জাতীয়

আসামি হলেন ঘরের মালিক; বাদী দখলদার!


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

ক্রয় করা জমিতে তৈরি বসতঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের পর উল্টো ঘরের মালিকদের আসামি করে মামলা করার অভিযোগ উঠেছে। সেই মামলার বাদি হয়েছেন ঘরটি দখল চেষ্টায় ভাংচুরে অভিযুক্ত রিয়াজ উদ্দিন নামের একজন আইনজীবী। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজার সদরের ঝিংলজা ইউনিয়নের সরকারি কলেজ গেট এলাকায়।

মামলার আসমি হয়েছেন ঘর ও জায়গার দুই মালিক শাহাজান এবং আমিন উল্লাহ। তাদের সাথে আসামি করা হয়েছে রাশেদুল করিম, জলাল আহমেদ, ফজলুল করিমসহ অজ্ঞাত আরও ১৫ জনকে।

গত ১০ সেপ্টেম্বর সদর থানায় নথিভুক্ত হওয়া মামলায় বাদী রিয়াজ উদ্দিন এজাহারের দাবি করেন, ৭ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে একদল সন্ত্রাসী বেআইনিভাবে ঘরে প্রবেশ করে পরিবারের সদস্যদের শ্লীলতাহানি, মারধর ও লুটপাট করেন। এতে দুই লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির পাশাপশি আরও তিন লাখ ষোল হাজার টাকা লুট করা হয়েছে।

অথচ এর আগের দিন ৯ সেপ্টেম্বর তার ঘরে হসমলার হুমকি ও লুটপাট চালানোর দালিলিক তথ্য উপস্থাপন করে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ঘর ও জমির মালিক আমিন উল্লাহ।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, রিয়াজ উদ্দিনের নেতৃত্বে স্থানীয় ওয়াজ উদ্দিনসহ চিহ্নিত ভূমিদস্যু চক্র দেশীয় অস্ত্রসহ তার বাড়ীতে হানা দিয়ে বসতভিটা জবর দখলের চেষ্টা করেন। এসময় তাদের বাঁধা দিতে গেলে আমিন উল্লাহকে প্রাণে মারার হুমকি দেন এবং ঘরের গুরুত্বপূর্ণ দলিল ও কাগজপত্র নিয়ে যান। এসময় জাতীয় সেবা ৯৯৯-কল দিলে সদর থানা পুলিশ তাকে থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। এরপর তিনি লিখিত অভিযোগ করেন।

আমিন উল্লাহ জানান, স্থানীয় কামরুন্নাহারের কাছ থেকে চলতি বছরের শুরুতে নিজে ও শাহাজান যৌথভাবে সদরের ঝিংলজা মৌজার সৃজিত বিএস খতিয়ান নং-২৫০৩ ও ১২৬৮৫ এর ১৪১৬১/৩৮৩৭৩, ১৪১৬০/২৪৮৬২ দাগের আন্দর দশমিক শূন্য ৯ একর নাল এবং ভিটা জমি ক্রয় করেছি। জমিটি তখন থেকে আমাদের দখলে রয়েছে।

অন্যদিকে, ভূমিদস্যু রিয়াজ উদ্দিন একই দাগের জমি চৌহদ্দি উল্লেখ করে মোক্তার আহমদে নামের অপর ব্যক্তির কাছ থেকে আমাদের পার্শ্ববর্তী কিছু জায়গা ক্রয় করেছেন। সেখানে তিনি বসতি গড়ে একজনকে বসবাস করার জন্য দিয়েছেন।

কিন্তু হঠাৎ কোন কারণ ছাড়া লোভের বসে আমাদের ভিটেভাটি দখলের চেষ্টা করে যাচ্ছেন রিয়াজ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি চিহ্নিত ভূমিদস্যু চক্র। তাদের অপচেষ্টা প্রতিহত করতে আমি আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। আদালত আমার পক্ষে ১৪৪ ধারার আদেশ দিয়েছেন। আদালতের প্রতিবেদনও আমার পক্ষে এসেছে। পাশাপশি শান্তিপূর্ণ ও স্থানীয়ভাবে বিরোধ মিটানোর জন্য একজন আইনজীবী, স্থানীয় মেম্বার ও করিম নামের একজনের সমন্বয়ে বিচার রয়েছে। এরপরও আমার ঘরে হামলা ও ভাঙচুর করে আমাকে আসামী করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।

সরেজমিন গিয়ে অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। স্থানীয়রা বলছে, একজনের উস্কানিতে অন্যের জমি দখলের চেষ্টা করছেন রিয়াজ উদ্দিন।

এদিকে, অন্যের জমি দখল চেষ্টার কারণে রিয়াজ উদ্দিনকে জমি বিক্রি করা মোক্তার আহমেদ আদালতে একটা লিখিত জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি লিখেন, রিয়াজ উদ্দিনকে দলিলমূলে ও চৌহদ্দি উল্লেখ করে জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছি, সেখানে তিনি দখলে রয়েছেন। দখল চেষ্টা চালানো জমি আমার কাছ থেকে ক্রয় করেছেন দাবি করলেও সে জমি আমার নই। একজন আইনজ্ঞের কাছে এ ধরনের ঘটনা কখনো কাম্য নয়।

অভিযোগ প্রসঙ্গে রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ওটা আমার ক্রয় করা জমি- আমার দখলে রয়েছে। জাল দলিল সৃষ্টি ও জমির মূল মালিক মোক্তার আহমেদের লিখিত জবানবন্দি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি দলিল জাল করিনি-তারা করেছে। হয়তো মোক্তার আহমেদের জবানবন্দিও জাল করা হয়েছে।

এদিকে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা।

অভিযোগ উঠেছে, কক্সবাজার শহর ও সদরের বিভিন্ন এলাকায় পরিকল্পিতভাবে আইনশৃংঙ্খলা অবনতি ঘটিয়ে একটি চক্র আসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। এ কারনে দিনদিন আইনশৃংঙ্খলা অবনতি হচ্ছে। বিশেষ করে সদরের বিএমখালী ও ঝিংলজা এলাকায় প্রতিনিয়ত উস্কানির মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিরহ মানুষকে আসামী ও জমির মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। চক্রটির সাথে জড়িতের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।

দখলদারকে বাদী বানিয়ে জায়গার মালিকদের আসামি করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম উদ্দিন বলেন, মূলত জমির মালিক কে সেটা পুলিশের দেখার বিষয় নয়- এটি দেখবে আদালত। সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই-বাছাই ও ঘরে কাদের লোকজন রয়েছে সে তথ্যের ওপর ভিক্তি করে মামলাটি নথিভুক্ত হয়েছে। পরবর্তী অধিক তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আদালতের আদেশ ও জমির মালিকের জবানবন্দি ও দলিলের বিষয়ে অবগত করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদালত যদি কোন প্রকার সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে সেটাই বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পিতভাবে উস্কানি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটিয়ে পুলিশের সহযোগিতায় বাণিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করেন পুলিশ কর্মকর্তা সেলিম।