ করা গিয়েছিল। আর এতেই তার সাজা হয়েছিল সাড়ে সাতশ বছরের।

পাঠক এতক্ষণে বুঝতেই পেরে গেছেন, কথা হচ্ছে এক সিরিয়াল কিলারকে নিয়ে। তবে এই খুনি কোনো সাধারণ সিরিয়াল কিনার নন, বরং একজন পেশাদার নারী কুস্তিগীর!

২০০৮ সালে মেক্সিকোর একটি আদালত তাকে ৭৫৯ বছরের কারাদণ্ড দেন। তার নাম হুয়ানা বারায্যা। হুয়ানা বারায্যা মেক্সিকোয় পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন ‘ম্যাটাবিহিতাস’ অর্থাৎ ‘বৃদ্ধা নারী ঘাতক’ নামে। মেক্সিকো সিটির উত্তরের এক গ্রামে জন্ম হুয়ানার। তার পছন্দ ছিল লুৎজা লিব্রে নামে এক জনপ্রিয় ধারার কুস্তি -যেখানে কুস্তিগীররা লড়াই করেন মুখোশ পড়ে। 

মেক্সিকো সিটির এক আদালতে ২০০৮ সালের ৩১শে মার্চ অন্তত ১১জন বৃদ্ধাকে খুন করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন হুয়ানা বারায্যা। কৌঁসুলিরা তার বিরুদ্ধে ৪০টির বেশি খুনের অভিযোগে মামলা করেছিলেন, কিন্তু সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে ১১টির বেশি মামলায় তারা তাকে দোষী প্রমাণ করতে পারেননি। মেক্সিকোর গণমাধ্যমে দুর্ধর্ষ এই অপরাধীর খুনের সংখ্যা নিয়ে নানা হিসাব দেওয়া হয়-কেউ বলে তিনি খুন করেছেন ২৫ জন বৃদ্ধাকে, কেউ বলে এ সংখ্যা ৫০এর কাছকাছি।

হুয়ানা খুনগুলো করতে শুরু করার পর মেক্সিকো সিটির নিরাপত্তাবাহিনী এক রকম দিশেহারা হয়ে পড়ে।  কোনোভাবেই তারা এই রহস্যের কূলকিনারা করতে পারছিলেন না। এসময় মেক্সিকো সিটির মেয়র, সে দেশের একজন নিউরো সাইকোলজিস্ট ড. ফেগি অস্ট্রস্কির সঙ্গে প্রথম টেলিফোনে যোগাযোগ করেন ২০০৫ সালের শেষের দিকে। মেয়র তাকে অনুরোধ করেন এই খুনের ঘটনাগুলোর কোনো যোগসূত্র আছে কিনা, সবগুলো একই খুনির কাজ কিনা এ বিষয়ে তদন্তে সহায়তা করতে।

কাউকে আটক করতে না পেরে পুলিশ এক পর্যায়ে শহরের হিজড়াদের ধরপাকড় শুরু করে। তাদের ধারণা জন্মায় খুনি একজন পুরুষ, নারীর ছদ্মবেশে খুন করছে। গোটা তদন্ত চলে বিশৃঙ্খলভাবে।

হুয়ানা বেছে বেছে শহরে একা বসবাসকারী বৃদ্ধাদেরই খুন করতেন। ড. অস্ট্রস্কি বলেন, সবগুলো খুনের একটা প্যাটার্ন ছিল। সবাই বয়স্ক নারী। সবাই থাকতেন একা। সবাইকে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে মারা হয়েছে। প্রত্যেকটি ঘটনায় খুনি কিন্তু দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢোকেনি। কেউ তাকে দরজা খুলে দিয়েছে। তাই পুলিশ ধারণা করছিল খুনি কোনো পুরুষই হবে।

এর মাঝেই রাজধানীতে এক ডজনের বেশি বৃদ্ধা নারী খুন হন ২০০৫ সালের শেষ নাগাদ। কাউকে তখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা যায়নি। এরপর ২০০৬ এর জানুয়ারিতে পুলিশ আশার আলো দেখতে পায়।

একটি বাড়িতে ৮২ বছরের এক বৃদ্ধাকে গলায় স্টেথিস্কোপ জড়িয়ে খুন করে পালানোর সময় ধরা পড়ে সন্দেহভাজন একজন। জানা যায়, ওই সন্দেহভাজন সাবেক কুস্তিগীর হুয়ানা বারায্যা। জেলখানায় নেওয়ার পর ড. অস্ট্রস্কির কাছে খুনের কথা স্বীকার করেন তিনি। ওই খুনটি ছাড়াও আরও দুটি খুনের কথা স্বীকার করেছিলেন বারায্যা, যদিও পরে সেই স্বীকারোক্তি তিনি ফিরিয়ে নেন।

তার সঙ্গে কথা বলার পর ড. অস্ট্রস্কি বলেন, ছোটবেলায় মায়ের কাছে নির্যাতন ও অবহেলার স্বীকার হয়েছেন বলেই বৃদ্ধা মহিলাদের প্রতি তার আক্রোশ ছিল বেশি।

ড. অস্ট্রস্কিকে হুয়ানা বারায্যা বলেছিলেন: ‘আমি মাকে ঘেন্না করতাম। আমার মা ছিল জঘন্য। আমার সৎ বাবাকে বরং আমি পছন্দ করতাম।’

টানা দু সপ্তাহ প্রতিদিন ড. ফেগি অস্ট্রস্কি হুয়ানার সঙ্গে জেলখানায় গিয়ে কথা বলেছিলেন। কিন্তু হুয়ানার যে আস্থা তিনি অর্জন করেছিলেন তা হঠাৎ করেইে একদিন ভেঙে পড়ে, ড. অস্ট্রস্কি হুয়ানা বারায্যাকে না জানিয়ে তার সৎ বোন ও তার মেয়ের সঙ্গে দেখা করার পর। পরদিন হুয়ানা প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং ড. অস্ট্রস্কিকে বলেন তার সঙ্গে তিনি আর দেখা করবেন না।

ড. অস্ট্রস্কি তার রিপোর্টে লিখেছিলেন মায়ের হাতে ছেলেবেলায় যে নির্যাতনের শিকার হন হুয়ানা বারায্যা, সেটাই তাকে পরিণত বয়সে সম্ভবত নারীঘাতক করে তুলেছিল।

তিনি আরও দেখেছিলেন হুয়ানার মস্তিষ্কের সামনের প্রকোষ্ঠটি ছিল মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশের থেকে বেশি সক্রিয়, যেটা তার সহিংস আচরণের সম্ভাব্য একটা কারণ হতে পারে বলে ড. অস্ট্রস্কির ধারণা।

এর দু’বছর পর ২০০৮ সালের বসন্তকালে তাকে ১১টি আলাদা খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং ৭৫৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সাজা হওয়ার পর ড. অস্ট্রস্কি  হুয়ানাকে দেখতে আর কখনও জেলখানায় যাননি। ৬৩ বছর বয়সী হুয়ানা বারায্যা আমৃত্যু জেল খাটছেন মেক্সিকো সিটির কারাগারে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।