প্রধান পাতা

চট্টগ্রামে আইসিইউ ভরে উঠেছে করোনা রোগীতে, ‘পিকটাইম’ বলছেন ডাক্তাররা


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

১১ জুন, রাত ১২.৩০। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডের বাইরের বারান্দায় শুয়ে আছে রোগীর উদ্বিগ্ন স্বজনরা। নীরবতা ভেঙে হঠাৎ ডাক এলো— ‘৫ নম্বর কে?’ সংকেতটা বুঝতে পেরে ৫ নম্বর বেডের স্বজনরা ঘুম ভেঙে তড়িঘড়ি উঠে গেলেন। আগন্তুক খুব স্বাভাবিক স্বরে বললেন, ‘এখানে সাইন করুন।’ ঘুমচোখেই কাগজে স্বাক্ষর করলেন স্বজনরা। এরপরই আগন্তুক বললেন, ‘আপনার রোগী মারা গেছে। নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করুন।’ শুনে অন্য রোগীর স্বজনরা নিরবে চোখটা মুছে নিলেন আর প্রহর গুণতে লাগলেন পরবর্তী ডাকের।।

এ শুধু একটি খণ্ডচিত্র। কিন্তু এভাবেই চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে হঠাৎ করে। সংক্রমণ বাড়ার পাশাপাশি জটিল উপসর্গের রোগীও বাড়ছে সমানতালে। গত দুই সপ্তাহে যেখানে পরিস্থিতি ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক, সেখানে বর্তমানে প্রায় সব হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডগুলো রোগীতে পরিপূর্ণ। গত দুই সপ্তাহে বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এই দুই সপ্তাহকে বলছেন ‘করোনার পিকটাইম’।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের প্রধান ডা. আব্দুর রব বলেন, ‘আমাদের আইসিইউ ওয়ার্ড গত কিছুদিন ধরেই রোগীতে ভরা। অথচ আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রায় অর্ধেক খালি।’

নগরীর মা ও শিশু হাসপাতালে গত ১৫ দিন আগে ১৫ শয্যার আইসিইউ ওয়ার্ডে রোগী থাকতো ৭-৮ জন করে। কিন্তু গত দুই সপ্তায় এই হাসপাতালের সব বেডে রোগী ভর্তি থাকার কথা জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক ডা. ফাহিম হাসান।

প্রায় একই চিত্র নগরীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও। চট্টগ্রাম পার্কভিউ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ দিনে প্রতিদিনই প্রায় ৭-১০ জন করে নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে এই হাসপাতালে। এই সময়টাতে তাদের ১০ শয্যার আইসিইউ ওয়ার্ডের সব বেডে রোগী ভর্তি ছিল। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও এই চিত্র ছিল সম্পুর্ণ ভিন্ন।

হাসপাতালটির জেনারেল ম্যানেজার তালুকদার জিয়াউর রহমান শামীম বলেন, ‘চলতি সপ্তাহে আগের সপ্তাহের চেয়ে রোগী বাড়তে শুরু করে। এর মধ্যে গত সপ্তাহটা বলা যায় সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে পিকটাইম। রোগীরা অনেক ক্রিটিক্যাল অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।’

চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতির এই হঠাৎ অবনতির কারণ কী— এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘আসলে আমাদের এখানে তো ঠিক সেভাবে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা যাচ্ছে না। তবে এর মধ্যে ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের দুজন রোগী পাওয়া গেছে— যারা ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি টান্সমিশনের স্বীকার বলেই আমরা ধারণা করছি। এই কারণে হঠাৎ সংক্রমণ ও জটিল উপসর্গের রোগী বাড়তে পারে। এছাড়াও প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা না নিয়ে কন্ডিশন খারাপ হওয়ার পরেই বেশিরভাগ রোগীর হাসপাতালে যাওয়ার একটা বিষয়ও আছে।’

এদিকে আইসিইউ বেডে রোগী বাড়ার কথা স্বীকার করে চট্টগ্রামের জেলা সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘প্রায় সব হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডই রোগীতে ভর্তি। এই মুহূর্তে আইসিইউ বেড কোথাও তেমন একটা খালি নেই। তবে আমরা হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ব্যাবহার করে জটিল উপসর্গের রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছি।’

জেলা সিভিল সার্জন বলেন, ‘আমাদের করোনা চিকিৎসার সক্ষমতা অনেক বেড়েছে, প্রস্তুতিও বেশ ভালই আছে। তবে এখানে মানুষের সচেতনতাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ সচেতন না হলে সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন হবে।’