স্বাস্থ্য

চুলের যত্নে হারবাল উপাদানের উপকারিতা


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

শীতের শুষ্ক ঠাণ্ডা আবহাওয়া নানাভাবে আপনার চুলকে প্রভাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বাড়ির বাইরে এক ধরনের আবহাওয়া এবং বাড়ির ভেতরের উষ্ণ আবহাওয়া চুলের উপকারের থেকে ক্ষতিই বেশি করে।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় শীতকালে চুল পড়ার সমস্যা প্রখর হয়ে দাঁড়ায়। আবহাওয়া অতিরিক্ত শুষ্ক হওয়ার কারণে আমাদের স্ক্যাল্পে প্রচুর খুশকি জন্মায়। খুশকি থেকে স্ক্যাল্প হয়ে যায় তৈলাক্ত যা চুলের গোড়াকে নরম করে ফেলে। ফলাফল অতিরিক্ত চুল পড়া। এছাড়াও চুলের রুক্ষতা, শুষ্কতা, আগা ফেটে যাওয়াসহ নানারকম ঝামেলা হতে পারে।  


এতসব ঝামেলা এড়াতে এবং খুব কম সময়ে এসব সমস্যার সমাধান পেতে শীতকালীন চুলের যত্নের জন্যে রাসায়নিক উপাদানের চেয়ে সবচেয়ে কার্যকারী উপাদান হচ্ছে হারবাল উপাদান সমৃদ্ধ তেল। প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদানে তৈরি তেল আমাদের চুল পড়া তো রোধ করবেই, সেই সাথে মাথার তালুতে এই তেল মেসেজের ফলে স্ক্যাল্পের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে, চুলের রুক্ষতা দূর হয়ে চুলকে করে তুলবে ঝলমলে ও সুন্দর। এই সকল তেল চুলের গোড়ায় পুষ্টি যোগায় ও চুল পড়া রোধে সহায়তা করে। নিয়মিত হারবাল তেল মালিশ করলে নতুন চুল গজিয়ে চুলের ঘাটতিও পূরণ হয়ে থাকে। ব্রাহ্মী, আমলা, আমন্ড ও অ্যালোভেরাযুক্ত তেল চুলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে চুলের গোড়া মজবুত করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
 
