জাতীয়

কুমিল্লার ঘটনার ছক কষে চারজনে আগের রাতে


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

কুমিল্লা নগরীর নানুয়া দীঘিরপাড়ে দর্পণ সংঘের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। আর সেই পরিকল্পনার ছক কষা হয় আগের দিন রাতে স্থানীয় দারোগাবাড়ী শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরী (রহ)-এর মাজারের মসজিদে বসে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে দায়ের মামলায় গ্রেপ্তার চারজনের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এমনটাই ধারণা করছে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন- প্রধান অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন, ৯৯৯ নম্বরে পুলিশকে খবর দেওয়া ইকরাম হোসেন রেজাউল, দারোগাবাড়ীর শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরী মাজারের দুই সহকারী খাদেম হাফেজ হুমায়ূন ও ফয়সল। পুলিশের কাছে দেওয়া তাদের জবানবন্দি ঘেঁটেও একে অপরের সঙ্গে যোগসাজশ খুঁজে পাওয়ার দাবি করছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

পুলিশ বলছে, চারজনই ১৬১ ধারায় দেওয়া জাবানবন্দিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তবে নিজেদের যোগসাজশ বা পেছনে কে বা কারা জড়িতÑ তাদের নাম বলছেন না তারা। এসব বের করতে ইকবালসহ চারজনকেই সাত দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিথিলা জাহান নিপার আদালত গতকাল শনিবার দুপুরে তাদের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন। যদিও আসামি চারজনকে আদালতে তুলে প্রত্যেককেই ১০ দিন করে রিমান্ডে চেয়েছিল পুলিশ।

এ বিষয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর আহমেদ বলেন, ‘গ্রেপ্তার চারজনই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তবে ঘটনার ভেতরে ঘটনা অর্থাৎ পেছনে কারা; এমন স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কেন এ ঘটনা ঘটানোর ইন্ধন দেওয়া হয়েছে; এতে তাদের লাভ কী ছিলÑ এসব নানা প্রশ্নের রহস্য উদঘাটনের জন্যই চারজনকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আশা করি রিমান্ডে এসব তথ্য বের হয়ে আসবে এবং জনগণের কাছে সব রহস্য উন্মোচিত হবে।’

তানভীর আহমেদ বলেন, ‘শুক্রবার রাত ৯টা পর্যন্ত পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইকবালকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আর সেই জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখা, প্রতিমা থেকে গদা সরিয়ে নিয়ে পুকুরে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে কোন পুকুরে গদাটি ফেলেছেন, সেটি বলেননি। তাকে নিয়ে পুলিশ ওই গদা উদ্ধার করবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে অভিযানে যাবে। এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে।’

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘটনার দিন (১৩ অক্টোবর) গভীর রাতে নানুয়া দীঘিরপাড়ে দর্পণ সংঘের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রেখে যান ইকবাল হোসেন। মূলত পাশের মাজার থেকে কোরআন শরিফটি নিয়ে আসেন। পরে ওই মণ্ডপে হনুমান মূর্তির ঊরুর ওপর তা রেখে হনুমানের গদা নিয়ে যান। সেই গদাটি একটি পুকুরে ফেলে দেন। একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিওতেও ধরা পড়ে, রাত ২টার পর স্থানীয় দারোগাবাড়ী শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরী (রহ)-এর মাজার থেকে বেরিয়ে ইকবালকে পূজামণ্ডপের দিকে যান। তার হাতে ছিল বইজাতীয় কিছু। এর পর ৩টা ১২ মিনিটের দিকে তাকে পূজামণ্ডপের দিক থেকে ফিরে আসতে দেখা যায় আরেক ভিডিওতে, তখন তার হাতে ছিল একটি ‘গদা’।

পুলিশ সূত্র বলছে, ঘটনার দিন ভোরে পুলিশকে ৯৯৯-এ প্রথম ফোন করেন ইকরাম হোসেন রেজাউল। বিক্ষোভেও যোগ দেন তিনি। ইকবালও সবার সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দেন। ওই রাতে মাজারের মসজিদে একটি বৈঠক করেন তারা। বৈঠকে ইকবাল হোসেন, ইকরাম হোসেন রেজাউল, দারোগাবাড়ীর শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরী মাজারের দুই সহকারী খাদেম হাফেজ হুমায়ূন ও ফয়সল ছিলেন। তারা ওই রাতে নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করেই ঘটনাটি ঘটান। এদিকে ফেসবুক লাইভে ঘটনা প্রচারকারী ফয়েজ আহমেদকে নিয়েও তদন্ত হচ্ছে। তার সঙ্গে ওই চারজনের কোনো যোগসাজশ আছে কি না, তাও তদন্ত করা হচ্ছে। ফয়েজ আহমেদ লাইভের কথা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

নানুয়ার দীঘিরপাড় পূজামণ্ডপের ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে ফেসবুক লাইভে প্রচার করায় সেদিন সন্ধ্যায় ফয়েজকে আটক করা হয়। পরে পুলিশ বাদী হয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। ১৬ অক্টোবর মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়। সিআইডি ফয়েজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করলে শুক্রবার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজওয়ান বলেন, ‘ফয়েজ আহমেদ দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। প্রবাসে থাকাকালীন প্রতিনিয়ত স্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতেন। ফলে মোবাইলে ভিডিও কল ও ভিডিও ফুটেজ ধারণ করতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তিনি নানুয়ার দীঘিরপাড়ের একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন পাওয়ার খবর শুনেই সেখানে গিয়ে ফেসবুকে লাইভ করেন। কিন্তু তার জানা ছিল না, এ লাইভে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা তৈরি হবে।’ এ ঘটনায় ফয়েজের সঙ্গে কারও যোগসাজশ আছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘ফয়েজের সঙ্গে এখন পর্যন্ত কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তবে প্রযুক্তির সহায়তায় বিষয়টি অনুসন্ধান চলছে।’