জাতীয়

চাকরির নামে প্রতারণা, চীনা নাগরিকসহ গ্রেফতার ৪


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

অনলাইনে দিনে ২০ মিনিট কাজ করে মাসে ১৮ হাজার টাকা আয় করুন। এমন চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে চীনে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে একটি চক্র।

এই চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিএমপি ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের একটি দল।

এই চক্রটি আমাজানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন বিখ্যাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নাম, ছবি ব্যবহার করে চাকরিতে নিয়োগ ও অনলাইনে পার্ট টাইম কাজ করে হাজার হাজার টাকা উপার্জনের প্রলোভন দিয়ে মানুষকে প্রতারিত করছিল। আর এর মাধ্যমে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে চীনে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে।

ডিএমপি ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুর রহমান আজাদ গণমাধ্যমে এই এ তথ্য জানান।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- ঝ্যাং পিং, ঝ্যাং ইরউয়া, সিয়াম চৌধুরী ও মো. আবীর হোসেন। পুলিশ জানায়, তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন কোম্পানির ১৫টি স্মার্ট মোবাইল ফোন, পাঁচটি বাটন ফোন, একটি ল্যাপটপ, বিভিন্ন কোম্পানির তিন হাজার কপি মোবাইল ফোন সিম বিকাশ ও নগদ, একটি রাউটার, দুইটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়।

ডিএমপি ডিবি ফাইন্যান্সিয়াল অ্যান্ড সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের এডিসি মো. সাইফুর রহমান আজাদের নেতৃত্বে রমনা মডেল থানার একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় বুধবার চট্টগ্রাম থেকে ঝ্যাং পিং, ঝ্যাং ইরউয়া, সিয়াম চৌধুরী এবং মো. আবীর হোসেন নামের চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিবির সাইবার অপরাধ তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এই চক্রটি আমাজানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন বিখ্যাত ও নামি দামি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নাম, ছবি ব্যবহার করে চাকরিতে নিয়োগ ও আনলাইনে পার্ট টাইম কাজ করে হাজার হাজার টাকা উপার্জন করা যায় বলে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে কোটি কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে চীনে পাচার করেছে।

যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত গত ১৩ জুলাই ভুক্তভোগী তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে কোম্পনির একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পান।

ওই বিজ্ঞাপনে দৈনিক গড়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অনলাইনে কাজ করার মাধ্যমে দিনে ২০০ টাকা থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়। এমন কাজে আগ্রহীদের অনলাইনে আবেদন করার আহ্বান জানানো হয়।

ওই বিজ্ঞাপনে দেখানো অ্যাপ্লাই অনলাইনে ক্লিক করলে হোয়াটঅ্যাপসের মাধ্যমে সিকদার ডায়না দারাজ-আমাজার নামের অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযুক্ত হয়।

পরবর্তীতে একপর্যায়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তাকে পার্ট টাইম কাজের কথা বলে ভুক্তভোগীর থেকে বিভিন্ন ধাপে প্রতারক চক্রের প্রদত্ত বিকাশ নম্বরে মোট ৪৪ হাজার ৬১ টাকা এবং সিটি ব্যাংকের সিটিটাচ নামক মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিকাশ নম্বরে মোট ৯৫ হাজার ৬৮৫ টাকা এবং সিটি ব্যাংকের একাউন্ট নম্বর থেকে এক লাখ ৯৫ হাজার ৮৩৭ টাকা স্থানান্তর করে নেয়।

ভুক্তভোগীর কাছ থেকে টাকা মুনাফাসহ ফেরত দেওয়ার জন্য অগ্রিম কর হিসাবে আরো পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার ৪০২ টাকা চায়। ওই টাকা না দিলে ভুক্তভোগীকে কোন প্রকার মুনাফা বা মূলধন দেবে না বলে স্পষ্ট জানায়।