এমনি কিছু শীতকালের উপযোগী হারবাল উপাদান ও গুণাগুণ সমৃদ্ধ তেলের উপকারিতা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।  
•    লিকোরাইস বা যষ্টিমধু মাথার তালুকে ময়েশ্চারাইজড এবং হাইড্রেটেড রাখতে সহায়তা করে যার ফলে খুশকি এবং ব্যাক্টেরিয়া এর মতো অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতি প্রতিরোধ করা সহজ হয়।
•    অ্যালোভেরা একটি গুরুত্বপূর্ণ এন্টিব্যাক্টেরিয়াল। এটি আমাদের স্ক্যাল্পের পিএইচ স্তরের ব্যালেন্স রক্ষা করার পাশাপাশি সেবামের উৎপাদন বজায় রাখতে সহায়তা করে। এটি কার্যকরভাবে চুল পড়া রোধ করে এবং চুলের পুনঃবৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা চুলের ময়েশ্চারাইজার ধরে রেখে প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের কাজ করে। অ্যালোভেরা অয়েলের সাথে পেঁয়াজের রস, গ্রিন-টি বা নারিকেলের দুধ মিশিয়ে ব্যবহার করলে অনেক কম সময়ে কার্যকর সমধান পাওয়া যাবে।  
•    ব্রাহ্মী আয়ুর্বেদের অন্যতম জনপ্রিয় ওষুধি হিসেবে পরিচিত। ব্রাহ্মী আমাদের চুলের গোড়ায় প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক এবং ভিটামিন যোগায় যা চুল পড়া রোধের জন্যে অপরিহার্য। এক কাপ গরম পানির সাথে ব্রাহ্মীযুক্ত তেল ব্যবহার করলে আমাদের চুলের শুষ্কতা দূর হবে, চুলের আগা ফাটা বন্ধ হবে ও চুলের বৃদ্ধি আরও তরান্বিত হবে। মোট কথা শীতকালে চুলের যত্নে ব্রাহ্মীর জুড়ি নেই।  
•    আমলা এক প্রকার ভেষজ ফল যা যুগ যুগ ধরে চুলের যত্নে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমলা মূলত চুলে ভিটামিন সি যোগায় যা চুল পড়া রোধের দুর্দান্ত সমাধান হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন রকম গবেষণা ও চিকিৎসকদের মতামত অনুযায়ী প্রমাণিত হয়েছে যে, অতিরিক্ত চুল পড়া ও চুলের ঘনত্ব কমে যাওয়ার মতো সমস্যা অনায়াসেই সমাধান করে আমলা বা আমলাযুক্ত তেল। আমলা সমৃদ্ধ তেল এন্টিব্যাক্টেরিয়াল হওয়ায় চুলের গোড়ায় যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন সি- এর যোগান দেয় যা স্ক্যাল্পে কোলাজেন উৎপাদন করে রক্তচলাচল বৃদ্ধি করে, খুশকি দূর করে ও চুলকে উজ্জ্বল করে তোলে। এটি স্ক্যাল্পে অতিরিক্ত খুশকি জন্মানো প্রতিরোধ করে। চুলকে ঝলমলে করার জন্যে মাথায় মেহেদি দেয়ার সময় আমলাযুক্ত তেল ব্যবহার করলে দ্বিগুণ উপকার পাওয়া যায়।  
•    আমন্ডযুক্ত তেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই থাকে। আমন্ডে ওমেগা ৩ ও ৬ এবং ফ্যাটি অ্যাসিড প্রচুর পরিমাণে থাকে যা চুলের দ্রুত বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় রক্ত প্রবাহতে সাহায্য করে। এটি চুলের গোড়াকে মজবুত, চুলকে উজ্জ্বল, রেশমি ও কোমল করতে সহায়তা করে। নিয়মিত চুলে আমন্ড তেলের মেসেজ অসময়ে চুল পাকাও প্রতিরোধ করে। আমন্ড তেল কমপক্ষে ২ ঘণ্টা বা সারারাত চুলে মেখে রাখলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।  

বাংলাদেশে  হারবাল অয়েলের যাত্রা শুরু হয় কুমারিকা হারবাল হেয়ার অয়েলের মাধ্যমে যা উপযুক্ত ভেষজ গুণাগুণে সমৃদ্ধ এবং এটি চুলের গোড়ায় যোগায় সঠিক পুষ্টি।  
কুমারিকা ছাড়াও, ভেষজ ও প্রাকৃতিক গুণাগুণ সমৃদ্ধ কয়েকটি হেয়ার অয়েল হলো; খাদি হারবাল হেয়ার অয়েল, বাজাজ আমন্ড ড্রপ্স হেয়ার অয়েল, ইন্দুলেখা ব্রিঙ্ঘা অয়েল ইত্যাদি।  

পরিশেষে এটাই বলা যায় যে, শীতকালীন চুলের যত্নে হারবাল উপাদান ও হারবাল তেলের গুণাগুণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষতিকারক কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করে চুলের বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়ানো গেলেও একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর ধীরে ধীরে চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু প্রাকৃতিক ও ভেষজ উপাদানসমূহ দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করলেও এগুলো চুলের সমস্যার স্থায়ী সমধান দিয়ে থাকে এবং চুলকে ভেতর থেকে মজবুত করে তোলে। কেউ যদি নিয়মিতভাবে ও সঠিক উপায়ে সবগুলো উপাদান ব্যবহার করে থাকে তাহলে অবশ্যই কার্যকর ফলাফল পাবেন।