Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )
‘তুই ফিরে এসে জমি লিখে না দিলে তোর ছেলেকে খুন করে নদীতে ফেলে দেব।’ সাবেক স্বামীর এমন হুমকিতে বিদেশ থেকে বাড়ি ফিরেই লাশ হলেন সাতক্ষীরার মোসলেমা খাতুন। তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে মাথা ও হাত-পা বিহীন খণ্ডিত মরদেহ দুর্বৃত্তরা ভাসিয়ে দেয় ইছামতি নদীতে। এ ঘটনায় রফিকুলের বর্তমান স্ত্রী রাবেয়া খাতুনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নিহত মোসলেমা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার হাড়দ্দহা গ্রামের রফিকুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী এবং আলিপুর গ্রামের জমিরউদ্দিনের মেয়ে।
গত ২৭ জুন রাতের কোনো এক সময় এই নৃশংস হত্যার ঘটনা ঘটে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার হাড়দ্দহা গ্রামে। পরের দিন মোসলেমার ভাসমান খণ্ডিত লাশ পাওয়া যায় ইছামতি নদীর দেবহাটা উপজেলার ভাতশালা এলাকায়। এর একদিন পর দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন দুই হাত পুলিশ উদ্ধার করে মোসলেমার সাবেক স্বামী রফিকুলের হাড়দ্দহার গ্রামের বাড়ির কাছ থেকে।
এ ঘটনায় রফিকুলের স্ত্রী রাবেয়া খাতুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে মানবপাচারকারী দালাল রেজাউলকেও। মোসলেমার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রথমে দেবহাটা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা এবং পরে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে।
মোসলেমার বাবা জমিরউদ্দিন ও স্বজনরা জানায়, প্রথম স্বামী মফিজুল ক্যানসারে মারা গেলে মোসলেমার দ্বিতীয় বিয়ে হয় হাড়দ্দহার রফিকুলের সঙ্গে। মোসলেমার এক ছেলে ও রফিকুলের প্রথম স্ত্রীর কয়েক ছেলেমেয়ে রয়েছে। বিয়ের পরই তিন বছর আগে রফিকুল মোসলেমার নামে ১১ শতাংশ জমি লিখে দেন এবং সেখানে একটি বাড়িও করে দেন।
তারা জানান, বনিবনা না হওয়ায় কয়েক মাস আগে মোসলেমা রফিকুলকে তালাক দিয়ে স্থানীয় মানব পাচারকারী দালাল রেজাউলের সহযোগিতায় সৌদি আরব চলে যান। তবে রফিকুল এই তালাক মেনে নেননি। কিছুদিন আগে থেকে রফিকুল মোসলেমাকে ফিরে এসে তার জমি ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তুই বাড়ি ফিরে আমার জমি ফেরত দে। না হলে তোর ছেলে মোস্তাকিমকে (চার বছর ছয় মাস) খুন করে ইছামতি নদীতে ভাসিয়ে দেব।’ আতঙ্কিত হয়ে মোসলেমা ছেলেকে প্রাণে বাঁচাতে সৌদিতে চাকরি ছেড়ে দিয়ে গত ২৭ জুন বাড়ি ফিরে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে মোসলেমার স্বজনরা জানান, মোসলেমাকে লাগেজ নিয়ে গ্রামেই একটি মাইক্রো থেকে নামতে দেখা গেছে। এরপর থেকে বাপের বাড়ির কেউই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। বিকেলে তার বাড়িতে গিয়ে ভেতর থেকে ছিটকিনি ও বাইরে থেকে দরজায় তালা মারা দেখে তারা। সন্ধ্যায় ওই ঘরের মধ্যে কান্নার শব্দ পাওয়া যায় বলেও জানায় তারা।
এ অবস্থায় তার বোন খাদিজার সঙ্গে মোসলেমা মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে কাগজে মোড়ানো একটি ধারালো কোপা ও একটি মোবাইল ফোনসহ আরও কিছু আলামত জব্দ করে।
মোসলেমার ভাই আবু সালেক জানান, মোসলেমাকে দেওয়া জমির সঙ্গেই রয়েছে ওই গ্রামের মো. মহসিনের মাছের ঘের ও জমি। মোসলেমার নামীয় ১১ শতাংশ জমি মহসিন কিনে নেওয়ার জন্য রফিকুলকে টাকা দেয়। এ জন্য রফিকুল ছেলে হত্যার হুমকি দিয়ে মোসলেমাকে বাড়িতে ফিরে আসতে বাধ্য করে। এরপরই এই হত্যার ঘটনা ঘটে।
এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মানিকলাল বলেন, ‘প্রধান আসামি রফিকুলকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাঁ প্রথম স্ত্রী রাবেয়াকে গ্রেপ্তার এবং মানব পাচারকারী দালাল পুষ্পকাঠি গ্রামের রেজাউলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি আমরা তদন্ত করছি।’
মোসলেমার স্বজনরা জানায়, বাড়ি ফেরার আগে সৌদি আরব থেকে মোসলেমা দালাল রেজাউলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। রেজাউল তাকে জানান, ফিরে এলে তাকে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে। এ নিয়ে রফিকুলের সঙ্গে বিরোধ চলছিল রেজাউলের।