জাতীয়

এক সিদ্ধান্তে বিপর্যস্ত ছাত্রদল


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার চার দিনের মাথায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৩২ নেতার পদ স্থগিত করা হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এই এক সিদ্ধান্তের পর কমিটিতে থাকা অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে জমা হচ্ছে অভিযোগের পাহাড়। এ পর্যন্ত আরও ৫৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এ তালিকায় খোদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও রয়েছেন। এ পরিস্থিতিকে ছাত্রদলের বিপর্যস্ত অবস্থা আখ্যা দিয়েছেন সংগঠনের কয়েকজন নেতা।

ছাত্রদল নেতাদের বিরুদ্ধে মূলত বিয়ে করা, নির্দিষ্ট বয়সসীমা পার করা, অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলা হচ্ছে। সংগঠনের নেতারা বলছেন, যাচাই-বাছাই ছাড়া ওই ৩২ জনের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় উৎসাহিত হয়ে নতুন করে অন্য নেতাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তোলা হচ্ছে। পরিস্থিতির জটিলতা অনুধাবনের পর এখন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খোঁজ নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ছাত্রদলের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগ ওঠা বাকি ৫৫ জনের মধ্যে ৪০ জনের বিষয়েও নতুন করে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে প্রতিদিনই অভিযোগ আসছে।

ছাত্রদলের একজন সহসভাপতি ও একজন যুগ্ম সম্পাদক আমাদের সময়কে বলেন, যে মুহূর্তে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, সেই সময়ে যাচাই-বাছাই ছাড়া হঠাৎ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ৩২ জনের পদ স্থগিত করা হলো। এই একটি সিদ্ধান্তের পর নানা প্রান্ত থেকে ছাত্রদল নেতাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসতে থাকে।

ওই দুই নেতা বলেন, আমাদের জানামতে- ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলালকে এসব অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি পদ স্থগিত নেতাদের বাসাবাড়িতেও খোঁজ নিচ্ছেন। জানতে চাইলে আজিজুল বারী হেলালও আমাদের সময়ের কাছে ওই ৩২ নেতার বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। ছাত্রদলের একাধিক

নেতা বলেন, পূর্র্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন ‘পদবঞ্চিত’ কিছু নেতা ও তাদের অনুসারীরা। বিক্ষুব্ধরা যে ৩২ জনের বিরুদ্ধে নানা লিখিত অভিযোগ তোলেন, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর পর থেকে অভিযোগ আসতেই থাকে।

ছাত্রদল নেতারা জানান, ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গোপন ভোটে ফজলুর রহমান খোকন ছাত্রদল সভাপতি ও ইকবাল হোসেন শ্যামল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর পর গত ১৭ এপ্রিল খোকন ও শ্যামল কমিটি বিলুপ্ত করে কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাইফ মাহমুদ জুয়েলের নেতৃত্বে ‘সুপার ফাইভ’ কমিটি দেওয়া হয়। এ দুই কমিটিই তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশে পরিচালিত হয়ে আসছে।

ছাত্রদলের একজন সহসভাপতি আমাদের সময়কে বলেন, ছাত্রদলের সভাপতি রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল নেতৃত্বাধীন কমিটি ঘোষণার পর থেকেই ক্ষুব্ধ হয় একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেট বর্তমান কমিটিকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, সিন্ডিকেটের পাতা ফাঁদে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পা দিয়েছেন। কারণ যাদের পদ স্থগিত করা হয়েছে, তাদের পারফরম্যান্সের বিষয়ে দলের সবাই অবগত। তবে এই সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার আগেই একটি অভিযোগ বাক্স খোলা হয়। তখন ওই বাক্সে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়, তাদের বাদ রেখেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর থেকে এতে স্থান পাওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসতে থাকে। এ ধারা অব্যাহত রয়েছে।

ছাত্রদলের একজন সহসভাপতি বলেন, সংগঠন যে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, সবার মাঝে এখন ঘৃণা জন্মেছে। এখন অভিযোগ মানেই যেন পদ স্থগিতের একটা আতঙ্ক পেয়ে বসেছে সবাইকে। এ পর্যন্ত ১০-১২টি তালিকা দেখেছি। সুপার এডিট করে একটি মেয়ের সঙ্গে একজন নেতাকে জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগের আওতা থেকে এখন খুব কমসংখ্যক নেতা বাদ আছে। এটি একটি খারাপ উদাহরণ হয়ে থাকবে।

ছাত্রদলের বর্তমান পরিস্থিতি দেখার পর ছাত্রদলের সাবেক একজন সভাপতি আমাদের সময়কে বলেন, বিয়ের অপশনটা তুলে দেওয়া উচিত। বয়সসীমা বা ছাত্রত্ব থাকলে তারা ছাত্রদল করতে পারবে- এমন ঘোষণা আসা উচিত। ওই নেতা বলেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমানের সঙ্গেও কথা বলবেন।

পদ স্থগিত করা ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক জিয়ন বলেন, আমার বিরুদ্ধে বিয়ের অভিযোগ করা হয়েছে তা যদি প্রমাণ দিতে পারেন তা হলে যে কোনো শাস্তি মেনে নেব।

পদ স্থগিত করা সহসভাপতি কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, অভিযোগ আসতেই পারে। সেটি যাচাই-বাছাই করে কিংবা তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে কিংবা প্রমাণ সহকারে পদ স্থগিত রাখলে তাদের কোনো কষ্ট হতো না।