ভারতের একাধিক রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গে করোনার নজিরবিহীন সংক্রমণ শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর রাজ্যে চলমান বিধানসভা নির্বাচনের সভা, মিছিল ও রোড শো বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে একের পর এক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন মন্ত্রী, রাজনীতিক, চলচ্চিত্র জগতের তারকা ও বিশিষ্টজনেরা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ এবং সভা-সমাবেশের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা জারির পরই নির্বাচনি সভা ও কর্মসূচি বাতিল করেন মমতা। তবে ভার্চুয়ালি প্রচারের কাজ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের জন্য শুক্রবারের পূর্বনির্ধারিত পশ্চিমবঙ্গ সফর বাতিল করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর কিছুক্ষণ পরই নির্বাচনি সভা-সমাবেশের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে নির্বাচন কমিশন।
কমিশনের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী দুই দফার ভোটের আগে সকল বড় জনসভা, রোড শো ও মিছিল করা যাবে না। সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও কোনও রাজনৈতিক দল ৫০০ জনের বেশি জমায়েত করতে পারবে না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকেই এই নির্দেশনা কার্যকর হয়েছে।
এরপর টুইটে মমতা বলেন, ‘রাজ্য তথা দেশের কোভিড পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে নির্বাচন কমিশন একটি নির্দেশ জারি করেছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে আমি আমার সকল পূর্ব নির্ধারিত জনসভা বাতিল করছি। আগামীতে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মেই জনসংযোগ করব আমরা। আমাদের ভার্চুয়াল সভার কর্মসূচি শীঘ্রই জানিয়ে দেওয়া হবে।’
পশ্চিমবঙ্গের সব প্রচার সভা বন্ধ করে মোদি বলেছেন, বিজেপি এবার ভার্চ্যুয়াল প্রচার চালাবে। আজ বিকেল ৫টায় মোদি পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন নিয়ে ভাষণ দেবেন দিল্লি থেকে। বিজেপি বলেছে, বাংলার ৫৬টি কেন্দ্রে মোদি ডিজিটাল প্রচার করবেন। আজ রাজ্যের ৪ জেলার ৫৬টি সভাস্থলে জায়ান্ট স্ক্রিনে মোদির ভাষণ প্রচারিত হবে।
এদিকে কলকাতা হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার রাজ্যের করোনা পরিস্থিতিতে ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনের গাফিলতিতে ভর্ৎসনা জানান। গতকালই নির্বাচন কমিশন রাজ্যের বাকি দুই দফার নির্বাচনে প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আদালত বলেছেন, এখন থেকে আর রোড শো, মিছিল ও জনসভা করা যাবে না। ঘরোয়া সভা করলেও ৫০০–এর বেশি প্রতিনিধি যোগ দিতে পারবে না। সেই সভাও করতে হবে করোনার স্বাস্থ্য ও দূরত্ববিধি মেনে। এর আগে নির্বাচন কমিশন করোনার ভয়াবহতার কারণে নির্বাচনী প্রচার সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত না করার আদেশ দিয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গে করেনায় একের পর এক আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, মন্ত্রী ও বিশিষ্টজনেরা। গত দুই দিনের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন রাজ্যের কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, তৃণমূল নেত্রী মৌসুম বেনজির নূর, সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, রাজ্যের বিদায়ী মন্ত্রী শশী পাঁজা, বিদায়ী মন্ত্রী সাধন পান্ডে, তৃণমূল নেতা মদন মিত্র, অভিনেতা জিৎ, শুভশ্রী, চৈতী ঘোষাল, নাট্যব্যক্তিত্ব কৌশিক সেন, ইন্দ্রানী দত্ত, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে সর্বশেষ স্বাস্থ্য বুলেটিনে জানানো হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গে আরও ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৯৪৮ জন। এই খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যজুড়ে। কারণ, এখন পশ্চিমবঙ্গে চলছে নির্বাচনী মৌসুম। রাজ্যের ২৯৪ আসনের আট দফায় অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের গতকাল পর্যন্ত ছয় দফা শেষ হয়েছে। ২৬ ও ২৯ এপ্রিল বাকি দুই দফার নির্বাচন হওয়ার কথা। এই দুই দফায় উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বর্ধমান, দক্ষিণ দিনাজপুর, বীরভূমের ৭১টি আসনের নির্বাচন বাকি।