জাতীয়

কোমরে রশি, হাতে হ্যান্ডকাফ থাকলেও ছিল না ডাণ্ডাবেড়ি


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

 সম্প্রতি ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও।

কারণ, তখন জঙ্গিদের কোমরে রশি, হাতে হ্যান্ডকাফ থাকলেও ছিল না কোনও ডাণ্ডাবেড়ি।

জেলকোড অনুযায়ী, দুর্ধর্ষ বন্দিদের এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে নেওয়ার সময় নিরাপত্তার জন্য পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়। সেটা এখনও বলবৎ আছে।

২০১৭ সালের ১৩ মার্চ হাই কোর্ট কর্তৃক কারা কর্তৃপক্ষকে দেয়া এক নির্দেশনায় বলা হয়, ‘আসামিকে কোমরে বেড়ি বা রশি দিয়ে দেশের কোনো আদালতে হাজির করা যাবে না। তবে নিরাপত্তার প্রয়োজনে আদালত প্রাঙ্গণে বেড়ি পরিয়ে আনা যাবে। সেক্ষেত্রে আদালত কক্ষে হাজিরাকালে সেগুলো খুলে ফেলতে হবে। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে যদি কোনো আসামিকে বেড়ি পরিয়ে আদালতে হাজির করার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নিতে হবে। ’ 

এমন নির্দেশনার পর থেকে পুলিশ আসামিদের ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে এজলাসে হাজির করে না। তবে এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে নেওয়ার সময় দুর্ধর্ষ বন্দিদের জেলকোড অনুযায়ী এখনও বেড়ি পরানো হয়।

এ নিয়ে মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) কাশিমপুর কারাগার থেকে একটি সূত্র জানান, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ সেদিন বন্দি আসামিদের কারাগারের গেট থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন। তারপর তারা নিয়ম অনুযায়ী প্রিজন ভ্যানে করে ঢাকার আদালতে নিয়ে যান। বন্দিদের সেখানে আদালতের হাজতখানায় দায়িত্বরত পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আদালতের হাজতখানায় পুলিশ কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে সময়মত আসামিদের আদালতের এজলাসে হাজির করে শুনানি শেষে আবারো হাজতখানায় নিয়ে আসে। তারপরে সেখান থেকে নিয়ম অনুযায়ী বন্দি আসামিদের আবারও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কারাগারে পৌঁছে দিবে। এটাই হচ্ছে নিয়ম।  

সূত্রটি আরো জানায়, আগে দুর্ধর্ষ বন্দি আসামিদের আদালতে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো। কারাগার টু কারাগারে দুর্ধর্ষ বন্দিদের বেড়ি পরিয়ে নেওয়ার এখনও সেই নিয়ম বলবৎ আছে। তাছাড়া জেল কোডে এই নিয়মটি উল্লেখ আছে।

তবে হাইকোর্টের দেয় ওই নির্দেশনার পর থেকে পুলিশ বন্দিদের ডাণ্ডাবেড়ি অবস্থায় আর আদালতে নিয়ে যান না। পুলিশের চাহিদা মোতাবেক নিরাপত্তার জন্য বন্দিদের ডাণ্ডাবেড়ি পরানোর দায়িত্ব কারারক্ষীদের।

ঘটনার দিন রবিবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল থেকে জঙ্গিদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাচ্ছিলেন পুলিশ সদস্যরা।

তারা ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের প্রধান ফটকের সামনে আসেন, তখন হাতকড়া পরা দুই জঙ্গি তাদের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশের এক সদস্যকে মারধর শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যে আশেপাশে থাকা জঙ্গিদের সহযোগীরাও পুলিশের ওপর হামলায় যোগ দেন। এসময় পুলিশের ওই সদস্যকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। তাদের ওপর হামলা এবং পুলিশের চোখে স্প্রে ছিটিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে ছিনিয়ে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায় তাদের সহযোগীরা।

জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার দিন আদালতের হাজতখানায় ইনচার্জ ছিলেন (এসআই) নাহিদুর রহমান ভূইয়া। তিনি জানান, চার জঙ্গিকে হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে প্রতিজনের কোমরে রশি বেঁধে এজলাসে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে আদালতের নির্দেশনার কারণে হাতে হ্যান্ডকাপ থাকলেও এজলাসে প্রবেশের সময় তাদের কোমরের রশি খুলে দেওয়া হয়। পরে আদালতের শুনানি শেষে জঙ্গিদের হাতে আগে থেকে হ্যান্ডকাপ থাকার পাশাপাশি চারজনের কোমরে আবারো রশি বাঁধা হয়। সেখানে একজন এএসআই-সহ তিনজন কনস্টেবল দায়িত্বে ছিলেন। চারজনকে আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে ও চোখে স্প্রে ছিটিয়ে অন্যান্য জঙ্গিরা দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়। বাকি দুই জঙ্গিকে পুলিশ ধরে ফেলে।

এদিকে, আদালত এলাকা থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার পরপরই রাজধানীতে রেড এলার্ট জারি করা হয়। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ২০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। এছাড়া তৎক্ষণিকভাবে দায়িত্ব অবহেলার কারণে পাঁচ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

তারা হলেন- ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগে কর্মরত নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক মো. মতিউর  রহমান, এসআই (নি.) মো. নাহিদুর রহমান ভুইয়া, এটিএসআই মো. মহি উদ্দিন পাল, কনস্টবল মো. শরিফ হাসান ও কনস্টেবল মো. আ. ছাত্তার।