Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )
পাঁচ দিন পরেই বর্ষা। তার আগেই চলছে ঝড়বৃষ্টির দাপট। দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঠে-ঘাটে-ছাদে বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনা বেড়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও বজ্রাঘাতে প্রতিদিন অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। মহামারির মধ্যে ঘরবন্দী থাকার পরও বজ্রঝড়ে কৃষক, জেলে, তরুণ ও কিশোরের মৃত্যু থামছে না। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই সারা দেশে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয় ৫৬ জনের।
তবে কী কারণে বাড়ছে বজ্রপাত, কেন হচ্ছে এতো মৃত্যু?
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বজ্রপাতের তীব্রতা বেড়েছে। ‘ইভেন্টের পার্টিকুলার ডে বা শর্ট পিরিয়ডে’ বেশি বজ্রপাত বৈশিষ্ট বেড়ে গেছে। সাম্প্রতিককালে বজ্রপাতের এমন ঘটনাকে ‘শর্ট লিফট লাইটেনিং ফেনোমেনা’ বলা হয়- এর ঘনঘটা বাড়ছে।
তবে বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার কারণ কী?
বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার একটা অন্যতম কারণ যেমন বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য, তেমনই আর একট কারণ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। আর এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত দূষণ। দূষণের মাত্রা যত বাড়ছে, গড় তাপমাত্রা তত বাড়ছে। ফলে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হওয়ার আদর্শ পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।
বজ্রঝড়ের সময় সাধারণত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট বজ্রপাতের ভয় থাকে। কিউমুলোনিম্বাস মেঘ তৈরি হয়, তখনই বজ্রঝড় হয়ে থাকে। কিউমুলোনিম্বাস মেঘ হচ্ছে খাড়াভাবে সৃষ্টি হওয়া বিশাল আকৃতির পরিচালন মেঘ; যা থেকে শুধু বিদ্যুৎ চমকানো নয়, বজ্রপাত-ভারি বর্ষণ-শিলাবৃষ্টি-দমকা-ঝড়ো হাওয়া এমনকি টর্নেডোও সৃষ্টি হতে পারে।
বায়ুমণ্ডলে বাতাসের তাপমাত্রা ভূ-ভাগের উপরিভাগের তুলনায় কম থাকে। এ অবস্থায় বেশ গরম আবহাওয়া দ্রুত উপরে উঠে গেলে আর্দ্র বায়ুর সংস্পর্শ পায়। তখন গরম আবহাওয়া দ্রুত ঠাণ্ডা হওয়ায় প্রক্রিয়ার মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে বজ্রমেঘের সৃষ্টি হয়।
কিন্তু বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা কেন এত বাড়ছে?
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দেখা যাচ্ছে শহরের থেকে গ্রামীণ এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যু বেশি হচ্ছে। ফাঁকা মাঠে চাষের কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু হচ্ছে অনেকের।
এর অন্যতম কারণ কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার করা উন্নত যন্ত্রপাতি। বর্তমানে চাষের কাজে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেশি হয়। আর এই সব যন্ত্রে বিদ্যুৎ আকর্ষিত হয়। সেই সঙ্গে ফাঁকা মাঠে কোনও উঁচু জায়গা না থাকায় মানুষের উপর বজ্রপাতের ঘটনা অনেক বেশি হচ্ছে।এছাড়াও বড় বড় গাছ কমে যাওয়ায় বজ্রাঘাতে মৃত্যু বেড়েছে বলছেন গবেষকরা
বাংলাদেশে কোন এলাকায় বেশি ব্জ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে?
চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, ফেনী, টাঙ্গাইল, রংপুর, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, নেত্রকোনা, সিলেট ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বজ্রাঘাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের মধ্যাঞ্চলই বজ্রপাতের হটস্পট। এর মধ্যে তথ্য পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞরা জানান, নেত্রকোনা, নরসিংদী ও কুমিল্লা- এ তিন জেলাতেই ব্জ্রপাত বেশি হতে পারে।
আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেশের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ড. আবদুল মান্নান বলেন, দেশে বজ্রপাতের ‘হটস্পট’ হচ্ছে মধ্যাঞ্চল। মার্চ-এপ্রিল-মে মাস বজ্রপাতের জন্য অনকূল পরিবেশ বিরাজের প্রবণতা থাকলেও মৌসুমগত পরিবর্তনের কারণে জুন-জুলাইয়েও তা বিস্তৃত হতে পারে বলে জানান তিনি।
বজ্রপাত থেকে কীভাবে সতর্ক থাকবেন?
বজ্রপাতের এ দুর্যোগে প্রাণহানি ও আহত হওয়া ঠেকাতে মানুষের সচেতনতা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বজ্রপাতে মৃত্যু বা হতাহত হবার ঘটনা এড়াতে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক নির্দেশনাগুলো–
* বজ্রঝড় সাধারণত ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করুন। অতি জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে রাবারের জুতা পরে বাইরে যাবেন, এটি বজ্রঝড় বা বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা দেবে।
* বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা খোলামাঠে যদি থাকেন তাহলে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসে পড়তে হবে।
* বজ্রপাতের আশংকা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। ভবনের ছাদে বা উঁচু ভূমিতে যাওয়া উচিত হবে না।
* বজ্রপাতের সময় যে কোন ধরণের খেলাধুলা থেকে শিশুকে বিরত রাখতে হবে, ঘরের ভেতরে অবস্থান করতে হবে।
* খালি জায়গায় যদি উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ধাতব পদার্থ বা মোবাইল টাওয়ার থাকে, তার কাছাকাছি থাকবেন না। বজ্রপাতের সময় গাছের নিচে থাকা বিপজ্জনক ।
* বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ ধরতে না যাওয়াই উচিৎ হবে। সমুদ্রে বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে।
* যদি কেউ গাড়ির ভেতর অবস্থান করেন, তাহলে গাড়ির ধাতব অংশের সাথে শরীরের সংযোগ রাখা যাবে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে দেড়’শোর মত মানুষ মারা যান। বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে হাওর অঞ্চলে। মানুষ ছাড়াও বজ্রপাতে প্রচুর গবাদি পশুও মারা যায়। মৃত্যুর সংখ্যা বিচার করে বাংলাদেশের সরকার বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে। তাই ব্জ্রপাত থেকে বাঁচতে সচেতনতা গড়ে তুলুন, ঝড়বৃষ্টির সময় নিরাপদ স্থানে থাকার চেষ্টা করুন।