ভুক্তভোগী তখন বুঝতে পারেন যে, তিনি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন। প্রতারক চক্র ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে, ছদ্মবেশ ধারণ পূর্বক, ই-ট্রানজেকশনের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর তিন লাখ ৩৫ হাজার ৫৮৩ টাকা হাতিয়ে নেয়।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে মঙ্গলবার রমনা মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন।

গ্রেফতারকৃত ঝ্যাং পিং আর ঝ্যাং ইরউয়া চীনের কুনমিংয়ের সিচুয়ানের বাসিন্দা। তারা দুইজনেই চট্টগ্রামের সতাকানিয়ায় অবস্থান করছিলেন। আর সিয়াম চৌধুরী গাজীপুর জেলার গাছা থানার বসুরা গ্রামের মো. রায়হান চৌধুরীর ছেলে এবং মো. আবীর হোসেন গাজীপুরের গাছা থানার জাব্বার গ্রামের মো. আলমগীর হোসেনের ছেলে।

প্রতারক চক্র বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন বিখ্যাত ও নামিদামি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নাম, ছবি ইত্যাদি ব্যবহার করে চাকরিতে নিয়োগ দিয়ে হাজার হাজার টাকা উপার্জন করা যায় বলে বিজ্ঞাপন দেয়।

এই চক্রের মূল হোতা ডেং শোয়াইমিং চায়নাতে বসে আমেরিকা ভিত্তিক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানী আমাজানের নামের কাছাকাছি ডোমেইন আমাজার ৯৯.কম, আমাজান ৯৫.কম,আমাজানস.কম কিনে বাংলাদেশি সিয়াম চৌধুরী আর আবিরের সহায়তায় অ্যাড বুস্টিং করে ফেইসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় আমাজান কোম্পানীর নামে চাকরিতে নিয়োগ ও পার্ট টাইম কাজ করে টাকা উপার্জন করা যায় বলে চটকদার বিজ্ঞাপন দেয়।

সাধারণ মানুষ টাকা উপার্জন ও চাকরিতে নিয়োগের বিষয়টি বিশ্বাস করে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রদর্শিত হোয়াটসঅ্যাপ, ফেইসবুক, টুইটার, টেলিগ্রামের নানান চ্যানেলে ও লিংকে যুক্ত হয়।

এই ডিজিটাল মাধ্যমগুলো চীন থেকে পরিচালনা করা হয়। বিকাশ, নগদ ব্যাংকের মাধ্যমে ট্রানজেকশনের জন্য ১০শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ কমিশনের এবং ট্রানজেকশনের জন্য আরো বেশি কমিশনের প্রলোভন দেখাতো।

প্রথমে ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০, ৫০০, ১০০০ টাকা পর্যন্ত ধাপে, ধাপে লাখ টাকার উপরে ট্রানজেকশন করার নির্দেশনা আসতো। ছোট অংকের লেনদেনগুলোতে লাভসহ আসল ফেরত পাওয়ায় সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়তে থাকে।

এইভাবে ধাপে ধাপে গ্রাহকের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে যখন গ্রাহক বড় অংকের টাকা দেয় তখন আরো টাকা লেনদেন করার জন্য নতুন নতুন শর্ত জুড়ে দেয়। ওই নতুন শর্ত সমূহ পূরণ না করলে গ্রাহকের ইতোমধ্যে দেওয়া টাকার মুনাফা বা মূলধন উত্তোলনে আর কোন পথ থাকে না।

এই ভাবে একসময় বিভিন্ন কৌশলে নানান ডিজিটাল মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত মানুষের টাকা প্রতারকচক্র আত্নসাৎ করে থাকে। আর তাদেরকে সকল ডিজিটাল মাধ্যম থেকে ব্লক করে দেয়। প্রতারকচক্র এই আত্মসাৎকৃত কোটি কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে চীনে পাচার করেছে।

এই দুই জন চীনা নাগরিক বাংলাদেশে এসে স্থানীয় বাংলাদেশি আসামি মো. আবীর হোসেন ও সিয়াম চৌধুরীর সঙ্গে অধিক টাকা উপার্জনের আশায় সখ্যতা গড়ে তুলে।