রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা নিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারী। একই দিন গর্ভকালীন জটিল সমস্যা নিয়ে পাশাপাশি আসনে ভর্তি হন অন্তঃসত্ত্বা অপর এক নারী। গর্ভের সন্তান মৃত হওয়ায় তাকে গর্ভপাত করানোর কথা ছিলো। তবে তার গর্ভপাত না ঘটিয়ে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভপাত ঘটানো হয়েছে। এতে এই নারী শারীরিক অবস্থা এখন আরো সংকটজনক।
মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর চাচা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। রাতে সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে এই ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।
লিখিত অভিযোগ এবং ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জেলার সাটুরিয়া উপজেলার গর্জনা গ্রামের সুমন মিয়ার স্ত্রী পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা জিয়াসমিন আক্তার (২২) রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা দেখা দেয়। গত রোববার তাকে জেলা হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের ২০ নম্বর আসনে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার পর তিনি অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠেন।
এরই মধ্যে পরের দিন (সোমবার) জেলা সদরের কাটিগ্রাম এলাকার দেড় মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা শারমিন আক্তারকে প্রসবকালীন সমস্যা নিয়ে পাশের ২১ নম্বর আসনে ভর্তি করা হয়। দেড় বছরের এক সন্তান থাকায় অন্তঃসত্ত্বা এই নারীর স্বামীসহ পরিবারের সদস্যরা তাকে গর্ভপাত করানোর জন্য হাসপাতালে ভর্তি করেন।
মঙ্গলবার দুপুরে গাইনি বিভাগের চিকিৎসক নাসিমা আক্তারের নির্দেশে স্বাস্থ্য সহকারী (সেকমো) ফাতেমা আক্তার জিয়াসমিনকে একটি কক্ষে নিয়ে জোর করে গর্ভপাত ঘটান। এ সময় তার চিৎকারে মা নূর জাহান বেগম দৌড়ে ওই কক্ষে গিয়ে দেখেন তার মেয়েকে গর্ভপাত করা হয়েছে। এ সময় স্বাস্থ্য সহকারী ফাতেমা দৌড়ে পালিয়ে যান। এর পর জিয়ানমিন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
রাত আটটার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জিয়াসমিন আসনে শুয়ে কাতরাচ্ছেন। পাশে তার মাসহ স্বজনরা দাঁড়িয়ে আছেন।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানান, পাশের ২১ নম্বর আসনে অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভপাত ঘটানোর কথা ছিলো। তবে স্বাস্থ্য সহকারী ফাতেমা এসে জিয়াসমিনকে নিয়ে একটি কক্ষে জোর করে গর্ভপাত ঘটান।
হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. নাসিমা আক্তার বলেন, ঘটনার সময় তিনি গাইনি ওয়ার্ডে রোগী দেখছিলেন। এসব বিষয়ে চিকিৎসক রুমা আক্তারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
গাইনি বিশেষজ্ঞ রুমা আক্তার বলেন, গাইনি ওয়ার্ডের ২০ এবং ২১ নম্বর আসনে পাশাপাশি দুইজন অন্তঃসত্ত্বা রোগী রয়েছেন। ২১ নম্বর আসনের রোগীকে গর্ভপাত করানো কথা ছিলো। সেভাবেই তার চিকিৎসা চলছে। তবে ভুল করে এক স্বাস্থ্য সহকারী ২০ নম্বর আসনের রোগীকে নিয়ে গর্ভপাত ঘটানোর কক্ষে আসেন। এটা ওই স্বাস্থ্য সহকারীর ভুল করেছেন।
হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে স্বাস্থ্য সহকারী ফাতেমা আক্তারকে পাওয়া যায়নি। বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে তার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তার সাথে কথা বলা যায় নি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আরশ্বাদ উল্লাহ বলেন, হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের ২০ এবং ২১ নম্বর আসনে দুটি রোগী পাশাপাশি ভর্তি ছিল। ভুল করে অন্য রোগীর গর্ভপাত ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।