চট্টগ্রাম

অতিরিক্ত ভাড়ায় অতিষ্ঠ যাত্রী, প্রতিবাদ করলেই মিলে তিরস্কার


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

করোনার সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণে গণপরিবহণে আরোপ করা হয়েছে বিধি-নিষেধ। কিন্তু সরকারের এই আদেশ অমান্য করে চলছে নৈরাজ্য।

অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানো, বাড়তি ভাড়া আদায় সবকিছুই চলতে ইচ্ছেমাফিক। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের মারতে তেড়ে আসে চালক-হেলপার।

নগরের বিভিন্ন রুটে ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের গণপরিবহণে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের পাশাপাশি নেওয়া হচ্ছে আসন সংখ্যার অতিরিক্ত যাত্রী। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়ায় উভয় পক্ষ। সবচেয়ে বেশি নৈরাজ্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত তিন নম্বর রুটে চলাচলরত গণপরিবহণে।  

সাধারণ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিউমার্কেট যেতে ২০ টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও বর্তমানে আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া। এছাড়া এ রুটে সাধারণ সময়ে মুরাদপুর পর্যন্ত ভাড়া ১৩ টাকা নির্ধারিত থাকলেও নেওয়া হয় ২৫ টাকা। এছাড়া বহদ্দারহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১০ নম্বর রুটে সাধারণত ভাড়া ৩০ টাকা হলেও রাখা হচ্ছে দ্বিগুণ।

অন্যদিকে, ছোট ছোট গণপরিবহণ বিশেষ করে টেম্পু, লেগুনা, হিউম্যান হলারে উঠলেই দিতে হয় দ্বিগুণ ভাড়া। চকবাজার থেকে আগ্রবাদ পর্যন্ত ১৫ টাকা ভাড়া নির্ধারিত থাকলেও দিতে হচ্ছে ৩০ টাকা। নিউমার্কেট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত টেম্পুতে ভাড়া দিতে হয় ২০ টাকা। একই চিত্র কোতোয়ালী থেকে মুরাদপুর রুটেও। সব মিলিয়ে যাত্রীদের কাছে বাড়তি ভাড়া যেন গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে মাঠে নেই প্রশাসন। করোনাকালের প্রথম দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকলেও এখন যেন নিশ্চুপ। এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চান সাধারণ মানুষ।  

নয়ন রুদ্র নামে এক যাত্রী বলেন, প্রতিদিন গণপরিবহণ ব্যবহার করে অফিসে যাওয়া-আসা করতে হয়। কিন্তু প্রতিটি গাড়িতে যাত্রী সংখ্যা বেশি। স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। আবার ভাড়াও বেশি। যেখানে করোনা আমাদের জন্য অভিশাপে রূপ নিয়েছে, সেখানে আশীর্বাদ যেন গণপরিবহণের জন্য। তারা ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা নিচ্ছে। কিছু বললেই উল্টো ঝগড়া শুরু করে। দিনের পর দিন এমন অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি।

হাশেম আলী নামে আরেক যাত্রী বলেন, নিরাপদে যাওয়ার জন্য আমরা ৬০ শতাংশ বাড়তি ভাড়ায় যেতে বাধ্য হচ্ছি। কিন্তু তারা আমাদের ওপর জুলুম করে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে। এতসব অনিয়মের পরেও তদারকি নেই প্রশাসনের। প্রথমদিকে কয়েকদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে দেখা গেলেও এখন তাদের দেখা পাওয়ায় যায় না।

তিনি বলেন, দেশে সব কিছুরই দাম বাড়ছে। সে তুলনায় আমাদের মতো মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের আয় বাড়ছে না। সব কিছুতেই যদি বেশি বেশি দিতে হয় তাহলে না খেয়ে মরতে হবে। হয় গণপরিবহণ আগের মতো চলাচলের ব্যবস্থা করে দিক, না হলে প্রশাসনের নজরদারি আরও বাড়ানো হোক।  

বাড়তি ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হোসেন চৌধুরী বলেন, ৬০ শতাংশ ভাড়ার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা মানা হচ্ছে না। সুতরাং এই মুহুর্তে জরুরি ভিত্তিতে বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার হওয়া উচিত। বর্ধিত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি সরকারের নজরদারিতে আনা উচিত। সংক্রমণ পরিস্থিতি যেহেতু ভয়াবহ, গণপরিবহণে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আরও কঠোর হওয়া জরুরি।

সরকারে কোনো মনিটরিং না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য ও জনস্বার্থ দুটোই রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এ কাজটি যদি সরকার করতে ব্যর্থ হয় তার পরিণাম ভোগ করতে হবে জনগণকে। সুতরাং স্বাস্থ্যবিধিতে কঠোর হওয়ার পাশাপাশি মনিটরিং ব্যবস্থাও জোরদার করতে হবে।  

বাড়তি ভাড়া আদায়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের মনিটরিং আছে কি-না জানতে চাইলে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক বলেন, গণপরিবহণে ভাড়া নৈরাজ্য ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের কয়েকটি টিম প্রতিদিন মাঠে থাকছেন। বাড়তি ভাড়া আদায় ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যাত্রী পরিবহণ করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।