আন্তর্জাতিক

‘কুমারীত্ব পরীক্ষা’ বন্ধের নির্দেশ পাকিস্তানের আদালতের


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

ধর্ষণের শিকার নারীদের তথাকথিত ‘কুমারীত্ব পরীক্ষা’ নিষিদ্ধ করেছেন পাকিস্তানের আদালত। এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মানবাধিকারকর্মীরা।

বিবিসির আজ বুধবারের খবরে জানা যায়, লাহোর হাইকোর্টের বিচারক আয়েশা মালিক বলেছেন, এ ধরনের পরীক্ষা অমানবিক। এই পরীক্ষার কোনো ফরেনসিক মূল্য নেই। এই আদেশের ফলে পাঞ্জাব প্রদেশে ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ বন্ধ হবে।

মানবাধিকারকর্মীরা পাঞ্জাব প্রদেশে এই পরীক্ষা নিয়ে দুটি আবেদন করেন। এরপরে আদালত এই আদেশ দেন।মানবাধিকারকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই ‘কুমারীত্ব পরীক্ষা’ বাতিলের দাবি জানাচ্ছিলেন। ধর্ষণের ঘটনায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে এই ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ করা হয়। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এ ধরনের পরীক্ষার বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই।

পাঞ্জাবের মতো পাকিস্তানের অন্য প্রদেশেও ‘কুমারীত্ব পরীক্ষা’ বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সিন্ধু হাইকোর্টে এ ধরনের আরেকটি আবেদন অপেক্ষমাণ রয়েছে।

লাহোরে আবেদনকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী সমির খোসা বিবিসিকে বলেন, যৌন সহিংসতার ঘটনায় ‘কুমারীত্ব পরীক্ষার’ কোনো ফরেনসিক মূল্য নেই। তিনি আশা করেন, লাহোর হাইকোর্টের এই আদেশের ধারাবাহিকতায় যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে এবং ‘কুমারীত্ব পরীক্ষা’ একেবারে বন্ধ করে দেবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, টু ফিঙ্গার টেস্টের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন।বিজ্ঞাপন

পাকিস্তানের আদালতের বিচারক আয়েশা মালিক বলেন, এ ধরনের পরীক্ষার বৈজ্ঞানিক কোনো প্রয়োজন নেই। অমানবিক এই পরীক্ষার মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার যিনি হয়েছেন, তাঁর ওপর সন্দেহ পোষণ করা হয়। অপরাধীর দিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া হয়।

লাহোর হাইকোর্টের বিচারক আয়েশা মালিক বলেছেন, এ ধরনের পরীক্ষা অমানবিক। এই পরীক্ষার কোনো ফরেনসিক মূল্য নেই। এই আদেশের ফলে পাঞ্জাব প্রদেশে ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ বন্ধ হবে

লাহোর হাইকোর্টে আবেদনকারীদের একজন সাহার বান্দিয়াল বলেন, নারীদের অবমূল্যায়নের জন্য এ ধরনের অবৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করা হতো।

নারী অধিকারকর্মীরা বলেছেন, যৌন সহিংসতার ঘটনায় নারীদের অপবাদ দেওয়ার প্রবণতা থেকেই এ ধরনের ‘কুমারীত্ব পরীক্ষা’ করা হয়। পাকিস্তানে ধর্ষণের ঘটনায় খুব কম আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সামাজিক অপবাদের ভয়েই এমনটা করা হয়। আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হলেও দুর্বল আইন ও জটিল নিয়মকানুনের কারণে কম অপরাধীই শাস্তি পায়।

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে লাহোরে এক নারীকে তাঁর সন্তানদের সামনে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। রাস্তার ধারে গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ চলে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তির জন্য নতুন ধর্ষণ বিল অনুমোদন করেন।

তবে এরপরও পাকিস্তানে ‘কুমারীত্ব পরীক্ষা’ চলতে থাকে। জাতিসংঘ ও ডব্লিউএইচও বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় কমপক্ষে ২০টি দেশে ‘কুমারীত্ব পরীক্ষা’ চালু রয়েছে। জাতিসংঘ ও ডব্লিউএইচও এই পরীক্ষা বন্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে।

২০১৩ সালে ভারত এই পরীক্ষা বন্ধ করে। বাংলাদেশে ২০১৮ সালে এই পরীক্ষা বন্ধ করা হয়। একই বছর আফগানিস্তানেও এই পরীক্ষা বন্ধ করা হয়। তবে দেশটির ইনডিপেনডেন্ট হিউম্যান রাইটস কমিশন গত সেপ্টেম্বরে বলেছেন, এখনো নারীদের জোর করে এ ধরনের পরীক্ষায় বাধ্য করা হয়।

পাকিস্তানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী চৌধুরী ফাওয়াদ আদালতের এই সিদ্ধান্তকে অনুসরণীয় বলে অভিহিত করেছেন।

মানবাধিকারকর্মী ও আবেদনকারীদের একজন আইমান রিজভি টুইটে বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে যেসব নারী আন্দোলন করেছেন, তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ভবিষ্যতেও আন্দোলন চলবে।’