প্রধান পাতা

ইউটিউব দেখে বোমা বানায় সামিউল


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর মুন্সীগঞ্জে একটি কাপড়ের দোকানে অল্প বেতনের চাকরি নেয় কিশোর সামিউল (ছদ্মনাম)। কিন্তু স্বল্প সময়ে ধনী হওয়ার আশায় সেখান থেকে পালায়। ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ক্রাইম প্যাট্রল দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে পা বাড়ায় অন্ধকার পথে। এর পর চাঁদা দাবি ও বোমা বানানোর ছক আঁকে।

এ জন্য অপরাধভিত্তিক হিন্দি সিনেমা ও সিরিয়াল দেখতে শুরু করে সামিউল। একপর্যায়ে হিন্দি ভাষা ও সন্ত্রাসী পরিচয়ে হুমকি-ধমকি দেওয়ার কৌশল রপ্ত করে। ইউটিউব দেখে শেখে নকল বোমা বানানোর কৌশল।

এর পরই পূর্বপরিচিত হুমায়ুন কবির নামে গুলশানের এক ব্যবসায়ীকে ফোন করে সামিউল (ব্যবসায়ীর গ্রামের বাড়ির কেয়ারটেকারের ছেলে) নিজেকে ভারতীয় শীর্ষ সন্ত্রাসী (উপমহাদেশের কুখ্যাত মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছোটা শাকিল) পরিচয় দিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। না দিলে বোমা মেরে সপরিবারে উড়িয়ে দেওয়ার ফাঁদ পাতে। ভয় দেখাতে ওই ব্যবসায়ীর গাড়িতে সামিউল আটকে দেয় নকল বোমা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। গত বুধবার মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এ সময় তার কাছ থেকে চাঁদা দাবির ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির প্রধান একেএম হাফিজ আক্তার। তবে কিশোর অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার পরিচয় প্রকাশ করেননি। গতকাল কিশোরটিকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। আদালত আগামী সোমবার শুনানির দিন ধার্য করে তাকে টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার বলেন, ১১ জানুয়ারি দিবাগত রাত ৪টার দিকে ভারতীয় এক শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয় দিয়ে মুঠোফোনে গুলশানের ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবিরের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না দিলে বোমা মেরে তার পরিবারের সদস্যদের উড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া। পরদিন বিকাল ৪টার দিকে পার্কিং করা অবস্থায় হুমায়ুন কবিরের প্রাইভেট কারের চালক গাড়ির নিচে বোমাসদৃশ বস্তু দেখতে পান। বিষয়টি তিনি পুলিশকে জানালে ডিএমপির বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণ দল এসে বোমাসদৃশ বস্তুটি উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় ব্যবসায়ী হুমায়ুন বাড্ডা থানায় একটি মামলা করেন।

ডিএমপির এই অতিরিক্ত কমিশনার আরো বলেন, গ্রেপ্তার কিশোর মূলত ব্যবসায়ীর গ্রামের বাড়ির দিকের পরিচিত। অল্প সময়ে ধনী হওয়ার আশায় সে হুমায়ুন কবিরের পরিবারকে টার্গেট করে। ঘটনার দুই মাস আগ থেকেই সে হুমায়ুন কবিরের পরিবারকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায়ের পরিকল্পনা করে। সে হিন্দি সিনেমা, সিরিয়াল, ইউটিউব দেখে নকল বোমা বানানো এবং সন্ত্রাসী পরিচয়ে হুমকি-ধমকি দেওয়ার কৌশল শেখে। হিন্দি সিনেমা দেখার কারণে হিন্দি ভাষায় কথা বলার দক্ষতা অর্জন করে। এর পর সে লাল স্কচটেপ, পাইপ, ইলেকট্রিক তার, পেনসিল ব্যাটারি ও অন্য উপকরণ দিয়ে বোমাসদৃশ বস্তুটি তৈরি করে নিজের কাছে রাখে। হুমায়ুন কবির ঢাকা থেকে লৌহজংয়ে গিয়ে তার এক আত্মীয়ের জানাজায় অংশ নেন। তখন ওই কিশোর সুযোগ বুঝে হুমায়ুন কবিরের প্রাইভেট কারের নিচে স্কচটেপ মোড়ানো বোমাসদৃশ বস্তুটি আটকে দিয়ে চাঁদা দাবি করে।

সম্প্রতি রাজধানীতে বিভিন্ন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামে চাঁদা দাবি করার মতো ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশে শীর্ষ সন্ত্রাসী বলতে কিছু নেই। কেউ যদি এমন প্রতারণার শিকার হন, তা হলে দ্রুত বিষয়টি পুলিশকে জানাতে অনুরোধ করেন পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার।