জাতীয়

ঈদের আগে স্বপ্ন পুড়ে ছাই


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মালামাল গুদামজাত করা ছিল পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারের প্রায় প্রতিটি দোকানে। করোনার কারণে গত কয়েক বছর ঈদে ভালো ব্যবসা করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। তাই কয়েক বছরের লোকসান এবার পুষিয়ে নেয়ার আশা ছিল তাদের। সব সঞ্চয় একত্র করে তারা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটা এই আগুনে ছাই হয়ে উড়ে গেছে।

আবছার উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী জানান, ঈদকে সামনে রেখে তার দোকানে ৩ কোটি টাকার মামামাল ছিল। গত সপ্তাহেই এক কোটি ২২ লাখ টাকার মালামাল তুলেছেন, বাকিটা আগের তোলা। তিনি বলেন, আগুন লাগার পর অনেক টাকার কাপড় লুটও হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বঙ্গবাজারই দেশের সব থেকে বড় পাইকারি কাপড়ের মার্কেট। ঈদকে কেন্দ্র করে রোজা শুরুর পর থেকেই ধীরে ধীরে জমে ওঠে এ মার্কেটের ব্যবসা। এ বছরও জমতে শুরু করেছিল বঙ্গবাজারের কেনাবেচা। কিন্তু হঠাৎ লাগা আগুন সব কেড়ে নিয়েছে ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদে ভালো বেচাকেনার আশায় যার যা সম্বল ছিল সবটুকু দিয়ে মালামাল তুলেছিলেন তারা। তবে কী পরিমাণ মালামাল দোকানগুলোতে গুদামজাত করা হয়েছিল সেটার হিসাব কেউ বলতে পারছেন না।

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, কেবল নিম্নবিত্ত নয়, নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত এমনকি উচ্চবিত্তরাও এখানকার ক্রেতা। ঈদের আগে দোকান মালিকরা সঞ্চয়, পরিবারের নারী সদস্যদের গয়না বিক্রি অথবা বন্ধক, এমনকি ঋণ করেও দোকানে মালামাল তোলেন। তারা সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব।

মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর এ বাজারে লাগা আগুন প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে আশপাশের মার্কেট পুড়ে প্রায় ছাই হয়ে গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ছাই থেকে শেষ সম্বলটুকু কুড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্যবসায়ীরা জানান, এই আগুনে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করেছে বাতাস। তারা বলেন, কোথাও ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর জন্য কাজ শুরু করলে বাতাসের কারণে অন্য কোথাও আগুনটা ছড়িয়ে পড়েছে। যার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরেও কিছু সময় পরপর আগুন জ্বলে উঠতে দেখা যায়। আর এভাবেই দেশের সবচাইতে বড় পোশাকের পাইকারি মার্কেট পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এর আগেও কয়েকবার এখানে আগুন লাগলেও এবারের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি নেয়ার একমাত্র নদী বুড়িগঙ্গা। কিন্তু সেখান থেকে পানি দেবার মতো ব্যবস্থা নেই। সেটা করা সম্ভব হলে অন্তত বাতাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পানি নেভানোর সুযোগ থাকত।

আগুন নেভার পর কোনো কোনো দোকানে বড় বড় কাপড়ের স্তূপ অক্ষত থাকতে দেখা যায়। সেগুলো ভেতরে থেকে টেনে বের করার চেষ্টা করছিলেন ব্যবসায়ীরা। সেখানে দেখা যায়, রাসেল নামের একজন ব্যবসায়ী কিছু অক্ষত কাপড় বের করতে পেরেছেন। আর তাতেই তিনি খুশি।

স্থানীয়রা জানান, আগুন লাগার পর থেকে অনেকেই মার্কেট থেকে কাপড় সরানোর চেষ্টা করছেন। আগুনের কারণে অনেকে আবার ভেতরে যেতে পারেননি। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে অক্ষত কাপড় কুড়াতে শুরু হয় হুলস্থুল। দেখা যায়, অনেকেই কাপড় বের করতে চেষ্টা করছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে বঙ্গবাজার মার্কেটের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গিয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, এই আগুনের ঘটনায় যে ক্ষতি হয়েছে সেটা পূরণ করার মতো নয়। এখানে পাঁচ হাজারের বেশি দোকান ছিল। সব পুড়ে শেষ। কেউ কিছুই বের করতে পারেনি। ২ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।