জাতীয়

গরম বাতাসে পুড়ল কৃষকের স্বপ্ন


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

আর কিছুদিন পরেই ধান কাটার ধুম পড়ার কথা, ধানের মৌ মৌ গন্ধে কৃষকের আঙিনা ভরে উঠবে। সোনালী স্বপ্নে যখন বিভোর, ঠিক এমন সময় কাল বৈশাখী ঝড়ের সাথে গরম বাতাসে সোনালী স্বপ্ন ভেঙে গেছে কৃষকের। কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কাল বৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে গরম বাতাসে ইরি-বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। উপজেলা কৃষি বিভাগের প্রাথমিক হিসাবে ২ শত ৯০ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এ সংখ্যা কাগজের সাথে ফসলের মাঠের কোনো মিল নেই। ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি বলে দাবি কৃষকদের। তবে তিন ইউনিয়নবেষ্টিত উপজেলার সবচেয়ে বড় হাওর জোয়ানশাহী হাওরে রয়েছে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমি। 

আজ বুধবার সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাওরে থাকা ৫ হাজার হেক্টর জমিরই ৬ থেকে ৮ আনা ক্ষতি হয়েছে। মাইলের পর মাইল মাঠের পর মাঠ বিস্তীর্ণ হাওরের কমপক্ষে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে বলে ধারণা জোয়ানশাহীর অঞ্চলের এলাকাবাসীর। আর কিছুদিন পরেই ধান সোনালি রঙ ধারণের পর্যায়ে ছিল। এমন সময় সবুজ ধানের গাছ ধূসর হয়ে পড়ায় কৃষকের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। রবিবার সন্ধ্যা থেকে কয়েক ঘণ্টা ধরে বয়ে যায় কাল বৈশাখী ঝড়ের সাথে গরম বাতাস। এতে ফ্লাওয়ারিং স্টেজে থাকা বিআর-২৯ জাতের ধানসহ সকল প্রকার ইরি-বোরো ধানের ছড়া সাদা বিবর্ণ রঙ ধারণ করে ধানের ছড়া শুকিয়ে গেছে।  
 
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ধানের পরাগায়ণ পর্যায়ে ৩০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রায় ধানের পূর্ণতাপ্রাপ্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝড়ের সময় ৩৮ ডিগ্রির তাপমাত্রায় প্রচণ্ড বেগে বাতাস বয়ে যাওয়ায় এ উপজেলায় ধানের এই ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা। তবে কৃষি অফিস বলছে মাঠ পর্যায়ে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।  

আগানগর ইউনিয়নের লুন্দিয়া গ্রামের কৃষক দুধমিয়ার অভিযোগ, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলেও কৃষি অফিসের কোনো কর্মকর্তা সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত তাদের খোঁজ নিতে কেউ আসেননি। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের সহযোগিতা চান কৃষকরা। 

বধুনগর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মো. এমাদ জানান, গত রবিবার রাতে ৫ ঘণ্টার কাল বৈশাখী ঝড়ে ও গরম বাতাসে ভৈরবের শ্রীনগর, আগানগর, সাদেকপুর ও গজারিয়াসহ ৪টি ইউনিয়নের ইরি-বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে এ ৪টি ইউনিয়নে। বিশেষ করে জোয়ানশাহী হাওরে মাঠের পর মাঠ বিস্তীর্ণ হাওরের প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। 

জাফরনগর গ্রামের মজনু মিয়া বলেন, রবিবার বিকালে সোনালী সবুজ রঙে দোল খাচ্ছিল ধান গাছগুলো। আহারে দেখতে কি দারুণ সুন্দর লাগছিল। আমি তিন দিন পর বুধবার জমিতে গিয়ে দেখি সব শেষ! একটি ঝড়ে সব লণ্ড-ভণ্ড হয়ে গেল জমির সব ধান। 

ইসলাম পুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, করোনায় ১ বছর ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব। এরই মধ্যে ধারদেনা করে ইরি-বোরো ধান রোপন করেছেন তিনি। কিন্তু বৈশাখী ঝড়ের সাথে গরম বাতাসে তাদের একমাত্র ফসল জমির সব ধান  নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কীভাবে সংসার চলবে এবং ধারদেনা পরিশোধ করবে এই দুশ্চিন্তায়  দিন পার করছেন। 

কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি বছর ভৈরবে ৬ হাজার ৬ শ ৬০ হেক্টর জমিতে ও ইউনিয়নের ২১টি ও পৌরসভার ১টি-সহ ২২টি ব্লকে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। গত রবিবারের ঝড়ে গরম বাতাসে ২শ ৯০ হেক্টর জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে। তবে এ ক্ষতি আরো বাড়তে পারে। ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করতে আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কাজ করছি।
 
ভৈরব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম জানান, ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করতে আমরা মাঠ পর্যায়ে তালিকা তৈরি করছি । এ পর্যন্ত ২শ ৯০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতি হয়েছে বলে আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে নিরুপন করেছি। তবে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। তাছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো যাতে তারা প্রণোদণা পান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুবনা ফারজানা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষতি নিরুপনের জন্য জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় কৃষি অফিসের মাধ্যমে ক্ষতি নিরুপন করা হচ্ছে। তবে ক্ষতির পরিমান আরো বাড়তে পারে। সেজন্য ২ দিন পর পর আপডেট ক্ষতির পরিমাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সরকার যদি প্রণোদনা দেয় কৃষকরা যেন পান।